নেই রাজ্যের দেশেও ভারতীয় দলের লড়াই মুগ্ধ করেছে সিডনিতে। ব্রিসবেনে শুক্রবার শুরু অন্য লড়াই। সেখানে এগিয়ে কোন দল? টিম পেনের দল কি পারবে চোট আঘাতে বিধ্বস্ত ভারতীয় দলকে হারিয়ে সিরিজ জিতে নিতে? নাকি প্রথম দলের ৬ জন না থাকা অবস্থাতেও অজিঙ্ক রাহানেরা ফের অঘটন ঘটাবেন ব্রিসবেনে? প্রশ্ন অনেক, উত্তরের অপেক্ষায় ব্রিসবেন।
ধুঁকতে থাকা ভারতীয় ওপেনিং জুটিকে যেন অক্সিজেন দিলেন রোহিত শর্মা এবং শুভমন গিল। তাঁদের পার্টনারশিপ শক্ত জমি তৈরি করে দিচ্ছে লড়াইয়ের। শুরুতেই পেয়ে যাওয়া অ্যাডভান্টেজ কাজে লাগিয়ে রানের পাহাড় গড়ছে ভারতীয় মিডল অর্ডার।
রোহিতের দলে আসা ভারতীয় দলের কাছে যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা গিয়েছে সিডনিতে। হিটম্যান যে শুধু সাদা বলের ক্রিকেটার নন, লাল বলেও তিনি দাপট দেখাতে পারেন তা আগেই বোঝা গিয়েছিল। ব্রিসবেনে তাঁর ব্যাট থেকে বড় রান এলে আরও নিশ্চিন্ত হবে ভারত।
তরুণ শুভমনকে মনে করা হচ্ছে ভবিষ্যতের তারকা। তাঁর খেলার ভঙ্গি হোক বা স্ট্রোক নেওয়ার ক্ষমতা সব কিছুই মুগ্ধ করেছে বিশেষজ্ঞদের। অভিজ্ঞ রোহিতের সঙ্গে তাঁর জুটি যদি সফল হয়, তবে আগামী বেশ কয়েক বছর ওপেনিংয়ের বিষয়ে ভাবতে বসতে হবে না নির্বাচকদের।
ভারতের সব চেয়ে বড় নিশ্চিন্তের জায়গা তাদের ৩ নম্বর। চেতেশ্বর পূজারা যত দিন খেলবেন, টেস্টে এই জায়গা নিয়ে ভাবনার প্রয়োজন পড়বে না ভারতের। তিনি যেন দলের সেই ‘দ্য ওয়াল’ যেখানে নিশ্চিন্তে হেলান দিয়ে থাকতে পারেন রাহানেরা।
ভারতের ব্যাটসম্যাননা কিন্তু ফর্মে রয়েছেন। রোহিত, শুভমন, পূজারার পর রাহানের ওপরও ভরসা করতে পারে ভারত। তবে এই সিরিজ বুঝিয়ে দিল রাহানে মানে শুধু ব্যাটসম্যান নয়, অধিনায়কও।
বিরাট কোহালির ভারতকে নেতৃত্ব দিতে এসে তাঁকে অনুকরণ করার চেষ্টাই করেননি রাহানে। নিজের মতো করে গুছিয়ে নিলেন দলকে। নিমেষের মধ্যে দেখা গেল ভারতের অন্য রূপ। হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার মতো তিনি যেন মুগ্ধ করে এক সুতোয় বেঁধে ফেললেন গোটা দলকে। নেই রাজ্যের দেশেও আদর্শ রাজা হয়ে উঠলেন রাহানে।
ব্রিসবেনে ভারতের তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারেন ঋষভ পন্থ। অস্ট্রেলিয়ার চোখে চোখ রেখে পাল্টা লড়াই পৌঁছে দিতে পারেন এই তরুণ ব্যাটসম্যান। তাঁর উইকেটকিপিং নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাঁর ইনিংস শুরু করেও উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসার প্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, কিন্তু যে দিন তাঁর ব্যাট কথা বলে সে দিন তিনি চুপ করিয়ে দিতে পারেন সমালোচকদের। সেই কাজটাই ব্রিসবেনে তাঁর থেকে আশা করবে ভারত।
ব্রিসবেনে ভারতের আতঙ্কের জায়গা বোলিং। অশ্বিন ছাড়া বাকিদের অভিজ্ঞতা প্রায় নেই বললেই চলে। অভিজ্ঞ এই স্পিনারের হাতেই থাকবে ভারতের বোলিংকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব। যদিও চোট রয়েছে তাঁরও।
শোনা যাচ্ছে জাডেজার বদলে দলে আসতে পারেন ওয়াশিংটন সুন্দর। ব্যাট হাতে ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করা সুন্দরের ওপর ব্রিসবেনে ভরসা রাখতে পারে ভারত। সেই ক্ষেত্রে স্পিনার হিসেবে অশ্বিনের সঙ্গী হবেন তিনি।
চোটের জন্য একে একে দলের বাইরে চলে গিয়েছেন শামি, উমেশ এবং বুমরা। কম জোর হয়েছে ভারতের পেস ব্যাটারি। তবুও যেন নতুনদের মধ্যে লক্ষ্য করা গিয়েছে স্ফুলিঙ্গ। সেই আগুন কি দেখা যাবে ব্রিসবেনে?
মহম্মদ সিরাজ এই মুহূর্তে দলের সব চেয়ে অভিজ্ঞ পেসার। দেশের জন্য খেলা যে তাঁর কাছে ঠিক কতটা, সেটা দেখেছে ভারতবাসী। এখন দেখার বুমরাদের অনুপস্থিতিতে ভারতীয় পেস অ্যাটাকের পতকা তিনি উঁচু করে রাখতে পারেন কি না।
সিরাজের সঙ্গী কারা হবেন সেই নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। তবে টি নটরাজন, শার্দূল ঠাকুর, নবদীপ সাইনিরা যে নিজেদের সর্বস্ব উজার করে দেবেন এই ম্যাচে তা বলাই যায়।
একের পর এক প্লেয়ার হারিয়ে চাপে কি শুধুই ভারত? বিপক্ষ শিবিরে চোখ রাখলে তেমনটা মনে হবে না। অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং জুটি আজও ভোগাচ্ছে তাদের। ম্যাথু ওয়েড, জো বার্নস যেমন পারলেন না, তেমনই ডেভিড ওয়ার্নার, উইল পুকোভস্কি জুটিও খুব সফল নয়। তবে ব্রিসবেনে চোট পাওয়া পুকোভস্কির জায়গায় খেলবেন মার্কাস হ্যারিস।
অজিদের চিন্তা থাকবে মিডল অর্ডার নিয়েও। মার্নাস লাবুশানে এবং সিডনিতে ফর্মে ফেরা স্টিভ স্মিথ ছাড়া বাকিদের অবস্থা খুব ভাল নয়। সেখানেও বাড়তি অক্সিজেন খুঁজবে অস্ট্রেলিয়া।
ভরসা যোগাতে পারছেন না প্যাট কামিন্সরাও। সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার জেতার জন্য পঞ্চম দিনে দরকার ছিল ৮ উইকেট। এমন অবস্থাতে সারাদিন বল করে অজিরা নিলেন মাত্র ৩টি উইকেট। বিরাটহীন ভারতীয় দলকে আটকাতেই পারলেন না আইসিসি-র র্যাঙ্কিংয়ে টেস্টের সেরা বোলার।
বুধবার জানা যায় ভারতীয় দলকে দিতে হয়েছে ঘুমের ওষুধ। বিধ্বস্ত এই ভারতীয় দলকে চাঙ্গা করা কঠিন চ্যালেঞ্জ অধিনায়ক রাহানের। তবে তিনি ৩৬ রানে শেষ হয়ে যাওয়া ভারতকে ঘুরিয়ে দিতে পেরেছিলেন। ব্রিসবেনেও কি অপেক্ষা করছে তেমনই কিছু? উত্তর দেবে ব্রিসবেন।