মনখারাপের মেঘের মধ্যে আশার সূর্য সেই ধোনিই

মঙ্গলবারের গভীর রাতের নাগপুরকে দেখলে খারাপ লাগত। ভীষণ খারাপ লাগত। রাত দু’টো বাজে। জামথা স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে যে হাইওয়ে ধরে শহরে ঢুকতে হয়, তার আশেপাশের ধাবা জাতীয় দোকান দেখা গেল অত রাতেও খোলা। প্রেমিক-প্রেমিকা, বুড়ো-আধবুড়ো কে নেই সেখানে? সব যে যার জায়গায়, স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে।

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

নাগপুর শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৬ ১১:৫২
Share:

পতনের শুরু। আউট হয়ে ফিরছেন ধবন। ছবি: রয়টার্স।

মঙ্গলবারের গভীর রাতের নাগপুরকে দেখলে খারাপ লাগত। ভীষণ খারাপ লাগত।

Advertisement

রাত দু’টো বাজে। জামথা স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে যে হাইওয়ে ধরে শহরে ঢুকতে হয়, তার আশেপাশের ধাবা জাতীয় দোকান দেখা গেল অত রাতেও খোলা। প্রেমিক-প্রেমিকা, বুড়ো-আধবুড়ো কে নেই সেখানে? সব যে যার জায়গায়, স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে। খাবার কিনে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে, অথচ মুখে উঠছে না। আকস্মিক প্রিয়জন হারালে যেমন লোকের অবস্থা হয়। অত রাতেও ফাঁকা হাইওয়েতে দেখা গেল, বিশাল জ্যাম। সাধারণত ভারত জিতলে-টিতলে যে দৃশ্য দেখা যায়, ঠিক সেটাই। কিন্তু ভারত জেতেনি। আসলে সাড়ে দশটায় ম্যাচ শেষের পরেও পরবর্তী আড়াই ঘণ্টায় হাইওয়ে ফাঁকা না হওয়ার কারণ খুব সহজ। ভারত হারবে এটাই তো কেউ ভাবেনি। কেউ ভাবতেও পারেনি যে, এত দৌরাত্ম্য করে ম্যাচ দেখতে আসার পরিনাম এমন দাঁড়াতে পারে। বাস্তবকে মেনে নিতে কষ্ট এতটাই হচ্ছে যে, বাড়ি ফেরার প্রয়োজন বোধই কেউ করেননি প্রথম দিকে। রাত বাড়তে খেয়াল পড়েছে।

এবং মঙ্গলবারের নাগপুর রাতের দৃশ্যাবলী কোনও আশ্চর্য নয়। খুঁজলে গোটা দেশেরই বিভিন্ন জায়গায় একই রকম হয়তো দুঃখের ছবি পাওয়া যাবে। তার বহিঃপ্রকাশের ধরণ আলাদা হতে পারে, কিন্তু ভেতরের ভাবটা এক। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির টিম ইন্ডিয়াতাদেরও তো ম্যাচ পরবর্তী সময়ে নাগপুরবাসীর মতো ঠিক ততটাই বিহ্বল, ততটাই অনুভূতিহীন দেখাল। ম্যাচ শেষ হলে সাধারণত দু’টো টিমের মধ্যে স্বাভাবিক সৌজন্যের করমর্দন হয়। টিমের অধিনায়ককে যেতে হয় ব্রডকাস্টারদের প্রোগ্রামে। ভারতীয় টিম সবই করল, কিন্তু বড় যান্ত্রিক ভাবে। শিষ্টাচারের খাতিরে করতে হয়, তাই করা। ধোনি তিনিও যে ব্রডকাস্টারদের প্রোগ্রামে যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাঁর মাথা নীচের দিকে। চোখ মাঠে নিবদ্ধ। লজ্জায়, অপমানে চোয়াল-টোয়াল শক্ত হয়ে গিয়েছে। দেখাচ্ছে ঠিক এক পরাজিত বীরের মতো।

Advertisement

আসলে শুধু নিছক হার হলে ব্যাপার ছিল না। একটা টিম যারা কি না অস্ট্রেলিয়া থেকে জয়ের অশ্বমেধের ঘোড়া ছোটাচ্ছে, দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়েছে, এশিয়া কাপে একজনকেও দাঁড়াতে দেয়নি, তারা তো একটা ম্যাচে হারতেই পারে। সেটা কোনও অপরাধ নয়। কিন্তু ভয়ের ব্যাপার, চিন্তার জায়গা অন্য। প্রথমত, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে প্রত্যেকটা ম্যাচের ফলাফল টুর্নামেন্ট ভাগ্য ঠিক করে দিতে পারে। নিউজিল্যান্ডের কাছে যদি ভারত লক্ষ্যের কাছাকাছি গিয়ে হারত, খুব দুশ্চিন্তার কিছু ছিল না। কিন্তু ৪৭ রানে হারটা টিমকে দগ্ধ করছে অন্য ভাবে। টি-টোয়েন্টিতে এত বড় ব্যবধানে হেরে গেলে সমস্যা হল, পরের ম্যাচগুলো ভারতকে জিতলে শুধু হবে না। বড় মার্জিনে জিততে হবে রান রেটকে আরও তাগড়াই করতে। গোটা টিমের উপর চাপ বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।

এমনিতেই ভারত যে গ্রুপে পড়েছে সেখানে সহজ টিম বলে কিছু নেই। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টিতে অসম্ভব ভাল টিম। বাংলাদেশ, তারা তো বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন এক শক্তি এখন। আর এই তিনকে বাদ দিলে পড়ে থাকে পাকিস্তান, যারা কবে কী করবে তা বোধহয় তারা নিজেরাও জানে না। এমন তো হতেই পারে যে মহম্মদ হাফিজের একদিন ব্যাটে-বলে হয়ে গেল। বা শাহিদ আফ্রিদি হালফিলে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া তাঁর বিখ্যাত বুম বুম মেজাজে ফিরে গেলেন। তখন? ধোনি এমনি এমনি তাই চুপ মেরে যাননি। এমনি এমনি তাঁর চোয়াল শক্ত হয়ে যায়নি। তিনি তো জানেন এখন খাদের ধারে দাঁড়িয়ে। ফেভারিট ট্যাগ চুলোয় যাক, এখন আর একটা ম্যাচে গণ্ডগোল হয়ে যাওয়া মানে কাপ-স্বপ্নের সরণি থেকে ধীরে ধীরে হঠে যাওয়া।

তবে ভারত অধিনায়ক তা বলে হাত গুটিয়ে বসে নেই। গত রাতে হারের পর থেকেই টুর্নামেন্টে টিমের পুর্নগঠনের কাজে যে নেমে পড়েছেন, কথাবার্তাতেই বোঝা গেল। ধোনি যেমন বললেন, “আমার টিম অতীতে যে কামব্যাক করেনি তা তো নয়। করেছে। কী করে ফিরব, কতটা শক্তিশালী হয়ে ফিরব সেটাই এখন দেখতে হবে। আসলে যখন আপনার ইচ্ছে মতো সব হয় না, তখনই তো আপনাকে নেমে সেটাকে ঘোরাতে হয়।” সঙ্গে যোগ করলেন, “আমি সব কিছুকে টেকেন ফর গ্রান্টেড নিই না। নিজে সেটা মনেও করি। উইকেট নিয়ে ভেবে তো লাভ নেই। সেটা তো এক এক জায়গায় এক এক রকম হবেই। কলকাতায় এর পর খেলব আমরা। সেখানে পিচ আবার আলাদা হবে। গুরুত্বপূর্ণ হল, পিচকে বুঝে তার সঙ্গে ঠিকমতো মানিয়ে নেওয়া। তবে একটাই ব্যাপার যে, হারের মার্জিনটা একটু কম হলে ভাল হত।”

আজ সন্ধেতেই টিম কলকাতা পৌঁছে যাচ্ছে। আর তিন দিনের মধ্যে পাকিস্তান ম্যাচ। এবং শুধু টিমটা মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বলেই তাঁর কথাবার্তার উপর ভরসা করে নতুন আশাবাদ জন্ম সম্ভব। যে টিমের অধিনায়ক স্বয়ং মরণপণ যোদ্ধা, সেই টিম আর যা-ই হোক টুর্নামেন্ট থেকে গেলেও একটা ওলটপালট না করে দিয়ে যাবে না। তাই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে টিম ইন্ডিয়ার হার নিয়ে গত রাত থেকে আছড়ে পড়া নানাবিধ ব্যাঙ্গাত্মক পোস্টের মধ্যে ওই পোস্টটাও কিন্তু বড় প্রাসঙ্গিক। একটা ছবি সমেত। শাহিদ আফ্রিদির ছবি।

যেখানে আফ্রিদি মুখচোখ কুঁচকে নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশ্যে বলছেন, কেন ওদের এ ভাবে হারালি ভাই? এর প্রতিশোধটা তো এ বার ওরা আমাদের উপর নেবে!

আরও পড়ুন:
পিচ ভালই ছিল, দাবি জামথার ‘খলনায়ক’ কারলেকরের
কলঙ্কের পিচে শূলবিদ্ধ ভারতীয় ক্রিকেট

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement