সতর্ক: দিল্লির বায়ুদূষণ থেকে বাঁচতে মুখাবরণ পরে শনিবার ক্রিকেটারদের নিয়ে অনুশীলন বাংলাদেশ স্পিন বোলিং কোচ ড্যানিয়েল ভেত্তোরির। এএফপি
দিল্লির বায়ুদূষণে স্কুল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। নির্মাণের কাজ থেমে থাকতে পারে। সাধারণ মানুষের জন্য বিতরণ করা হচ্ছে মুখাবরণ।
কিন্তু ক্রিকেট চলতে নাকি কোনও অসুবিধা নেই। তাই আজ, রবিবার, পূর্ব সূচি মতো ভারত বনাম বাংলাদেশে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি হবে ফিরোজ শা কোটলায়। যে মাঠের নতুন নামকরণ হয়েছে অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম।
নতুন নামকরণ কিন্তু পুরনো কোটলা। মাথার উপর ধোঁয়াটে আকাশ। এ বারই প্রথম হল এমন নয়। দু’বছর আগে শ্রীলঙ্কা এসেছিল টেস্ট খেলতে। তখন খেলা থামিয়েই দিতে হয়েছিল। মুখাবরণ পরে নেমেছিলেন ক্রিকেটারেরা। এমনকি, ভারতীয় দলের সদস্যরাও কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
আরও পড়ুন: সন্দেশখালিতে দুষ্কৃতীর গুলিতে খুন ভিলেজ পুলিশ, গ্রেফতার তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যের স্বামী-সহ ২
সেটা ছিল ২০১৭। এটা ২০১৯। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড তবু ম্যাচ রেখেছে নভেম্বরের কোটলায়। দীপাবলির পরে প্রথম রবিবার। সকলেরই জানা ছিল, এই সময় আকাশ কতটা বিষাক্ত থাকে রাজধানীতে। বায়ুদূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে বিপদসীমা। দর্শকেরা কী ভাবে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা খোলা আকাশের নীচে বসে ম্যাচ দেখবেন, সেই প্রশ্নও থাকছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরা কয়েক জনে অনুশীলনে নেমেছেন মুখাবরণ পরে। ভারতীয়দের মুখ খোলা। তাঁরা নতুন বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন, খেলতে অসুবিধা নেই। মুখাবরণ ব্যবহার করলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরা দিল্লিতে খেলব না বলে আপত্তি জানাননি। তাই ম্যাচ হচ্ছে।
এই ম্যাচের সূচি যখন করা হয়, বোর্ডের শাসন ক্ষমতায় সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অব অ্যাডিমিনিস্ট্রেটর্স (সিওএ)। তারা দিল্লির বায়ুদূষণ পরিস্থিতি নিয়ে ভাবেইনি। সঙ্কটজনক পরিবেশে ম্যাচ আয়োজনের জন্য সব চেয়ে বেশি করে আঙুল উঠছে বিনোদ রাই-দের দিকে। সৌরভের কথায় ইঙ্গিত, ভবিষ্যতে সূচি তৈরির সময় দিল্লির দূষণ পরিস্থিতি মাথায় রাখা হবে। আপাতত, রবিবারের ম্যাচ স্থানান্তরিত করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের দেখে মনে হবে, তাঁদের জন্য আক্ষরিক অর্থেই দমবন্ধ করা পরিস্থিতি। একে তো দেশ থেকে বেরোনোর লগ্নেই বিস্ফোরণ ঘটেছে তাঁদের ক্রিকেটে। জুয়াড়ির প্রস্তাব পেয়েও তা গোপন করার অপরাধে তারকা অলরাউন্ডার শাকিব-আল-হাসানকে নির্বাসিত করেছে আইসিসি। এই বাংলাদেশ দল থেকে শাকিবকে সরিয়ে দেওয়া মানে হিমোগ্লোবিন ঝুপ করে নেমে যাওয়া। রক্তাল্পতায় ভুগবে গোটা দল। দেশ থেকে বেরনোর সময় শাকিবকে নিয়ে শ্বাসরুদ্ধ হওয়া। দিল্লি পৌঁছে বায়ুদূষণের মধ্যে পড়া। সব মিলিয়ে বঙ্গ ক্রিকেটারদের মনে হয়তো এখন একটাই প্রার্থনা— ‘‘একটু শ্বাস নিতে দিন আমাদের।’’
আরও পড়ুন: কাশ্মীরি দোস্তরাই কেটে দিলেন নুরদের বিমানের টিকিট
বিরাট কোহালি নেই ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দলে। তিনি বিশ্রাম নিচ্ছেন। তবু রোহিত শর্মার ভারত অতিথিদের শ্বাস নিতে দেবে বলে তো মনে হয় না। রোহিত শুক্রবারই বলে দিয়েছিলেন, দিল্লির দূষণ নিয়ে ভাবিত নন। এ দিন বললেন, তরুণদের সুযোগ দেওয়ার সময় হয়েছে। বললেন, বিরাট যেখানে রেখে গিয়েছে টিমকে, সেটাকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। সামনের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে দল সাজাতে চাইবেন রোহিতরা। শোনা যাচ্ছে, শিবম দুবের মতো নতুন মুখকে খেলানো হতে পারে। তবু দাঁড়িপাল্লায় দু’দলকে পাশাপাশি রাখলে বাংলাদেশের জন্য সব মিলিয়ে দম বন্ধ করা পরিবেশই নজরে আসছে।
বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লা রিয়াদকে কিছুটা মরিয়াই শোনাল। যখন বললেন, ‘‘দিল্লির বর্তমান পরিবেশ দূষণ নিয়ে আমাদের দলে কথা হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তো আমাদের নেই। আমরা আপাতত রবিবারের টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নিয়েই ভাবছি। একই সঙ্গে ম্যাচটা জেতার জন্যও মনোনিবেশ করছি।’’ যোগ করেন, ‘‘আমরা এর আগে কখনও দিল্লিতে খেলিনি। যখন দিল্লিতে এ বার পা দিই, তখন ধোঁয়াশা ছিল পরিবেশে। কিন্তু ছেলেরা তার মধ্যেই গত তিন দিন ধরে অনুশীলন করে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।’’
যদিও অনুশীলন আর ম্যাচ পরিস্থিতিতে বিস্তর ফারাক। তীব্রতায় অনেক ফারাক। ম্যাচের সময় স্নায়ুর চাপ যোগ হয়ে খেলোয়াড়দের পরীক্ষা আরও অনেক কঠিন করে দিতে পারে। ক্রিকেট বোর্ডের মহল বলছে, কুড়ি-কুড়ি ওভারের খেলা। সব মিলিয়ে পুরো ম্যাচ করতে সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগবে। সব ঠিক হ্যায়।
সত্যিই সব ঠিক হ্যায়? ম্যাচ করা কি ঠিক হল? সময় বলবে!