ভারতকে আশায় রাখলেন নবীনরাই
Mohammed Siraj

তিনমূর্তির শপথ, সিরিজ হাতছাড়া করব না

অস্ট্রেলিয়া সফরে পৌঁছনোর কয়েক দিনের মধ্যেই বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ভেঙে পড়েন সিরাজ।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৫৮
Share:

উজ্জ্বল: আউট স্টার্ক। মধ্যমণি সিরাজকে ঘিরে উল্লাস সতীর্থদের। এপি

শেষ তিনবারের সাক্ষাতে ভারতের হাত থেকে বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি ছিনিয়ে নিতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। এ বারও সেই ট্রফি ভারতের দখলে রাখতে মরিয়া উদীয়মান তিন সৈনিক মহম্মদ সিরাজ, শার্দূল ঠাকুর ও ওয়াশিংটন সুন্দর।

Advertisement

ব্রিসবেনে তৃতীয় দিন ১২৩ রানের জুটি গড়ে ভারতকে ব্যাটিং বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন ওয়াশিংটন ও শার্দূল। চতুর্থ দিন বল হাতেও জ্বলে ওঠেন শার্দূল। তাঁর প্রাপ্তি চার উইকেট। সদ্য পিতৃহারা মহম্মদ সিরাজ প্রথম বারের মতো টেস্টে পাঁচ উইকেট নিয়ে স্বস্তি ফেরালেন ভারতীয় ড্রেসিংরুমে। চতুর্থ দিনের খেলার শেষে মা ও প্রিয় বন্ধুকে ভিডিয়ো কল করে তাঁর শপথ, “সিরিজ হাতছাড়া হতে দেব না।”

অস্ট্রেলিয়া সফরে পৌঁছনোর কয়েক দিনের মধ্যেই বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ভেঙে পড়েন সিরাজ। বাড়ি ফিরে মায়ের পাশে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সিরাজের মা তাঁকে বাড়ি ফিরতে বারণ করেন। অটোচালক বাবা মহম্মদ ঘউসের স্বপ্ন ছিল, ছেলেকে টেস্ট দলের প্রতিনিধি হিসেবে দেখার। সোমবার গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়ার আঁতুড়ঘরে পাঁচ উইকেট পেয়ে আকাশের দিকে ম্যাচের বল তুলে ধরেন সিরাজ। মৃত বাবাকে উৎসর্গ করেন তাঁর এই প্রাপ্তি। দিনের শেষে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন সিরাজ। তাঁর দাদা মহম্মদ ইসমাইল বলছিলেন, “ভাই মাকে বলছিল, পাঁচ উইকেট পাওয়ায় পরিবারের সদস্যেরা খুশি হবে ঠিকই। কিন্তু বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি নিজেদের আয়ত্তে রাখতে পারলে খুশি হবেন দেশের প্রত্যেকে। এই কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলে দু'জনেই।” ছোটবেলার বন্ধু, শারুর সঙ্গেও ভিডিয়ো কল মারফত যোগাযোগ করেন সিরাজ। শারু বলছিলেন, “ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় বুমরাকে জড়িয়ে ধরেছিল সিরাজ। বলছিল, বুমরাই ওকে সাহস দিয়েছে বিপক্ষের সামনে মাথা তুলে দাঁড়ানোর। কোন ব্যাটসম্যানের কোথায় সমস্যা, তা বুমরার সঙ্গে আলোচনা করে জানতে পারে সিরাজ। তাই ওকেই জড়িয়ে ধরে ড্রেসিংরুমে ফেরার সময়।” যোগ করেন, “সিরাজ মনে করিয়ে দিল, গত বার অস্ট্রেলিয়ায় বুমরা, শামির দাপট দেখে ও আমাকে কী বলেছিল। একসঙ্গে বসেই দেখতাম ম্যাচগুলো। সিরাজ তখন বলেছিল, এ রকম দাপটের সঙ্গে বল করার স্বপ্ন দেখে ও। সেই স্বপ্ন পূরণ হল আজ।”

Advertisement

শার্দূল ঠাকুরের কাহিনিও সংগ্রামের অন্যতম উদাহরণ। ভারতীয় ক্রিকেটে বিপ্লব ঘটানো এই ত্রয়ীর অন্যতম শার্দূল। মুম্বই থেকে তিন ঘণ্টার দূরত্বে ছিল তাঁর বাড়ি। বরিভালি আসার জন্য সূর্যোদয়ের আগেই বাড়ি থেকে বেরোতে হত। ফিরতে, ফিরতে রাত ১০.৩০। যাত্রাপথে ছয় ঘণ্টা নষ্ট হওয়ায় বিশ্রাম হত না তাঁর। কোচ দীনেশ লাড নিজের বাড়িতে রেখে শার্দূলকে গড়ে তোলার দায়িত্ব নেন। ছেলেকে বাড়ির বাইরে রাখতে একেবারেই রাজি ছিলেন না শার্দূলের বাবা নরেন্দ্র ঠাকুর। দীনেশ স্যরের স্ত্রী আশ্বাস দেওয়ায় রাজি হন শার্দূলের বাবা। মহম্মদ শামি, উমেশ যাদব, যশপ্রীত বুমরা ফিট থাকলে কোনও ভাবেই অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট খেলা হত না শার্দূলের। এমনকি ঘনিষ্ট মহলে তিনি আফসোস করেন, অস্ট্রেলিয়ায় থাকার কারণে সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি খেলা হচ্ছে না তাঁর। কে জানত, অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের সাহায্যে দেশকে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখাবেন তিনিই? দীনেশ লাড বলছিলেন, “অনূর্ধ্ব-১৫ স্কুল ক্রিকেটে একটি ম্যাচে ছয় উইকেট নেওয়ার সঙ্গেই ওভারে ছ'টি ছয় মেরে ম্যাচ জেতায় শার্দূল। সে ম্যাচের পরেই ওর বাবাকে বলেছিলাম, স্বামী বিবেকানন্দ স্কুলে ভর্তি করাতে। শুরুতে একেবারেই রাজি হচ্ছিল না। অনেক অনুরোধ করার পরে আমার প্রশিক্ষণে খেলতে পাঠায়। ওর মতো প্রতিভাকে তুলে আনতে পেরে সত্যি খুব খুশি। সাদা বলের ক্রিকেটে নিজেকে তুলে ধরতে সফল হলেও মুম্বইয়ের হয়ে ও কিন্তু লাল বলের ক্রিকেটেই বেশি ম্যাচ জিতিয়েছে।”

ওয়াশিংটন সুন্দর অন্য দিকে খেলাধুলোর পরিবার থেকেই উঠে এসেছেন। ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্লাব ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন ওয়াশিংটন। ওপেনার হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তিনি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে আর অশ্বিন, বেনুগোপাল রাও, লক্ষ্মীপতি বালাজিদের বিরুদ্ধে খেলেছেন। ভয় কী জিনিস তা কখনও বোঝেননি। দিদি শৈলজাও ঘরোয়া ক্রিকেটে জনপ্রিয়। বলছিলেন, “ভাই ছোট থেকেই সাহসী। ম্যাড্রাস ক্রিকেট লিগে বড় ম্যাচগুলোয় ওপেন করতে ভয় পেত সবাই। ওকে তখন পাঠানো হত ওপেন করতে। কারণ, ও বোলার দেখে কখনও খেলেনি। বলের মান অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করত। তাতেই এই সাফল্য।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement