প্রত্যয়ী: চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি শুভাশিস (উপরে) ও প্রীতম। ফাইল চিত্র
জাতীয় দলের অপরিহার্য স্টপার সন্দেশ ঝিঙ্ঘান চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ার পর ভারতীয় শিবির যখন আতঙ্কে, তখন বাংলাদেশ ম্যাচের আগে অকুতোভয় দুই বঙ্গসন্তান ডিফেন্ডার। একসঙ্গে তাঁরা ম্যাচের দু’দিন আগে বলে দিচ্ছেন, ‘‘সন্দেশ ভাইয়ের না থাকাটা বিরাট ক্ষতি। আবার এটা আমাদের দলের রক্ষণের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জও। বাংলাদেশ ম্যাচে এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই জিততে হবে।’’
ইগর স্তিমাচের দলের দুই বঙ্গসন্তান মানে গড়িয়ার শুভাশিস বসু আর উত্তরপাড়ার প্রীতম কোটাল। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলতে নামার আগে ক্লাবের হয়ে যুবভারতীতে দাপিয়ে খেলে যাওয়া দুই ফুটবলারের ভাবনায় ধরা পড়ে একই রকম ছবি। গুয়াহাটিতে শনিবার সন্ধ্যায় অনুশীলন শুরুর আগে শুভাশিস যেমন বললেন, ‘‘বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলতে নামছি বলে আলাদা কোনও চাপ নেই। কাতারের বিরুদ্ধে যেমন খেলেছিলাম, তেমনই খেলতে হবে। লক্ষ্য একই থাকবে।’’ তার একটু পরেই প্রীতমের মন্তব্য, ‘‘কাতারের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের ম্যাচ দেখেছি। হারলেও ওরা খুব ভাল খেলেছে। জিততে হলে আমাদের সেরা খেলাটা খেলতে হবে। যেটা আগের কাতার ম্যাচে খেলেছি সেরকম খেলতে পারলেই জয় আসবে।’’
সন্দেশের অবর্তমানে স্তিমাচ যুবভারতীতে মঙ্গলবার কী ভাবে রক্ষণ সাজাবেন, তা নিয়ে জোর জল্পনা। তিন রক্ষণে সুনীল ছেত্রীদের খেলাবেন না অন্য কোনও রণনীতি, তার ইঙ্গিত কলকাতার আসার আগের দিনের অনুশীলনেও দেননি জাতীয় কোচ। তেইশ জনের যে দল নিয়ে আজ, রবিবার দুপুরে দু’দফায় কলকাতায় পা দেবেন স্তিমাচ, সেই দলে শুভাশিস ও প্রীতম দু’জনেই রয়েছেন। ওমান এবং কাতারের বিরুদ্ধে শুভাশিস খেললেও প্রীতম সুযোগ পাননি। চার রক্ষণে দল খেললে প্রীতমের এ বার অভিষেক হলেও হতে পারে। তবে ভারতের ক্রোয়েশিয়ান কোচের দলের রক্ষণে যে গড়িয়ার ছেলে শুভাশিস থাকবেন, তা নিশ্চিত। শোনা যাচ্ছে আদতে লেফটব্যাক শুভাশিসকে স্টপারে খেলানো হতে পারে আদিল খানের সঙ্গে। এর আগে কিংস কাপে দু’জনকে একটি ম্যাচে খেলিয়েছিলেন তিনি।
দুই বঙ্গসন্তান গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় দলে খেললেও কখনও দেশের জার্সিতে যুবভারতীতে খেলেননি। কারণ দীর্ঘ আট বছর পরে ভারতীয় সিনিয়র ফুটবল দল খেলছে শহরে। শুভাশিস এবং প্রীতম এই মাঠে তাই খেলেছেন মোহনবাগান, বেঙ্গালুরু বা এটিকের মতো ক্লাব দলের জার্সি পরে। সে জন্যই সম্ভবত দুই ফুটবলারই বেশ উত্তেজিত। শুভাশিস বলছিলেন, ‘‘এতদিন যখন ক্লাবের জার্সিতে খেলেছি, তখন স্টেডিয়ামের একটি অংশ সমর্থন করেছে। বাকিরা আমাদের দলের সাফল্য চায়নি। এ বার তো ষাট হাজার দর্শক একসঙ্গে আমাদেরই সমর্থন করবেন। সবাই অনেক আশা নিয়ে আসবেন আমাদের জয় দেখতে। সেটা ভেবেই বেশ উত্তেজনা হচ্ছে।’’ আর জাতীয় দলে তাঁর সতীর্থ প্রীতমের মন্তব্য, ‘‘স্টেডিয়াম ভর্তি লোক আমাদের সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গাইবেন, সেই মুহূর্তটায় কেমন লাগে, সেটা তো কখনও অনুভব করিনি। শুনছি সব টিকিট শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি একা কেন, সুনীলভাই-সহ পুরো দলই তো কলকাতার মাঠের দৃশ্য দেখার জন্য উত্তেজিত।’’
স্টিভন জমানায় দু’জনেই নিয়মিত প্রথম একাদশে খেললেও এখন প্রীতম অনিয়মিত। তাতে অবশ্য তিনি ভেঙে পড়ছেন না। বলে দিচ্ছেন, ‘‘যে ভাল খেলবে, সে-ই সুযোগ পাবে। আমাদের টিমে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা আছে। আমি যদি কাল সুযোগ পাই তা হলে সেরাটা দেব।’’ আর স্টিভন থেকে স্তিমাচ—সব জমানাতেই যিনি অপরিহার্য, সেই শুভাশিস বললেন, ‘‘টিকে থাকার রসায়ন আর কিছুই নয়, নিজের সেরা খেলাটা খেলে যাওয়া। কোচ ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সবাইকে সুযোগ দেন। সুযোগ পেলেই ভাল খেলে তার সুযোগ নিতে হবে।’’ সংযোজন ‘‘স্তিমাচ নিজে রক্ষণের ফুটবলার ছিলেন। তাঁর কোচিংয়ে থাকার সুবিধাটা নেওয়ার চেষ্টা করি। উনি আমাকে শিখিয়েছেন পজেশনাল গেম, অফ দ্য বল এবং উইথ দ্য বলে একজন ডিফেন্ডারের কী করা উচিত। ওঁর কোচিংয়ে অনেকগুলো ম্যাচ খেললাম। যেখানে যখন খেলিয়েছেন, সেরাটা দেওয়া চেষ্টা করেছি। মঙ্গলবার সুযোগ পেলে ভাল খেলব।’’
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্তিমাচ যে দল ঘোষণা করেছেন তাতে বাদের তালিকায় কোনও চমক নেই। তবে চমকপ্রদ ঘটনা হল সন্দেশ বাইরে চলে যাওয়ায় রাহুল ভেকেকে রেখে দিয়েছেন ভারতীয় কোচ। রাহুলেরও চোট আছে। স্তিমাচ এ দিন বলেছেন, ‘‘সন্দেশ আমাদের দলের লৌহমানব। ওর না থাকাটা বড় ক্ষতি।’’ কোচের মতো গুরপ্রীত সিংহ সাঁধুর গলাতেও উদ্বেগ, ‘‘ও আমার সামনে দাঁড়িয়ে পুরো দলকে নেতৃত্ব দেয়। সেটা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বাকিদের করতে হবে।’’
দেখার, শুভাশিস, প্রীতমরা সুযোগ পেলে সন্দেশের অভাব পূরণ করতে পারেন কি না। কারণ অন্যদের চেয়ে যুবভারতীতে তাদের দায়িত্ব যে একটু হলেও বেশি।