কাইল জেমিসন। ছবি রয়টার্স।
পাঁচ উইকেট নিয়ে তিনি রবিবার ধস নামিয়েছিলেন ভারতীয় ব্যাটিংয়ে। তাঁর শিকারের মধ্যে ছিল বিরাট কোহালির উইকেটও। পর পর তিনটে বল বাইরে নিয়ে গিয়ে চতুর্থ বল ভিতরে এনে ভারত অধিনায়ককে ফিরিয়ে দেন নিউজ়িল্যান্ডের পেসার। সেই কাইল জেমিসন নিজেই বলেছেন, তাঁর ওই বলে পৃথিবীর যে কোনও ব্যাটসম্যান আউট হতে পারতেন।
রবিবার খেলার শেষে সাংবাদিক বৈঠকে জেমিসনকে প্রশ্ন করা হয়, প্রথমে আউটসুইং দিয়ে তার পরে ইনসুইংয়ে কোহালিকে ফাঁদে ফেলার ব্যাপারটা কি পরিকল্পিত? জবাবে ছ’ফুট আট ইঞ্চির এই পেসার বলেন, ‘‘হ্যাঁ, সেটা বলতে পারেন। আমরা এই নিয়ে টিম মিটিংয়ে অনেক আলোচনা করেছি। যে বলটায় কোহালিকে এলবিডব্লিউ করি, সেটা ভিতরে নিয়ে এসেছিলাম।’’
জেমিসন মনে করিয়ে দিয়েছেন, এই ভাবে নিয়ন্ত্রিত সুইং করানো এক জন বোলারের পক্ষে যতটা কঠিন, এক জন ব্যাটসম্যানের পক্ষেও সেই সুইং সামলানো ততটা কঠিন। তা সেই ব্যাটসম্যান যতই দক্ষতাসম্পন্ন হোন না কেন। জেমিসনের কথায়, ‘‘বোলার হিসেবে আউটসুইং করতে করতে ইনসুইং করানোটা কিন্তু সোজা কাজ নয়। আবার ব্যাটসম্যানের পক্ষেও সহজ নয় এই ধরনের ডেলিভারি সামলানো। তা সে ব্যাটসম্যান যে-ই হোক না কেন। কোহালি কেন, যে কোনও ব্যাটসম্যানই ও রকম বলে আউট হতে পারত।’’
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে সাউদাম্পটনে ভারতের প্রথম ইনিংসে ৩১ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট তুলে নেন জেমিসন। কোহালি ফিরে যাওয়ার পরে ভেঙে পড়ে ভারতীয় ইনিংস। যা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে জেমিসন বলেন, ‘‘অবশ্যই কোহালি ভারতীয় ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ। ওকে তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে আমরা ম্যাচের রাশটা নিজেদের হাতে নিতে পেরেছিলাম।’’
কোহালির উইকেট পেলেও জেমিসন মনে করেন না, ভারত অধিনায়কের ব্যাটিংয়ে তিনি কোনও দুর্বলতা খুঁজে পেয়েছেন। নিউজ়িল্যান্ড পেসারের মন্তব্য, ‘‘কোহালি বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। এদের ব্যাটিংয়ে খুব একটা দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া যায় না। কোহালিকে তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে দিতে পারাটা তাই অন্য রকমের তৃপ্তি দেয়।’’
ভারতের প্রথম ইনিংস ২১৭ রানে শেষ হয়ে যাওয়ার পরে নিউজ়িল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা ভাল শুরু করেন। ৭০ রানের মাথায় ওপেনার টম ল্যাথামকে ফিরিয়ে দেন অফস্পিনার আর অশ্বিন। এর পরে একেবারে শেষ বেলায় ইশান্ত শর্মার বলে আউট হন ডেভন কনওয়ে। এই উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্টে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে গেলেন ইশান্ত (১৩ টেস্টে ৪৪ উইকেট)। তিনি পিছনে ফেলে দিলেন কপিল দেবকে।
কিন্তু তার দু’বল পরেই খারাপ আলোর জন্য খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ভারতের তরুণ ওপেনার শুভমন গিল মনে করেন, ওই সময় আর একটু খেলা হলে নিউজ়িল্যান্ডকে চাপে ফেলা যেত। সাংবাদিক বৈঠকে এসে শুভমন বলেন, ‘‘কনওয়ের উইকেটটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমার মনে হয়, ওই সময় যদি রস টেলরকে আর একটু বল করার সুযোগ পাওয়া যেত, তা হলে স্কোর অন্য রকম হত। আমরা হয়তো আরও দু’একটা উইকেট ফেলে দিতে পারতাম।’’ কনওয়ে আউট হওয়ার পরে টেলর নেমে মাত্র দুটো বল খেলেন। তার পরেই খেলা বন্ধ।
এ দিকে, প্রথম দিনের মতো সোমবারের খেলাও বৃষ্টিতে ভেস্তে গেল। গত কাল ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ২১৭ রানে। যার জবাবে দিনের শেষে নিউজ়িল্যান্ডের রান দাঁড়ায় ১০১-২। ক্রিজে ছিলেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন এবং রস টেলর। এ দিন একটি বলও হতে পারেনি। এই ম্যাচে ‘রিজার্ভ ডে’ থাকার কারণে এখনও দু’দিন বাকি খেলা শেষ হতে। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ব্যাটসম্যান কেভিন পিটরসেন টুইট করেছেন, ‘‘বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ইংল্যান্ডে করা ঠিক হয়নি।’’