সুইং সুলতান

ধোনি শেষ হয়নি, তবে স্বাগত ঋষভ

অনেক বেশি করে আক্রমণাত্মক, ইতিবাচক মানসিকতার ক্রিকেটার ভারত পাচ্ছে কারণ আইপিএলের মতো মঞ্চে এই সব তরুণ তাদের স্কিল দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে।

Advertisement

ওয়াসিম আক্রম

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ০৫:২৮
Share:

দুই-প্রজন্ম: যেন ব্যাটন বদলের ইঙ্গিত। মাঠ ছেড়ে বেরোচ্ছেন ধোনি। কিপিং গ্লাভস হাতে তুলে নিলেন ঋষভ। এপি

মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে নিয়ে নানা পণ্ডিতের নানা বক্তব্য কানে আসছে। কোনওটার সঙ্গেই একমত হতে পারছি না। আমি মনে করি, ধোনির এখনও অনেক কিছু দেওয়ার আছে ভারতীয় ক্রিকেটকে। এই বিশ্বকাপে ধোনির পারফরম্যান্স খারাপ কী করে বলা যেতে পারে? আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ওর ইনিংস নিয়ে এত সমালোচনা হল। কিন্তু কেউ কি ভেবে দেখেছে, ওই সময়ে ধোনি আউট হয়ে গেলে ভারত জেতার মতো স্কোরে পৌঁছতে পারত?

Advertisement

এর পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষের ওভারগুলোতে দুর্দান্ত ব্যাট করল। সেই হিসেব কষে খেলা ‘ফিনিশার’ ধোনি। সকলে তখন আবার প্রশংসায় ভরিয়ে দিল ওকে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফের সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হল ওকে। ক্রিকেটে একা কেউ জেতায় না, এক জনের দোষে কোনও দল হারে না। তাই মন্থর ব্যাটিং নিয়ে কথা উঠলেও একা ধোনিকে দায়ী করা ঠিক হবে না। আমার মনে হয়, ধোনির এখনও অনেক কিছু দেওয়ার আছে ভারতকে। হয়তো চলতি বিশ্বকাপেই ও আবার দলকে জিতিয়ে দেখাবে।

পাশাপাশি, এটাও বলতে চাই যে, ঋষভ পন্থকে দেখার জন্যও আমি ছটফট করছিলাম। বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকে পন্থকে নিয়ে কথা শুনছি। আইপিএলে ইতিমধ্যেই ঝড় তুলে দিয়েছে ও। আমি পন্থের টি-টোয়েন্টি খেলা দেখেছি। দুর্ধর্ষ সব স্ট্রোক রয়েছে হাতে। দুঃসাহসিক মানসিকতা। যে কোনও বোলারকে মাঠের বাইরে ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এ রকম উত্তেজক এক জন ক্রিকেটারের আবির্ভাবকে স্বাগত জানাবে যে কোনও ক্রিকেটপ্রেমী। একেবারেই আশ্চর্য হচ্ছি না পন্থকে নিয়ে এত কথাবার্তা হচ্ছে দেখে।

Advertisement

ভারতীয় ক্রিকেটে অনেক বদল এনে দিয়েছে আইপিএল। অনেক বেশি করে আক্রমণাত্মক, ইতিবাচক মানসিকতার ক্রিকেটার ভারত পাচ্ছে কারণ আইপিএলের মতো মঞ্চে এই সব তরুণ তাদের স্কিল দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে। হার্দিক পাণ্ড্য, ঋষভ পন্থের মতো দুর্ধর্ষ প্রতিভা বেরিয়ে আসছে সেই মঞ্চ থেকে। তবু বলব, ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট যে শুরুতে পন্থকে খেলাতে চাইছিল না, তার মধ্যে একটা যুক্তি ছিল। যতই জনতার দাবি হোক পন্থকে খেলাও, বিরাটেরা নিশ্চয়ই মাথায় রেখেছিল যে, ওর খুব বেশি ওয়ান ডে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে সোজাসুজি কোনও টিনএজারকে নামিয়ে দেওয়ার আগে যে কেউ দু’বার ভাববে। আর এজবাস্টনে পন্থ দেখিয়ে দিল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে আলোকিত করতেই ও এসেছে। আমার সব চেয়ে ভাল লাগল চাপের মুখেও ওর স্বাভাবিক খেলা চালিয়ে যাওয়ার সাহস। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সফল হতে গেলে যেমন স্কিল দরকার, তেমনই লাগবে ডাকাবুকো মানসিকতা। পন্থ দেখিয়ে দিল, পরিস্থিতির চাপে পড়ে ভয় পেয়ে খোলসে ঢুকে পড়ার ছেলে ও নয়।

তবে এই মুহূর্তে ভারতীয় দলের কাউকে দেখে যদি আমি সব চেয়ে খুশি থাকি, সে হচ্ছে মহম্মদ শামি। কলকাতা নাইট রাইডার্সে থাকার সময় শামির মধ্যে একটা নীরব প্রতিজ্ঞা দেখতে পেতাম। সেই সময় ইডেনে স্পিন-সহায়ক পিচ হত বলে ওকে খেলানো যেত না। কেকেআরের স্পিন বিভাগ বরাবরই ভাল ছিল। সুনীল নারাইন তখন সেরা ফর্মে। খেলার সুযোগ না পেলে সকলেই হতাশ হবে। শামিও হত। কিন্তু কখনও ভেঙে পড়তে দেখিনি ওকে। বরং সব সময় বলত, ‘‘ওয়াসিম ভাই, আমি খুব ছোট একটা শহর থেকে এসেছি। কলকাতায় এসে লিগ ক্রিকেট খেলেছি। আমি ভারতের হয়ে খেলতে চাই। আন্তর্জাতিক মঞ্চে সফল হতে চাই।’’ সফল হতে গেলে এ রকম জেদই তো দরকার হয়।

শুধু ক্রিকেট মাঠ নয়, সব জায়গাতেই প্রায় আমরা একসঙ্গে থাকতাম। কলকাতা নাইট রাইডার্সে বোলিং পরামর্শদাতা থাকার সময় ডিন্ডা, শামি, লক্ষ্মীরতন শুক্ল— বাংলার ছেলেদের সঙ্গে আমার খুব ভাল সময় কাটত। ছোট ভাইয়ের মতোই ওদের বরাবর দেখে এসেছি। কলকাতার কত রেস্তরাঁয় আমরা একসঙ্গে খেতে গিয়েছি। আর ডিনারের মাঝেই চলত আমাদের ক্রিকেট আড্ডা।

শামির সঙ্গে যখন কোনও রেস্তরাঁয় খেতে যেতাম, আমি মোটামুটি প্রস্তুত থাকতাম। নিশ্চয়ই একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যেতে হবে। ওয়াসিম ভাই, আউটসুইং করতে করতে কখন ইনকাটার মারব? ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা কী ভাবে বুঝব? ইয়র্কার মারার আগের বলগুলো কী রকম হবে? ওর প্রশ্ন যেন শেষই হতে চাইত না।

অনেক দেশের অনেক বোলারের সঙ্গেই আমি কাজ করেছি। অস্ট্রেলিয়ায় প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক। পাকিস্তান সুপার লিগের সময় মহম্মদ আমির ছিল আমাদের দলে। কিন্তু শামির মতো কাউকে এত খুঁটিয়ে প্রশ্ন করতে দেখিনি। ওর শেখার আগ্রহটা ছিল দেখার মতো। আমার মনে হয়, ফিটনেস নিয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে ও। ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যাও কাটিয়ে উঠতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছে। আর এ সবের প্রতিফলনই দেখা যাচ্ছে ওর বোলিংয়ে। আফগানিস্তান ম্যাচে হ্যাটট্রিক-সহ চার উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেও চার। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মঙ্গলবারের ম্যাচের আগে পর্যন্ত তিন ম্যাচে শামির দখলে ১৩ উইকেট। আশা করব, এর পর আর ওকে বাইরে বসে থাকতে হবে না। বিশ্বকাপে শামির আরও কিছু ম্যাজিক স্পেল দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

(৩৬০ কর্পোরেট রিলেশনস)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement