অপেক্ষা: ফাইনালে জমজমাট লড়াই দেখতে চান আসিফ। ফাইল চিত্র।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ ধাপের আগে যে তর্কটা ভীষণ ভাবে ক্রিকেট দুনিয়ায় উঠছে, তা হল— ক’টা ফাইনাল হলে শ্রেষ্ঠত্বের সেরা বিচার হতে পারে? ভারতের প্রধান কোচ রবি শাস্ত্রী থেকে ক্রিকেট কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকরের ভোট ‘বেস্ট অব থ্রি’ ফাইনালের দিকে। সেই মতে সায় দিচ্ছেন আসিফ ইকবালও। কিন্তু পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক আরও একটা শর্ত জুড়ে দিতে
চান এর সঙ্গে।
কী সেই শর্ত? আসিফ জানাচ্ছেন, তিনটে ফাইনাল হোক, ঠিক আছে। কিন্তু তিনটে ফাইনাল যেন তিন দেশে হয়!
কেন্ট থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে আনন্দবাজারকে আসিফ বলছিলেন, ‘‘দু’-আড়াই বছর লড়াই করে যারা টেস্ট ফাইনালে উঠেছে, তাদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার জায়গা নেই। আরও ভাল ব্যাপার হচ্ছে যে, নিরপেক্ষ দেশে ফাইনাল হচ্ছে। কিন্তু আমার মনে হয়, শুধু একটা দেশে একটা ফাইনালের চেয়েও শ্রেষ্ঠত্বের বিচার করার আরও একটা উপায় আছে।’’
কী সেই উপায়, তাও জানালেন আসিফ। প্রাক্তন পাক ব্যাটসম্যানের কথায়, ‘‘তিনটে দেশে তিনটে টেস্ট ফাইনাল হোক। যেমন, এ ক্ষেত্রে ভারতে একটা, নিউজ়িল্যান্ডে একটা এবং নিরপেক্ষ দেশে একটা। তা হলে ঘরের মাঠে খেলাও হল, বিপক্ষের মাঠে খেলাও হল আবার নিরপেক্ষ দেশেও খেলা হল। এ বার যারা দুটো টেস্ট জিতবে, তাদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। বোঝাই যাবে, সেই দলটা সব রকম পরিবেশের জন্য তৈরি।’’ নিরপেক্ষ কেন্দ্রে যে ম্যাচ হওয়া সম্ভব, তা বিশ্বকে প্রথম দেখিয়েছিলেন আসিফই। শারজায় একের পর এক সীমিত ওভারের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ইংল্যান্ডে ফাইনাল হওয়া নিয়ে আসিফের মন্তব্য, ‘‘ভারত-নিউজ়িল্যান্ড ফাইনাল হচ্ছে বলে নিরপেক্ষ দেশে ম্যাচটা হচ্ছে। কিন্তু ইংল্যান্ড ফাইনালে উঠলে কী হত? তখন তো আর নিরপেক্ষ দেশ থাকত না। ইংল্যান্ড ঘরের মাঠের সুবিধে পেয়ে যেত। যে কারণে যদি তিন দেশে তিন ফাইনাল হয়, তা হলে আর কোনও দিক দিয়ে প্রশ্ন তোলার জায়গা থাকবে না।’’
নিরপেক্ষ কেন্দ্রে ভারত-নিউজ়িল্যান্ড দ্বৈরথে তিনি কোনও দেশকেই এগিয়ে রাখতে চান না। আসিফের মন্তব্য, ‘‘নিউজ়িল্যান্ড হয়তো ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটো টেস্ট খেলার জন্য পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বাড়তি সময় পেয়েছে, কিন্তু ভারতের যা দল, তাতে ওরা যে কোনও চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারে।’’ দীর্ঘদিন ধরে ইংল্যান্ডের বাসিন্দা বলে আসিফ জানেন এখানকার আবহাওয়া কী রকম দ্রুত চরিত্র বদলায়। ম্যাচ আর পিচে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে আবহাওয়া? আসিফের জবাব, ‘‘ইংল্যান্ডের আবহাওয়ার মতো আর কিছু নিয়ে বোধ হয় এত আলোচনা হয় না। রোজ সকালে উঠে আমরা গবেষণা করতে বসে যাই, আজ কী রকম থাকবে আবহাওয়া।’’ যোগ করেন, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে বেশ গরম আর শুকনো আবহাওয়া চলছে। ম্যাচের সময় কী রকম থাকবে, বলতে পারব না। তবে এখন যে রকম পরিস্থিতি, তাতে মনে হয়, সাউদাম্পটনে পিচটা একটু শুকনোই হবে।’’ যে কথা মাথায় রেখে ভারতীয় দলকে একটা পরামর্শ দিতে চান প্রাক্তন পাক অধিনায়ক। আসিফের মন্তব্য, ‘‘ভারতীয় দলে দু’জন ভাল স্পিনার আছে। আর অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাডেজা। ওরা আবার ভাল ব্যাটসম্যানও। যে কারণে আমার মনে হয়, ফাইনালে এই দুই স্পিনারকেই ভারতের খেলানো উচিত। তা হলে বোলিংয়ে বৈচিত্র বাড়বে, ব্যাটিংও শক্তিশালী হবে।’’
এই ফাইনালে নজর থাকবে বিশ্বের সেরা দুই ব্যাটসম্যানের উপরেও। ভারতের বিরাট কোহালি এবং নিউজ়িল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন। এই দ্বৈরথ নিয়ে আসিফ বলছেন, ‘‘এই যুগের দুই সেরা ব্যাটসম্যানের খেলা দেখার জন্য মুখিয়ে থাকব। তবে আমার মনে হয়, নিজেদের সাফল্যের চেয়েও ওরা চাইবে দল যেন জেতে।’’ আর এই ঐতিহাসিক ফাইনাল নিয়ে আপনার কী ভবিষ্যদ্বাণী? একটু হেসে প্রাক্তন পাক তারকার জবাব, ‘‘ওহ, যদি এ রকম ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা থাকত! আমার কাছে ম্যাচ ৫০-৫০।’’