হতাশ বিরাট। ছবি: এএফপি
অ্যাডিলেডের মাঠে গোলাপি বলের টেস্টে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বিরাট কোহালির রান আউট। সতীর্থ অজিঙ্ক রাহানের ডাকে সাড়া দিয়ে বল কোথায় রয়েছে না দেখেই দৌড় বিরাটের। ভারতের সব চেয়ে মুল্যবান উইকেটটা অস্ট্রেলিয়াকে যেন উপহার দিলেন রাহানে। প্রথম দিনের শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ভারতের রান ২৩৩। অবশ্যই ব্যাকফুটে ভারত।
টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিরাট। শুরুতেই আউট হন পৃথ্বী শ। ম্যাচের দ্বিতীয় বলে মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হলেন তিনি। ব্যাটে বল লাগিয়ে টেনে আনলেন উইকেটে। অন্য ওপেনার ময়াঙ্ক আগরওয়ালও (৪০ বলে ১৭ রান) বোল্ড হন প্যাট কামিন্সের বলে। ভারতীয় দলের জন্য তাঁদের আউট হওয়ার ধরণ বেশ চিন্তার। ব্যাট ও পায়ের মাঝখানে বিশাল ফাঁক বিপদ ডেকে আনছে বার বার। ৩ নম্বরে নামা চেতেশ্বর পূজারা (১৬০ বলে ৪৩ রান) এবং বিরাট ৬৮ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। পূজারার বল ছাড়া মুগ্ধ করে প্রাক্তনদের। সঞ্জয় মঞ্জরেকর বলেন, “যেসব তরুণরা ক্রিকেট দেখছে বল ছাড়ার শিল্প তাদের পূজারার থেকে শেখা উচিত।” ধীরে ধীরে যখন ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে নিচ্ছেন, তখনই হঠাৎ ছন্দ পতন। স্পিনার ন্যাথন লায়নের বলে মার্নাস লাবুশানের হাতে ক্যাচ দেন পূজারা। প্রথমে আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিলে দেখা যায় বল পূজারার ব্যাটে লেগেছে।
ভারতের ইনিংস গড়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন অধিনায়ক কোহালি এবং সহ-অধিনায়ক রাহানে। দুজনে যে ভাবে ব্যাট করছিলেন তাতে বেশ চাপে পড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু বিপদ পিছু ছাড়েনি। ৮৮ রানের দারুণ পার্টনারশিপ ভেঙে যায় একটা ভুলে। লায়নের ওভারে ব্যাট করছিলেন রাহানে। শটটা নিয়েই তিনি কল করেন বিরাটকে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে মাঝ ক্রিজে পৌঁছে যান বিরাট। খেয়ালই করলেন না বল কোথায়। রাহানে ডেকে দু’পা এগিয়েই বারণ করেন বিরাটকে। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। বিরাটের পক্ষে আর ফেরা সম্ভব হয়নি। ১৮০ বলে ৭৪ রানেই থেমে যায় ইনিংস। যেভাবে ইনিংস গড়ছিলেন তাতে অ্যাডিলেডের মাঠে টেস্টে চতুর্থ শতরান আসতেই পারতো। টেস্টে বিরাটের সবথেকে বেশি রান (৭ ইনিংসে ৫০৩ রান) এসেছে এই মাঠেই। ভুল বোঝাবুঝিতে থেমে যায় বিরাট ইনিংস।
বিরাট ফিরতেই ফিরলেন রাহানে। তিনি যেন অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলেন। প্রাক্তন অজি পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা বলেন, “বিরাটের আউট নিশ্চয়ই মাথায় ঘুরছিল রাহানের। ফোকাস নড়ে যায় ওর।” তাঁর কথায় সায় দেন মঞ্জরেকারও। ভারতের প্রাক্তন ব্যাটসম্যান বলেন, “একবার সচিনকে রান আউট করে ফেলেছিলাম। যদিও তার পর নিজের উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেনি।” রাহানে সেটাই করলেন। নতুন বল নিয়ে স্টার্ক ঠিক খুঁজে নিলেন রাহানের পা। ৯২ বলে ৪২ রান করে ফেরেন তিনি। উল্টো দিকে থাকা হনুমা বিহারী জোড় করেন রিভিউ নেওয়ার জন্য। নষ্ট হয় সেই রিভিউ। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেরেন হনুমাও (২৫ বলে ১৬ রান)। তিনিও এলবিডবলু হন। উইকেট নেন জশ হ্যাজেলউড।
আরও পড়ুন: পৃথ্বী, ময়াঙ্ককে এক হাত নিলেন গাওস্কর
দিনের শেষে ক্রিজে রয়েছেন উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহা (২৫ বলে ৯ রানে অপরাজিত) এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন (১৭ বলে ১৫ রানে অপরাজিত)। গোলাপি বলে পেসারদের যতটা ভয়ঙ্কর দেখায় অস্ট্রেলিয়া পেসারদের প্রথম দিনের শুরুতে ততটা মনে হয়নি বিরাট, পূজারা, রাহানের জন্য। রান বেশি না উঠলেও ক্রিজে পড়ে থেকে লড়াই করে গিয়েছেন তাঁরা। ৮০ ওভারের পর নতুন গোলাপি বল নিতে যদিও অন্য রূপ দেখা গেল অজি পেসারদের। দ্বিতীয় নতুন বল যেন আগের থেকে বেশি নড়াচড়া করছে বলে মনে করছেন ম্যাকগ্রারা। দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করতে নেমে ঋদ্ধি, অশ্বিনের লড়াই কতটা জমি দেয় ভারতকে সেই দিকেই নজর থাকবে ভারতীয়দের।