পরামর্শ: শিক্ষক ধোনি, ছাত্র বিজয়। সোমবার। এএফপি
শুধু অভাবনীয় ভাবে বিশ্বকাপের দলে ঢুকে পড়াই নয়। বিজয় শঙ্কর প্রবল ভাবে উঠে এসেছেন বিরাট কোহালিদের দলের প্রথম একাদশের আলোচনাতেও। সাউদাম্পটনে বুধবার ভারতের প্রথম ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। যারা প্রথম দু’টি ম্যাচে হেরে বসে আছে।
তবে ভারতীয় শিবিরের চোখ এখন বেশি করে আবহাওয়ার দিকে। সোমবারেই বৃষ্টি হয়েছে এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখতে গিয়ে ভারতীয় দলের মস্তিষ্করা খোঁজ পেয়েছেন, বুধবার ম্যাচের দিনেও বৃষ্টি হতে পারে। আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। হাওয়া অফিসের তথ্য মাথায় রেখে তাই দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে বিজয় শঙ্করকে তৈরি রাখা হচ্ছে।
এমনিতে প্রথম একাদশের ছাঁচ তৈরি। সব চেয়ে তর্কাতর্কির জায়গা নিয়েই প্রথম ম্যাচের আগে উদ্বেগ কম। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পরে চার নম্বর জায়গা আপাতত কে এল রাহুলের। সাউদাম্পটনে শুরুতে শিখর ধওয়ন এবং রোহিত শর্মা, তিনে অধিনায়ক বিরাট কোহালি। চারে যাবেন রাহুল। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পুরনো ব্যাটিংকে মনে করানো ফর্ম দলকে বিশেষ ভাবে উৎসাহী করে তুলেছে। ধোনি তাই যাবেন পাঁচ নম্বরে।
আবহাওয়ার কারণে লড়াই এখন কেদার যাদবের সঙ্গে বিজয় শঙ্করের। ঘন-ঘন চোট পাওয়ার প্রবণতা আছে কেদারের। আইপিএলের সময় আহত হয়ে বিশ্বকাপে যাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। কেদার এখন পুরোপুরি সেরে উঠলেও যদি মেঘলা আবহাওয়া থাকে, তা হলে তাঁকে বাইরে বসতে হতে পারে। সেক্ষেত্রে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান বিসর্জন গিয়ে বাড়তি অলরাউন্ডার খেলাতে পারেন কোহালিরা।
নিউজ়িল্যান্ডে শঙ্করের শৃঙ্খলাপরায়ণ ব্যাটিং ভারতীয় দল পরিচালন সমিতিকে খুব প্রভাবিত করেছিল। তাঁর বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ার কারণ এই দায়িত্বশীল ব্যাটিং। ভারতীয় দল মনে করছে, সাউদাম্পটনের আবহাওয়ায় তাঁর ব্যাটিং তো কাজে লাগতেই পারে, আবার মেঘলা আকাশ থাকলে তার ফায়দা তুলতে পারেন মিডিয়াম পেস সুইং বোলিংয়েও। কারও কারও অবশ্য মনে হচ্ছে, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই শঙ্করকে নামিয়ে দেওয়া তাঁর উপরে চাপ তৈরি করা হবে না তো? এমনিতেই গোটা আইপিএলে তিনি দারুণ কিছু করেননি। প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যর্থ। হার্দিক পাণ্ড্যর মতো তিনি দারুণ প্রতিভাবান বলেও কেউ কখনও দাবি করেনি। বরং বিস্ময় এবং তর্কই চলছে ক্রিকেটমহলে তাঁর নির্বাচনকে ঘিরে। সন্দেহ নেই, সাউদাম্পটনে যদি অভিষেক ঘটে শঙ্করের, সব নজর তাঁর দিকেই থাকবে।
আর একটি কঠিন সিদ্ধান্তও নিতে হতে পারে ভারতীয় শিবিরকে। দুই পেসার খেলানো হলে এত দিন মনে করা হচ্ছিল, যশপ্রীত বুমরা এবং মহম্মদ শামি খেলবেন। কিন্তু মেঘলা আবহাওয়া থাকলে ভারতের সেরা সুইং বোলার ভুবনেশ্বর কুমারকে বাইরে রাখাও কঠিন। সেক্ষেত্রে কি কুল-চা জুটি ভেঙে ফেলা হবে? এক জন রিস্টস্পিনার কমিয়ে ভুবিকে খেলানো হবে? সোমবারের বৃষ্টি এবং নেট সেশনের পরে এই প্রশ্নও ঘুরতে শুরু করেছে।
এক স্পিনারে খেললে কে বসবেন, সেই কঠিন সিদ্ধান্তও নিতে হবে। কারও কারও মনে হচ্ছে, কুলদীপ যাদব এবং মেঘলা আকাশ— ইতিহাসটা মোটেও ভাল নয়। লর্ডস টেস্টে মেঘলা আবহাওয়ায় নেমে ব্যর্থ হওয়ার পরে কেরিয়ারই প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়েছিল। ভারতীয় দল পরিচালন সমিতিও জোরাল সমালোচনার মুখে পড়েছিল সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটলে কড়া মূল্য চোকাতে হতে পারে। কুলদীপ আইপিএলে দারুণ ফর্মে ছিলেন না। আবার দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানেরা স্পিনের বিরুদ্ধে দুর্বল। কুলদীপের রহস্যময় চায়নাম্যান বোলিং বা যুজবেন্দ্র চহালের লেগস্পিন-গুগলিতে তাঁরা স্বচ্ছন্দে থাকবেন বলে মনে হয় না। বিশেষজ্ঞদের পরিষ্কার মত, ডুপ্লেসিদের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে অন্তত ‘জয় বাবা কুল-চা’ বলে নেমে পড়ো! তা সে আকাশ যেমনই থাকুক।