স্মৃতি: বিজয়ন ও ভাইচুংয়ের সঙ্গে প্রয়াত ধনরাজন (ডানদিকে)। ফাইল চিত্র
গত রবিবার রাতে যখন রাধাকৃষ্ণ ধনরাজনের মৃত্যুর খবরটা পেয়েছিলেন, বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না আই এম বিজয়ন।
বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে গেলেও কেরলের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়মিত ‘সেভেন আ সাইড’ টুর্নামেন্ট খেলেন ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। সপ্তাহখানেক আগেও এগারো বছরের ছোট ধনরাজনের সঙ্গে খেলেছেন তিনি। তাই মৃত্যুর খবর শুনে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন বিজয়ন। এখন অনেকটাই সামলে নিয়েছেন নিজেকে। এগিয়ে এসেছেন ধনরাজনের পরিবারকে সাহায্য করতে। ইতিমধ্যেই কেরলের ক্রীড়ামন্ত্রী ই পি জয়রাজনকে অনুরোধ করেছেন ধনরাজনের স্ত্রীকে সরকারি চাকরি দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি, পালাক্কড়ে চ্যারিটি ম্যাচ আয়োজনেরও উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন
ভাইচুং ভুটিয়াকেও।
নতুন বছরের প্রথম দিন বুধবার সকালে ফোনে আনন্দবাজারকে বিজয়ন বললেন, ‘‘কেরলের ক্রীড়ামন্ত্রী ই পি জয়রাজনের সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। আমি ওঁকে অনুরোধ করেছি, ধনরাজনের স্ত্রীর সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করতে। ক্রীড়ামন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দ্রুত নিয়োগপত্র দেওয়া হবে ধনরাজনের স্ত্রীকে।’’
বিজয়নের মতো ধনরাজনেরও উত্থান টি কে চাতুনির কোচিংয়ে। যদিও ক্লাব পর্যায়ে দু’জনের কখনও একসঙ্গে খেলেননি। বলছিলেন, ‘‘চাতুনি স্যরের ছাত্র ছিল বলেই ধনরাজনের প্রতি বরাবরই আমার দুর্বলতা একটু বেশি ছিল।’’ তিনি আরও বললেন, ‘‘বিভিন্ন সেভেন আ সাইড প্রতিযোগিতায় মাঝেমধ্যেই আমাদের দেখা হত। ওকে বলতাম, আই লিগের কোনও ক্লাবে খেলার চেষ্টা কেন করছো না? তুমি যে রকম ফর্মে আছ, স্বচ্ছন্দে আরও তিন-চার বছর খেলতে পারবে। ধনরাজন বলত, কোনও ক্লাব ডাকলেই যাব। ফিট থাকার জন্যই তো বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলছি।’’ কথা বলতে বলতে গলা ধরে এল বিজয়নের। যোগ করলেন, ‘‘ধনরাজন প্রচণ্ড শৃঙ্খলাপরায়ণ ছিল। তা সত্ত্বেও খেলতে খেলতে কী ভাবে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হল, সেটা এখনও আমার কাছে রহস্য। তাই প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে, ও মারা গিয়েছে।’’
ব্যস্ততার কারণে এখনও প্রয়াত ফুটবলারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে না পারার যন্ত্রণা কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে বিজয়নের মনে। বলছিলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমি ওয়েনাদ জেলায়। ত্রিশূর ফিরে পালাক্কড় গিয়ে ওর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব। তবে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনও ভাষা নেই।’’ তিনি যোগ করলেন, ‘‘ধনরাজনের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের জন্য পাল্লাকড়েই একটি চ্যারিটি ম্যাচ আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে। মূলত কেরলের ফুটবলারেরাই খেলবে। তবে ভাইচুংকে অনুরোধ করব খেলার জন্য। সময় পেলে নিশ্চয়ই ও আসবে।’’
কেরলের পালাক্কড় জেলায় ধনরাজনের জন্ম। ভিভা কেরল থেকে উত্থান তাঁর। কলকাতা ময়দানে ধনরাজনের অভিষেক ইউনাইটেড স্পোর্টসের জার্সি গায়ে। পরে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডান ও সাদার্ন সমিতিতেও খেলেছেন তিনি। ২০১০ সালে বাংলার সন্তোষ ট্রফি জয়ের নেপথ্যেও অবদান ছিল সদ্য প্রয়াত লেফ্ট ব্যাকের। সন্তোষ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই কেরল ক্রীড়া পর্ষদে চাকরি পেয়েছিলেন। স্ত্রী ও চার বছরের মেয়েকে নিয়ে থাকতেন পালাক্কড়েই। কিন্তু কলকাতার ফুটবলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। আই লিগে কেরলের একমাত্র দল এখন গোকুলম এফসি। ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান কেরলে খেলতে গেলেই শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও মাঠে হাজির হয়ে যেতেন ধনরাজন। সেই ছবি আর
দেখা যাবে না।