১৮৪ রানে অলআউট হয়ে বিরাট কোহালিরা সিরিজ হারলেন ৬০ রানে।
ভারত চতুর্থ টেস্ট এবং সিরিজটা হেরে গেল চা বিরতির ঠিক সাত মিনিট আগে। যখন মইন আলির বলে অ্যালেস্টেয়ার কুককে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন বিরাট কোহালি। স্কোরবোর্ড তখন দেখাচ্ছে, চার উইকেটে ১২৩ রান। জানতাম, ওর পরে ভারতের আর ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। ঠিক তাই হল। ১৮৪ রানে অলআউট হয়ে বিরাট কোহালিরা সিরিজ হারলেন ৬০ রানে। ইংল্যান্ড আপাতত এগিয়ে গেল ৩-১।
ভারতের এই ব্যাটিং লাইনে টেকনিক্যালি তিন জনকে খুব ভাল বলা যাবে। কোহালি, অজিঙ্ক রাহানে এবং চেতেশ্বর পূজারা। এই টেস্টে এই তিন জনই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রান পেলেন। টেস্ট ক্রিকেট হল এমন খেলা, যেখানে ভাল টেকনিক না হলে ব্যাটসম্যানদের পক্ষে সফল হওয়া কঠিন। বিশেষ করে টেস্টের চতুর্থ দিনে, যেখানে বল দারুণ ভাবে ঘুরছে।
অনেক দিন বাদে একটা দৃশ্য দেখে খুব ভাল লাগল। কমেন্ট্রি বক্সে জেফ্রি বয়কটকে দেখলাম। সঙ্গে সুনীল গাওস্কর। স্পিন বোলিং কী ভাবে খেলতে হয়, বিশ্ব ক্রিকেটে এই দু’জনের চেয়ে ভাল কেউ সেটা জানেন বলে মনে হয় না। দু’জনেই দেখলাম একটা কথা বলছেন। সাউদাম্পটনের এই পিচে স্পিন খেলতে গেলে ব্যাটটাকে প্যাডের পিছনে রেখে খেললে হবে না। ফ্রন্টফুটে গিয়ে ব্যাটটা বলের ওপর নিয়ে স্পিন হওয়ার আগেই খেলতে হবে।
বিরাট কোহালি (৫৮) এবং অজিঙ্ক রাহানে (৫১) রবিবারে যে ব্যাটিংটা করলেন, সেটা এক কথায় এই পিচের জন্য আদর্শ। দক্ষতা এবং টেকনিকের উৎকৃষ্ট প্রদর্শন। ওঁদের দু’জনের ব্যাটিং থেকে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু শিখতে পারে। কিন্তু এই লড়াইও জেতাতে পারল না ভারতকে। কোহালি আউট হয়ে যাওয়ার অল্প পরেই ফিরে যান রাহানেও। দু’জনেই অফস্পিনার মইনের শিকার।
ভারতীয় ব্যাটিং লাইন দেখলে মনে হবে, সাত নম্বর পর্যন্ত রান করার লোক আছে। ঋষভ পন্থ ও হার্দিক পাণ্ড্যকে নেওয়া হয়েছে প্রধানত ওঁদের ব্যাটিং ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে। কিন্তু সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ব্যাট করা এক জিনিস, টেস্টে আর এক। পাণ্ড্য তো আবার বেন স্টোকসের বলে স্কোয়ার অন হয়ে স্লিপে ক্যাচ দিলেন। ঋষভ মারার মনোভাব নিয়ে নেমেছিলেন এই ইনিংসে। একটা ছয়, দু’টো চারও মারলেন। কিন্তু বুদ্ধি করে মইন একটা বল বাঁ-হাতি ঋষভের অফস্টাম্পের বাইরে রাখেন। তুলে মারতে গিয়ে ডিপ কভারে আউট ভারতের নতুন প্রতিভা। মইনের চালটা বুঝতে পারেননি।
ম্যাচের সেরা মইন হলেও স্যাম কারেনের কথা বলতেই হবে। ছেলেটা প্রথম ইনিংসে সত্তরের ওপর রান করলেন, দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬। প্রথম ইনিংসে কোহালির উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে অশ্বিনকে ফিরিয়ে ম্যাচ শেষ করলেন। এ রকম একজন ক্রিকেটারের অভাব খুব বেশি করে টের পাচ্ছে ভারত। কারেন প্রথমে এজবাস্টন টেস্ট আর এ বার সাউদাম্পটনে ভারতের বড় কাঁটা হয়েই থেকে গেলেন।
দেখা যাচ্ছে, পাঁচ নম্বরের পর থেকেই ভারতের ব্যাটিং লেজ মোটামুটি বেরিয়ে পড়ছে। সিরিজ হারের পিছনে এটা একটা বড় কারণ। যার পিছনে আবার উঠে আসছে সেই টেকনিকের দুর্বলতা। ভারতীয় ওপেনাররা সেই দুর্বলতার শিকার বলে কাজটা আরও কঠিন হয়ে গিয়েছে। এই টেস্ট জিততে গেলে শুরুতে বিনা উইকেটে ৮০-৯০ রান ওঠা উচিত ছিল। কিন্তু বাইশ রানে তিন উইকেট পড়ে গেলে আর কী করা যাবে। কোহালি-রাহানের লড়াই তাই কোনও কাজে এল না।
ভারতকে বুঝতে হবে, একা কোহালিতে নির্ভর করে থাকলে বিদেশে অন্তত টেস্ট সিরিজ জেতা সম্ভব হবে না।
আগেই বলেছি, এই উইকেটে ভাল টেকনিক না হলে কিছু করা কঠিন। যেটা কোহালি এবং রাহানে, দু’জনের কাছ থেকেই পাওয়া গেল। আউট হওয়ার ঠিক আগের বলটাই বিরাটের ব্যাটে ছুঁয়ে শর্ট লেগে গিয়েছিল। কিন্তু তখন অ্যালেস্টেয়ার কুকের আগে ড্রপ পড়ে যায়। পরের বলটা একটু জোরের ওপর করেছিলেন মইন। বলটা ফুটমার্কে পড়ে ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে সামান্য বেশি বাউন্স করে কোহালির গ্লাভসে লেগে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে কুকের হাতে চলে যায়।
ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম তিনটি উইকেটই অবশ্য তুলে নিয়েছিলেন পেসাররা। কেএল রাহুলের দুর্ভাগ্য, স্টুয়ার্ট ব্রডের বলটা নিচু হয়ে গিয়েছিল। চেতেশ্বর পূজারা এবং শিখর ধওয়ন শিকার হলেন জিমি অ্যান্ডারসনের। তবে ইংল্যান্ডের সেরা বোলার অবশ্যই মইন। চতুর্থ দিনের পিচ। তার ওপর ইশান্ত শর্মার তৈরি ফুটমার্ক। মইন শুধু একটা কাজই করে গেলেন। ওই ফুটমার্কে বলটা রেখে গেলেন। টার্ন যা পাওয়ার ওখান থেকেই পেয়ে গেলেন তিনি।