জুটি: অধিনায়ক সুনীলই ভরসা এখনও কোচ ইগরের। ফাইল চিত্র।
অষ্টম বার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়কে খুব গুরুত্ব দিতে নারাজ ইগর স্তিমাচ। ভারতীয় দলের কোচের যুক্তি, দক্ষিণ এশিয়াতেই শাসন করে চলেছে ভারত। তাঁর মতে, অনেক বড় লক্ষ্য হচ্ছে, ২০২৩ সালের এশিয়ান কাপের জন্য যোগ্যতা অর্জন করা। ইগরের ভারতীয় কোচ হিসেবেও এটাই প্রথম ট্রফি। তবু তাকে আমল দিচ্ছেন না।
মঙ্গলবার সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন আয়োজিত ‘ভার্চুয়াল’ সাংবাদিক বৈঠকে স্তিমাচ বলে দেন, ‘‘আমি এই জয়কে বিশেষ কৃতিত্বের বলে মনে করি না। কারণ, এটা খুব স্বাভাবিক যে, সাফে গিয়ে ভারতই চ্যাম্পিয়ন হবে। এই প্রতিযোগিতায় আমরাই শাসন করি। কিন্তু আরও অনেক দূর যেতে পারি।’’ তবে ইগর স্বীকার করে নিচ্ছেন, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রথম দু’টি ম্যাচে ড্র করার পরে খুবই চাপে ছিল ভারতীয় দল। ফাইনালের আগেই ছিটকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এর পরে সুনীল ছেত্রীর নৈপুণ্যে ভর করে নেপালকে ১-০ এবং মলদ্বীপকে ৩-১ হারিয়ে ফাইনালে ওঠে দল। ফাইনালে নেপালকে ৩-০ হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ইগর যদিও বলছেন, ‘‘ফলটার জন্যই খারাপ দেখাচ্ছিল, না হলে প্রথম দু’টো ম্যাচে আমরা খারাপ খেলিনি। আমাদের মনোভাব বা তীব্রতায় কোনও ফারাক ছিল না। কখনও আমরা গোল করতে পেরেছি, কখনও পারিনি, সেটাই ছিল তফাত। কিন্তু শেষে যে ট্রফি জিতেছি, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’’
তাঁর প্রধান লক্ষ্য, এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন করা। তবে চিন্তিত ভাবে তিনি যোগ করছেন, ‘‘২০২৩ এশিয়ান কাপের তৃতীয় রাউন্ডের প্রতিযাগিতা শুরু হবে ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে। সেখানে ভাল ফল করতে হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সেই সময়ে ভারতে আইএসএল চলবে পুরোদমে। ক্লাবগুলোকে দেশের স্বার্থের কথা ভেবে তখন ফুটবলার ছাড়তে হবে।’’ যোগ করছেন, ‘‘জানি না, কোন গ্রুপে থাকব, কাদের সঙ্গে আমাদের খেলতে হবে। বলা হয়েছে, ১ ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রথম ম্যাচ। খুব ভাল ভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।’’ স্তিমাচ এই প্রতিযোগিতার উপরে জোর দেওয়ার ডাক দিচ্ছেন। ‘‘ফিফা উইন্ডোর বাইরে এই ম্যাচগুলি হবে আর আমাদের যদি সফল হতে হয়, তা হলে ঘরোয়া ফুটবলের প্রশাসকদের সঙ্গে বসতে হবে জানার জন্য যে, প্রস্তুতির জন্য কতটা সময় ভারতীয় ফুটবলারেরা পেতে পারে।’’ আইএসএলের প্রথম পর্বের সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ১৯ নভেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি চলবে প্রথম পর্ব। তার পরে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হওয়া মানে ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের প্রথম ম্যাচের আগে খুব বেশি সময় প্রস্তুতির জন্য পাওয়া যাবে কি না, সন্দেহ। ইগর মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে ভাল ফল করতে গেলে প্রস্তুতির জন্য হাতে ভাল রকম সময় থাকা দরকার। ‘‘না হলে ফাটকা খেলা হবে,’’ সোজাসাপ্টা বলে দিচ্ছেন তিনি। যোগ করছেন, ‘‘আইএসএল শুরু হয়ে যাবে। দেখতে হবে যাতে হাতে আগে থাকতে ফুটবলারদের জাতীয় দলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়।’’
ভারত অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর বয়স এই মুহূর্তে ৩৭ বছর। ইগর বুঝিয়ে দিয়েছেন, এখনও সুনীলই তাঁর তূণের সেরা অস্ত্র। তাঁকে সামনে রেখেই যাবতীয় পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন। কোচের কথায়, ‘‘আমি বয়স দেখে দল গড়ি না। আমার কাছে দল গড়ার প্রথম শর্ত হল ভাল খেলছে কারা। বয়স আমার কাছে একটি সংখ্যা মাত্র। যদি বয়স দেখে জাতীয় দল গড়তাম, তা হলে আমার কোচিংয়ে ভারতীয় সিনিয়র দলে ১৮ বছরের ফুটবলার জায়গা পেত না।’’ যোগ করেছেন, ‘‘সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও সুনীল পাঁচ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা। মাঠে দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছে দুর্দান্ত ভাবে। দলের মধ্যে বেশির ভাগেরই প্রেরণা সুনীল। ড্রেসিংরুমে দলের জন্য ভাল কিছু করার তাগিদ, আবেগ ওর মধ্যেই বেশি দেখতে পাই। ফিটনেস এই বয়সেও অনবদ্য।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যদি কেউ এমন আসে যে ওর থেকে ভাল গোল করতে পারছে, ওর চেয়ে ভাল ফিটনেস দেখাচ্ছে, তা হলেই সুনীলের পরিবর্ত হিসেবে কারও কথা ভাবা যেতে পারে। না হলে ওর জায়গায় অন্য কারও কথা ভাবা যাচ্ছে না।’’