ওয়াঘার ও পারের একাংশ তাঁর বক্তব্যে ‘শক্ড’। জনৈক লাহৌর-নিবাসী তাঁর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছেন। এই অবস্থায় ওয়াঘার এ পারে শাহিদ আফ্রিদি তাঁর পাশে পেয়ে গেলেন গোটা টিমকে। তার চেয়েও তাৎপর্যের, তিনি পাশে পেয়ে যাচ্ছেন ইমরান খানের মতো পাকিস্তানি ক্রিকেট ব্যক্তিত্বকে।
‘‘ভারতে যে ভালবাসা পেয়েছি, সেটা পাকিস্তানেও পাইনি।’’ রবিবার সাংবাদিক সম্মেলনে পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের এই বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসেন। যার পর দ্রুত টিম মিডিয়া ম্যানেজার সাংবাদিক সম্মেলন শেষ করে দেন। পরে অন্যান্য প্লেয়ারদেরও বিতর্কিত কোনও প্রসঙ্গে ঢুকতে দেননি।
অধিনায়কের মন্তব্যে যখন দু’দেশ তোলপাড়, তখন টিমের অভ্যন্তরের ছবিটা ঠিক কী? আফ্রিদি-বিতর্কের জেরে গোটা টিমকে নিয়ে রীতিমতো বৈঠকে বসে যান মিডিয়া ম্যানেজার আগা আকবর। টিমের সবার সামনে আফ্রিদিকে জিজ্ঞেস করেন, হঠাৎ কেন তিনি এ রকম একটা মন্তব্য করতে গেলেন?
আফ্রিদি স্বপক্ষে কিছু বলার আগেই নাকি টিমের সবাই তাঁকে সমর্থন করে বলে দেন, তাঁরা সবাই অধিনায়কের পাশে। বলে দেন, তাঁরা সবাই অধিনায়কের সঙ্গে একমত। সত্যিই ভারতে এসে যে ভালবাসা, যে নিরাপত্তা তাঁরা পেয়েছেন, নিজেদের দেশে কোনও দিনই সেটা পাননি। সুতরাং আফ্রিদি যা বলেছেন, একদম ঠিক বলেছেন। ম্যানেজারকে তাঁরা আশ্বস্ত করেন যে, পাকিস্তানের কোনও কোনও অংশে আফ্রিদির মন্তব্য নিয়ে এখন অশান্তি চলছে, ঠিক। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দু’একটা ম্যাচ তাঁরা জিতলেই দেশের মানুষ আবার টিমের হয়ে, আফ্রিদির হয়ে গলা ফাটাবেন। তাই এটা নিয়ে বেশি মাথাব্যথার দরকার নেই। তার আগে এবিপি টিভিতে ইমরান বলে দিয়েছেন, ‘‘আবেগের বশে মাঝে মধ্যে ক্রিকেটাররা কিছু কথা বলে ফেলে। মনে হয় ভারতে নেমে অভ্যর্থনাটা টিমের ভাল লেগেছে। আফ্রিদি সেই ভাল লাগাটাই প্রকাশ করেছে। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কিছু নেই।’’
ই়ডেনে আফ্রিদিদের ছবি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস
বৈঠকের মধ্যিখানে আবার ক্রিস গেইলের এক ঘনিষ্ঠ তাঁর একটা ব্যাট নিয়ে আসেন, পাকিস্তান প্লেয়ারদের তাতে সই করাবেন বলে। এর পর আফ্রিদি তাঁর বক্তব্য রাখেন। বলে দেন যে, কলকাতাকে বরাবর তিনি ‘সেকেন্ড হোম’ হিসেবে দেখে এসেছেন। বলেন, পাকিস্তানে তাঁরা যা যা পান না, সবই কলকাতা তাঁদের দিয়েছে। স্থানীয় ম্যানেজার মইন বিন মকসুদকে উদ্দেশ্য করে আফ্রিদি বলে দেন, ‘আপনি আমাকে প্লেনের ভেতর থেকে অভ্যর্থনা করে নিয়ে এসেছেন। আমাদের দেশে কোনও দিন এ রকম অভ্যর্থনা পাইনি। মাঠকর্মীরা পর্যন্ত যে ভাবে আতিথেয়তা দেখাচ্ছেন, তাতে আমি অভিভূত।’
এর পর নাকি আফ্রিদি ঘোষণা করেন যে, মঙ্গলবারের সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি প্রকাশ্যে তাঁর বক্তব্য রাখবেন। সবার সামনে বলবেন যে, কলকাতা তাঁর কাছে দ্বিতীয় ঘরের মতো। এই শহরের ভালবাসা এবং সৌজন্য আজীবন মনে রাখবেন। তিনি আরও বলতে থাকেন যে, আইসিসি থেকে তাঁরা দিনের খাওয়া বাবদ একশো ডলার করে পান। কলকাতায় আসার পর যে টাকাটা তাঁদের খরচাই করতে হয়নি। শহরের বিভিন্ন নামী মোগলাই হোটেল থেকে রোজই তাঁদের জন্য খাবার পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এ দিন সন্ধেয় আবার পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তাদের ফেসবুক পেজে আফ্রিদির একটি বিবৃতি পোস্ট করে। যাতে পাক অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘পাকিস্তানি জনতার চেয়ে বড় আমার কাছে কিছু নেই। এখানে মিডিয়ার একজন আমাকে প্রশ্নটা করল বলে এমন একটা বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছি যা গোটা দুনিয়ায় পৌঁছে যায়। তাই বলেছি আমরা এখানে যখনই আসি, প্রচুর সম্মান পাই। এই একই কথা তো ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিস, ইনজামাম উল হকরাও এখানে এসে বলেছেন। বলেছেন যে, এখানে ক্রিকেটই ধর্ম। ইমরান ভাইকে জিজ্ঞেস করুন, উনি বলে দেবেন।’’
শেষ পর্যন্ত আফ্রিদি যদি সত্যিই সাংবাদিক সম্মেলন করেন এবং নিজের মতামত ব্যাখ্যা করেন, তা হলে জাভেদ মিয়াঁদাদ তাঁর মন্তব্যের যোগ্য জবাব পেয়ে যাবেন। মিয়াঁদাদ এ দিন আফ্রিদির তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন যে, ভারতীয় দর্শকের প্রশংসা করা নিয়ে পাক অধিনায়কের লজ্জা হওয়া উচিত। আফ্রিদির মন্তব্যে তিনি দুঃখিত, শক্ড।
মিয়াঁদাদকে পাল্টা দিতে পারেন ইন্তিখাব আলমও। পাকিস্তানের টিম ম্যানেজারকে টিম হোটেলে যে ঘরটা দেওয়া হয়েছিল, সেটা কিছুটা ছোট হওয়ায় বর্ষীয়ান প্রাক্তন ক্রিকেটারের অসুবিধে হচ্ছিল। স্থানীয় ম্যানেজারের উদ্যোগে তাঁর ঘর পাল্টে বিশাল সুইট রুম দিয়ে দেওয়া হয়। যাতে অভিভূত পাক ম্যানেজার বলতে থাকেন, কলকাতা ছাড়ার আগে সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বিশেষ চিঠি পাঠাবেন।
এ দিন প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৫ রানে হারিয়ে আরও আনন্দে পাক টিম। বিশেষ করে এ দিন ব্যাটিংটাও ক্লিক করে যাওয়ায়। আফ্রিদি নিজে ০ রানে আউট হলেও মহম্মদ হাফিজের ৪৯ বলে অপরাজিত ৭০ রান টিমকে কিছুটা স্বস্তিতে রাখছে। জেতার পর ড্রেসিংরুমে একটা টুলের উপর উঠে দাঁড়িয়ে টিমকে দীর্ঘ পেপ টক দেন ইন্তিখাব। বলেন, জয়ের অভ্যেসটা যেন আসল টুর্নামেন্টেও ধরে রাখা যায়। রবিবার মাল্টিপ্লেক্সে প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার ‘জয় গঙ্গাজল’ দেখা হয়নি। এ দিন হোটেল রুমে বসেই ডিভিডি চালিয়ে সিনেমাটা দেখে নেন মহম্মদ আমের, ওয়াহাব রিয়াজ এবং এ দিন চার উইকেট পাওয়া ইমাদ ওয়াসিম। শোনা গেল, ‘সিংহাম’-এর ডিভিডিও আনিয়েছেন তাঁরা।
এ সবের মধ্যেও সামান্য চোনা থেকে গেল। ম্যাচের পর প্র্যাকটিস করতে চেয়েছিলেন পাক টিমের কেউ কেউ। কিন্তু তার আগেই পিচে জল ঢেলে দেওয়া হয়। আর যাতে সবচেয়ে বিরক্ত হয়েছেন পাক ক্রিকেটাররা, সেটা হল তাঁদের ফিজিক্যাল ট্রেনিং করার সময়ই ইডেনের চারটে ফ্লাডলাইট নিভিয়ে দেওয়া। ব্যাপারটা সিএবিকে জানানোয় সঙ্গে সঙ্গে একটা ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তার পর কিছুক্ষণ স্ট্রেচিং করতে দেখা যায় তিন-চার জন প্লেয়ারকে।
আর মহম্মদ সামি? ডান হাতি পাক পেসার এ দিন প্রস্তুতি ম্যাচে নামেননি। সন্ধেয় মাঠ ছাড়ার সময় মিডিয়া ম্যানেজার বলে গেলেন, ‘‘বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলে বল লেগেছিল। হাড় ভাঙেনি, খুব একটা ফোলেওনি। আইসপ্যাক লাগিয়ে রিকভারি চলছে সামির।’’ বাংলাদেশ ম্যাচে সামি খেলতে পারবেন কি না, সেটা অবশ্য খোলসা করে বলেননি আকবর। পরে শোনা যাচ্ছে, টিমের ফিজিও নাকি সামিকে অনেকটাই ফিট বলছেন।