বিজয় শঙ্করের বিশ্বকাপ অভিষেক হতে পারে রবিবার।—ছবি এপি।
সচরাচর বড় ম্যাচের আগে যে রকম দেখা যায়, ম্যাঞ্চেস্টার তার চেয়ে অন্য রকম। একে তো দু’দেশের ক্রিকেট দ্বৈরথকে ঘিরে যুদ্ধের দামামা না বাজিয়ে শান্তির ডাক। তার উপর ভারতীয় ক্রিকেটারদের মোবাইল ঘাঁটা নিয়ে নতুন তথ্য পাওয়া গেল শনিবার। অনেকে নাকি বিশেষ আবহাওয়া অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন। ইংল্যান্ডে যে রকম বৃষ্টি খলনায়ক হয়ে দেখা দিয়েছে, তাতে প্রতিপক্ষ বোলারের চেয়ে আবহাওয়ার উপর নজরদারি রাখাটা সব চেয়ে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে কোহালিদের জন্য।
শনিবার সারা দিন ধরে বার বার সেই ‘ওয়েদার অ্যাপ’ ঝালিয়ে নেওয়া চলল। ম্যাচের মধ্যে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে, তবে একেবারে ভেস্তে দেওয়ার মতো ভারী বর্ষণ নাকি আসছে না। তা দেখেও যে কোহালিদের সংসারে খুব খুশির হাওয়া রয়েছে, বলা যাবে না। বরং চাপা আক্ষেপ আর অসন্তোষই রয়েছে যে, অস্ট্রেলিয়ার মতো হেভিওয়েট দলকে হারানোর পরে মাঠে নামারই সুযোগ পাওয়া গেল না। অর্থাৎ, স্মিথ-ওয়ার্নারদের হারিয়ে যে গতিটা পেয়ে গিয়েছিল টিম, তার ফায়দাই তোলা গেল না। বৃষ্টি রথের চাকা বসিয়ে দিল। আবার তা টেনে তুলে এগোতে হবে। আর সেই টেনে তোলার কাজ শুরু করতে হবে পাক ম্যাচ দিয়ে।
এমনিতে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের রেকর্ড শারজার ঠিক উল্টো। শারজায় একচেটিয়া জিতত পাকিস্তান, বিশ্বকাপে জেতে ভারত। মোট ছ’বার দেখা হয়েছে। ছ’বারই জিতেছে ভারত। কিন্তু কোহালির এই দল গত কালের ম্যাচের স্কোরবোর্ডই ফিরে দেখায় বিশ্বাস করে না, ২০১৫-র মোহালিতে ফ্ল্যাশব্যাকের তো কোনও সম্ভাবনাই নেই। কোহালিকে যত বার জিজ্ঞেস করা হল, ফাটা রেকর্ডের মতো বলে গেলেন, ‘‘এটা কোনও ব্যক্তি বনাম ব্যক্তির লড়াই নয়। দল বনাম দল। যারা দল হিসেবে ভাল খেলবে, তারা জিতবে। যেখানেই আমরা পাকিস্তানকে হারিয়েছি, দল হিসেবে ভাল খেলেছি। তাই জিতেছি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, অতীতের সাফল্য ধরে রবিবারের ম্যাচ এগোবে।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘তবে আমাদের মধ্যে একটা বিশ্বাস এসে গিয়েছে। যদি নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারি, যে কাউকে আমরা হারাতে পারি।’’ ভারত অধিনায়কের আর একটা মন্তব্য খুব সুপারহিট হল এ দিন। যখন টিভি চ্যানেলের এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন মহম্মদ আমিরের সঙ্গে তাঁর দ্বৈরথ নিয়ে। কোহালি বললেন, ‘‘আমি টিআরপি বাড়ানোর জন্য কিছু বলব না। ভাল বোলারদের সম্মান করা উচিত। রাবাডাকে নিয়েও একই কথা বলেছিলাম। তবে আবার বলছি, কোনও ব্যক্তিগত দ্বৈরথের উপর আমরা কেউ ফোকাস করছি না।’’
শিখর ধওয়নের চোট লাগার পর থেকে ভারতীয় শিবির ঘিরে সব চেয়ে বড় জল্পনা, কে নেবেন তাঁর জায়গা? ঋষভ পন্থকে উড়িয়ে আনা হলেও সরকারি ভাবে এখনও তিনি দলের অন্তর্ভুক্ত নন। টিমের সঙ্গে হোটেলে থাকতে পারবেন, প্র্যাক্টিস করতে পারবেন। তবে যতক্ষণ না ভারতীয় দল সরকারি ভাবে শিখরকে দল থেকে সরাচ্ছে আর পরিবর্ত হিসেবে ঋষভকে আনছে, তাঁকে অতিরিক্ত সদস্য হয়েই থাকতে হবে। পাক ম্যাচের আগে যদিও দেখেশুনে মনে হচ্ছে, বিজয় শঙ্করের বিশ্বকাপ অভিষেক হতে পারে রবিবার। কোহালির দলে এমনিতেই বিজয় শঙ্করকে নিয়ে খুব ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। নিউজ়িল্যান্ডে তাঁর শৃঙ্খলাপরায়ণ ব্যাটিং খুব নজর কেড়েছিল। ম্যাঞ্চেস্টারে স্যাঁতসেঁতে পিচ আর মেঘলা আবহাওয়া থাকলে তাঁর মিডিয়াম পেস বোলিংও কাজে আসতে পারে। শিখরের জায়গায় কে এল রাহুল ওপেন করবেন রোহিত শর্মার সঙ্গে। শঙ্করকে চারে পাঠানো হতে পারে। অথবা পরিস্থিতি অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের মতো হার্দিক পাণ্ড্যকে উপরে তোলা হতে পারে। এ দিন নেটে বেশ গুরুত্ব দিয়ে বিজয় শঙ্করকে ব্যাট করানো হল। আম্পায়ারের জায়গায় দাঁড়িয়ে জরিপ করতে থাকলেন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। ওই ছবিটা দেখে মনে হচ্ছিল, তামিলনাড়ুর অলরাউন্ডারের খেলার সম্ভাবনা যথেষ্ট উজ্জ্বল। প্রথম একাদশের নকশায় মহম্মদ শামিও উঠে আসতে পারেন যদি রবিবারও মেঘলা আবহাওয়া থাকে। তখন কুলদীপ যাদবকে বাইরে রাখার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে কোহালিদের। ভারত-পাক ক্রিকেটের ইতিহাস সম্পর্কে অবহিতদের কাছে অবাকই লাগবে দেখে যে, শামির মতো ফাস্ট বোলারকে দলে জায়গা পাওয়ার জন্য লড়তে হচ্ছে। একটা সময় ছিল যখন পাকিস্তান সব ফাস্ট বোলার তৈরি করত আর ভারতে হত ব্যাটসম্যান। বলাই হতো, যদি ভারত-পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত না হত, ভারতের ব্যাটসম্যান আর পাকিস্তানের বোলারদের এক করা যেত, তা হলে বিশ্বের সেরা দল তারাই হত। যুগ পাল্টেছে। ভারতের এখন নিজেদের হাতেই দারুণ সব পেসার এসে গিয়েছে। তাই শামির মতো ফাস্ট বোলার হাতে পেয়েও রিজার্ভ বেঞ্চে রাখার বিলাসিতা দেখাতে পারেন কোহালিরা।
কাদের ব্যাটিং ভাল? ভারতের।
কাদের বোলিং ভাল? ভারতের।
কাদের ফিল্ডিং ভাল? ভারতের।
কারা বেশি ফিট? ভারত।
কাগজে-কলমে সম্ভবত এত শক্তিশালী ভারতের সামনে কখনও পড়েনি পাকিস্তান। কিন্তু ক্রিকেট সব সময় কাগজে-কলমের বিচারে হলে কপিলের দৈত্যরা তিরাশির বিশ্বকাপ জিততেন কী করে? বলেই তো যে, ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা! বড় জোর বলা যেতে পারে, কোহালিরা ফেভারিট। আমিরদের কাছে হারলে অঘটন হবে!