প্রস্তুতি: ইডেনে বাংলা ম্যাচের অনুশীলনে মগ্ন পার্থিব। নিজস্ব চিত্র
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির উত্তরসূরি হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয়েছে ঋষভ পন্থের। তিনি ভুল করলেই, তুলনা করা হয় তাঁর পূর্বসূরির সঙ্গে। যা প্রভাব ফেলে ঋষভের পারফরম্যান্সেও। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে ক্যাচ পড়লে গ্যালারি চেঁচিয়ে ওঠে ‘ধোনি... ধোনি...’। ব্যাটে রান না পেলে সমালোচনার ঢেউ আছড়ে পরে তাঁর উদ্দেশ্যে। এ ধরনের চাপ এখন ঋষভের সঙ্গী।
ঋষভ কতটা চাপের মধ্যে রয়েছেন তা উপলব্ধি করতে পারছেন পার্থিব পটেল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৫টি টেস্ট, ৩৮টি ওয়ান ডে ও দু’টি টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাঁকেও অনেক বার তুলনা করা হয়েছে ধোনির সঙ্গে। তাই ঋষভকে পার্থিবের পরামর্শ, ‘‘যতটা সম্ভব, সমালোচনা থেকে দূরে থাকা উচিত ওর। এ সবে কান না দিয়ে নিজের খেলায় মনোনিবেশ করুক ঋষভ।’’ যোগ করেন, ‘‘এখন তরুণ ক্রিকেটারদের কাছে অনেক সুযোগ। আমাদের সময় আইপিএল-এর মতো মঞ্চ ছিল না। এখন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে অনেকটা মানিয়ে নিতে পারছে। কিন্তু কারও ফর্ম খারাপ গেলে, সব জায়গা থেকে কথা শুনতে হয়। কেউ এই চাপে আরও শক্তিশালী হয়ে ফেরে। কেউ ভেঙে পড়ে।’’
পার্থিব জানিয়েছেন, ভারতের হয়ে নিয়মিত খেলার স্বপ্ন থাকলে এ ধরনের চাপ সামলাতেই হবে। তাঁর কথায়, ‘‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপ অন্য রকম। তার উপরে যদি তুমি ভারতের হয়ে খেল, তা হলে তো কথাই নেই। ক্রিকেটপ্রেমী দেশে সবার উপর পারফর্ম করার চাপ তৈরি হয়। কখনও এই চাপ প্রভাব ফেলতে পারে পারফরম্যান্সেও।’’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সদ্য টি-টোয়েন্টি সিরিজের উদাহরণ টেনে পার্থিবের বক্তব্য, ‘‘ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে ভালই খেলেছে। মাঠে প্রত্যেক মুহূর্ত উপভোগ করে। চাপ কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে পারলে বড় ক্রিকেটার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ওর মধ্যে।’’
ঋষভের ব্যাটিংয়ের সঙ্গেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে তাঁর উইকেটকিপিং টেকনিক। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষ ওয়ান ডে ম্যাচে তিনটি ক্যাচ পড়েছে তাঁর হাত থেকে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও টি-টোয়েন্টি সিরিজে উইকেটকিপার পন্থকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। পার্থিব যদিও কিপার পন্থের উপর থেকে আস্থা হারাননি। গুজরাত অধিনায়কের কথায়, ‘‘ইংল্যান্ডের মতো কঠিন পরিবেশে অভিষেক হয়েছে ঋষভের। সেখানে উইকেটের পিছনেও বল সুইং করে। তাই ওর টেকনিক নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত না। এক-দু’টো ইনিংস লাগে একজন ক্রিকেটারের ঘুরে দাঁড়াতে। আমার বিশ্বাস, ঋষভও বেশি সময় নেবে না।’’
তিনি নিজে ১৭ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশে গ্লাভস হাতে মাঠে নেমেছিলেন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির উত্থান থেকে ঋদ্ধিমান সাহার ‘সুপারম্যান’ হয়ে ওঠার কাহিনী তাঁর জানা। তাই পন্থের প্রতিভা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তাঁর বলতে দ্বিধা নেই, ‘‘ভারতীয় দলে প্রতিভা ছাড়া সুযোগ পাওয়া যায় না। ঋষভ যখন ভারতের হয়ে খেলছে, তার মানে ও যোগ্য। টিম ম্যানেজমেন্টও তাই ওর পাশে আছে। ও ভাল করছে বলেই না আমরা ওকে নিয়ে এত আলোচনা করছি। শুধু মাঠে নেমে প্রত্যেক মুহূর্ত উপভোগ করুক। বাকিটা এমনিই হয়ে যাবে।’’
ঋষভকে নিয়ে আলোচনার মাঝেই পার্থিবকে প্রশ্ন করা হয়, এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা উইকেটকিপার কে? পার্থিবের উত্তর, ‘‘নিঃসন্দেহে ঋদ্ধিমান সাহা। যে ভঙ্গিতে ও ক্যাচ নেয় তা অন্যদের আরও উজ্জীবিত করে। আমার কাছে ঋদ্ধিই বিশ্বের এক নম্বর উইকেটকিপার।’’
ইডেনে আজ বাংলার মুখোমুখি তাঁর দল গুজরাত। সবুজ পিচ, অথচ দলে নেই যশপ্রীত বুমরা। তাঁর থাকার কথাও নয়। রবিবার থেকে শুরু শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজে তিনি রয়েছেন। হয়তো খেলবেনও। কিন্তু ইডেনের বাইশ গজ তাঁর অভাব অনুভব করবে। গত ম্যাচেও খেলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল বুমরার। কিন্তু ভারতীয় বোর্ড অনুমতি দেয়নি। যা নিয়ে পার্থিবের প্রতিক্রিয়া, ‘‘গত ম্যাচে বুমরা খেললে ভালই হত। কিন্তু ভারতীয় বোর্ড ও টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তো আমরা কথা বলতে পারি না।’’