ওয়ার্নারের অপছন্দের নটরাজন তাঁরই সুপারিশে এখন নায়ক
চলতি অস্ট্রেলিয়া সফরে একদিনের ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে দুরন্ত অভিষেক। শুক্রবার ব্রিসবেন টেস্টে অভিষেক ঘটিয়েও চোখধাঁধানো পারফরম্যান্স। অনন্য নজির গড়লেন বাঁহাতি পেসার টি নটরাজন। ৭৮ রান দিয়ে নিলেন ৩ উইকেট। তবে ওঁর শুরুটা এত মসৃণ ছিল না। অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারের প্রাথমিক উপেক্ষার পরেও সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে নজরকাড়া পারফরম্যান্স। ১৬টা উইকেট নিয়ে আইপিএলে তিনি অন্যতম নায়ক।
সেই সুবাদে নেট বোলার হিসেবে বিরাট কোহালিদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া উড়ে যাওয়া। সিনিয়র পেসাররা চোটের তালিকায় নাম লেখাতেই ওঁর কপাল খুলে গেল। একই সফরে তিন ফরম্যাটেই দেশের হয়ে অভিষেক ঘটালেন! ভারতীয় পেসার হিসেবে এটা বিরল কীর্তি। স্বভাবতই ছাত্রের এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মুথাইয়া মুরলীধরন। শ্রীলঙ্কার প্রবাদপ্রতিম স্পিনার ক্যান্ডির বাড়ি থেকে আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে হোয়াটসআ্যপ কলের মাধ্যমে কথা বললেন।
ক্রিকেট দুনিয়ার কাছে ২৯ বছরের এই পেসার টি নটরাজন নামে খ্যাত হলেও, মুরলী কিন্তু ওঁকে ‘নাট্টু’ বলেই ডাকেন। বললেন, “ওর শরীর জোরে বোলারদের মতো নয়। বডি ল্যাঙ্গুয়েজেও সেই আগুনে বহিঃপ্রকাশ নেই। ফলে অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ওকে চূড়ান্ত একাদশে রাখতে চাইছিল না। তবে একটা আধ ঘন্টার নেট সেশন সব হিসেব বদলে দিয়েছিল!”
এভাবেই উইকেট নিয়ে সেলিব্রেট করতেন টি নটরাজন। ফাইল চিত্র
আরও পড়ুন: অনুশোচনা নেই, জানিয়ে দিলেন ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ রোহিত শর্মা
পুরো ঘটনা খোলসা করলেন এক সময় ব্যাটসম্যানদের ত্রাস হয়ে ওঠা এই অফ স্পিনার। বললেন, “আমরা কোয়রান্টিন কাটিয়ে প্রথম দিন প্র্যাকটিসে নামলাম। ডেভিড নেটে ঢোকার পরেই ভুবনেশ্বর কুমার ও রশিদ খানের ডাক পড়ল। তবে রশিদ শুরুতে বোলিং করতে রাজি হল না। রশিদ সিঙ্গল স্টাম্প বসিয়ে নেটে বোলিং করতে বেশি আগ্রহী। তাই বাধ্য হয়েই লক্ষ্মণ নাট্টুকে ডাকল। নাট্টু কয়েকটা আউট সুইং করার পর ওয়ার্নারকে লাগাতার ইয়র্কার করতে শুরু করেছিল। যতদূর মনে পড়ে ও সেদিন লাগাতার ১০-১২টা ইয়র্কার দিয়েছিল। নেট থেকে বেরিয়ে সোজা আমাদের কাছে চলে এসে ওয়ার্নার বলেছিল, ম্যাচ ফিট থাকলে নটরাজন প্রতিটা ম্যাচ খেলবে। সেই ওর যাত্রা শুরু, যা এখনও চলছে।”
আইপিএলে নটরাজনের ইয়র্কারে আউট হয়েছেন এবি ডিভিলিয়ার্স। বাঁহাতি পেসারকে নিয়ে চর্চা হয়েছে প্রচুর। কিন্তু মুরলী বলছেন, “নটরাজন ওর ইয়র্কারের জন্য ইতিমধ্যেই বিপক্ষের কাছ থেকে সমীহ আদায় করেছে। তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগেও দারুণ সব ইয়র্কার দিয়েছে। তবে আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, নটরাজনের হাতে অনেক বৈচিত্র রয়েছে। সেগুলো আইপিএলে ওকে প্রয়োগ করতে দেখা যায়নি। নটরাজনের বাউন্সার খুব ধারাল, স্লোয়ার ডেলিভারিতে দক্ষ, অফ কাটার দিতে পারে ও নতুন বলেও উইকেট নিতে পারে।”
চলতি বছর দেশের মাটিতে আয়োজিত হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সাদা বলের ক্রিকেটে তিনি কি এক্স ফ্যাক্টর হতে পারেন? মুরলীর জবাব, “ভুবি চোট সারিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছে। তবে টিম ম্যানেজমেন্ট ওকে বিশ্বকাপ দলে সুযোগ দেবে কিনা সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি ও নভদীপ সাইনি অটোমেটিক চয়েস। ডেথ ওভারের কথা মাথায় রেখে নাট্টুকেও নেওয়া উচিত। ও এক্স ফ্যাক্টর হতে পারে।”
শুধু স্বপ্ন থাকলে চলে না। সঙ্গে থাকতে হবে তীব্র জেদ ও তাগিদ। ২৯ বছরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিষেক ঘটিয়ে নটরাজন সেটা করে দেখিয়েছেন। এবার শুধু এগিয়ে যাওয়ার পালা।
আরও পড়ুন: সর্ষের মধ্যে ভূত! সিডনিতে নিরাপত্তারক্ষীরাই বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণ করলেন ভারতীয় সমর্থককে