থ্রিলার। চুম্বকে এটাই শনিবারের ভারত আফগানিস্তান ম্যাচ। যে ম্যাচের ভাগ্য দাঁড়িপাল্লার মতো একবার ভারতের দিকে ঝুঁকেছে, তো একবার আফগানদের দিকে। দুর্দান্ত বোলিংয়ের সৌজন্যে ম্যাচ জিতলেও সাউদ্যাম্পটন থেকে অনেক শিক্ষা পেল ভারত। দেখে নেওয়া যাক আফগান ম্যাচ চোখে আঙুল দিলে ভারতের কোন ভুলগুলো ধরিয়ে দিল।
লোকেশ রাহুল: লোকেশ রাহুল যে এখনও ‘ধওয়ান’ হয়ে উঠতে পারেননি তার প্রমাণ মিলল এ দিন। রোহিত শর্মা আউট হওয়ার পর প্রয়োজন ছিল একটা ভাল পার্টনারশিপের। কিন্তু অবিবেচকের মতো রিভার্স সুইপ করে আউট হয়ে দলকে এবং নিজেকে বিপদে ফেললেন তিনি। রাহুলকে মনে রাখতে হবে রিজার্ভ বেঞ্চে ঋষভ পন্থ শুধু সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন।
বিজয় শঙ্কর: ব্যাট হাতে দলকে নির্ভরতা দিতে ব্যর্থ হলেন বিজয় শঙ্করও। রাহুল আউট হতে দল তাঁকে মহা গুরুত্বপূর্ণ চার নম্বরে নামিয়েছিল। কিন্তু তাঁর ৪১ বলে মাত্র ২৯ রান ভরসা দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। উল্টোদিকে বিরাট যখন দুর্দান্ত ব্যাটিং করছেন, সেইসময় শঙ্করের উচিত ছিল অ্যাঙ্করের ভূমিকা পালন করা। অযথা আক্রমণাত্মক হয়ে উইকেট হারালেন তিনি।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি: সচরাচর বিদ্রুপ সইতে হয় না ধোনিকে। কিন্তু গতকাল ব্যতিক্রম ঘটল। ৫২ বলে তাঁর ২৮ রান নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন সমালোচকরা। তবে তার ঢের আগে ধোনিকে নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায় গ্যালারিতে হাজির দর্শকদেরই। আফগান বোলারদের বিরুদ্ধে ধোনি খুচরো রান নিতেও পারছেন না দেখে, অধৈর্য হয়ে পড়েন তাঁরা। চেঁচিয়ে তার জানান দিতেও দেখা যায় কয়েকজনকে।
ভারত যখন ৩ উইকেটে ১২২, ক্রিজে আসেন ধোনি। সেইসময় তাঁকে নিয়ে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। সবাই অপেক্ষা করছেন হেলিকপ্টার শটের জন্য। কিন্তু তিনি যে বড় স্ট্রোকই নিতে পারবেন না, স্পিনারদের মারার সাহসই দেখাবেন না, এ কথা কেউই ভাবতে পারেননি। তাই তাঁর ৫৩.৮৪ স্ট্রাইক রেটের কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না কেউই। তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষ উড়ে এসেছে, ‘‘ওয়ান ডে ম্যাচও টেস্টের মতো খেললে, আর টেস্ট ম্যাচের দরকারই বা কী?’’
কেদার যাদব: একই কথা প্রযোজ্য কেদার যাদবের ক্ষেত্রে। ৬৮ বলে ৫২ রান করে ক্যাচ আউট হন তিনি। তবে অর্ধশতক করলেও, শুরু থেকেই খুব একটা সপ্রতিভ দেখায়নি তাঁকে। ধোনির সঙ্গে মিলে আফগান স্পিনারদের কোনওভাবেই সামাল দিতে পারেননি। দু’জনে মিলে ১৪ ওভারে দলের জন্য মাত্র ৫৭ রান করেন।
হার্দিক পাণ্ড্য: হার্দিক পাণ্ড্য আসায় ভারতীয় দলের চেহারাই বদলে গিয়েছে বলে গতকালের ম্যাচের পর মন্তব্য করেছেন ওয়াসিম আক্রম। তাঁর দাবি খুব একটা ভুল নয়। কারণ বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে রয়েছেন হার্দিক। কিন্তু অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক না হওয়াই যে ভাল, তা বুঝতে হবে হার্দিককে। বল হাতে ১০ ওভারে ৫১ রান দিয়েছেন তিনি। উইকেট নিয়েছেন দু’টি। কিন্তু ব্যাট হাতে দলকে কোনওরকম সাহায্যই করতে পারেননি। ৯ বলে ৭ রান করে আউট হয়ে যান।
দল নির্বাচন ভুল: ব্যাট হাতে দলকে ভরসা জোগাতে ব্যর্থ হয়েছেন বিজয় শঙ্কর। কেদার যাদব যদিও বা হাফ সেঞ্চুরি করেন, কিন্তু দু’জনের কাউকেই বল করতে দেওয়া হয়নি। আর সেখানেই সবচেয়ে প্রশ্নটা উঠে আসছে। ওই দু’জনকে যখন বল করতেই দেওয়া হল না, তাহলে ঋষভ পন্থরে মতো তরুণ প্রতিভাকে খেলার সুযোগ দেওয়া হল না কেন? পন্থের প্রতি এই উপেক্ষা নীতি চলতে থাকলে ক্যাপ্টেন কোহালির নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।
কুল-চা জুটি ব্যর্থ: শুধুমাত্র ইকনমিক্যাল বোলিং যে যথেষ্ট নয়, এ কথা বুঝতে হবে কুলদীপ যাদব এবং যুজবেন্দ্র চহালকে। গতকাল সময়মতো উইকেট নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। সে ক্ষেত্রে ভারতের এই দুই স্পিনারই ব্যর্থ হয়েছেন। চাহাল তাও দু’টি উইকেট পেয়েছেন, কিন্তু নিরাশ করেছেন কুলদীপ।
বিরাট কোহালি: ‘ক্যাপ্টেন কুল’ ধোনির থেকে একটা বিষয় শেখার আছে অধিনায়ক বিরাটের, আর তা হল ধৈর্য। শনিবার দু’-দু’বার আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তে মাঠের মধ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। গত কাল ক্রিস ব্রড ম্যাচ রেফারি ছিলেন। ভারতের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান বরাবরই একটু কড়া। তাঁর সামনেই মেজাজ হারান বিরাট। এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন তাঁর।