জাদুকর

সেমিফাইনালে এই সেঞ্চুরিকে দেড়শোয় বদলে ফেলুক রোহিত

রোহিত শর্মাকে এ বার বিশ্বকাপে যত দেখছি তত মুগ্ধ হচ্ছি। একদম পাল্টে গিয়েছে মুম্বইয়ের এই ছেলেটা।

Advertisement

এরাপল্লি প্রসন্ন

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৯ ০৪:৪৮
Share:

সেঞ্চুরির পর রোহিত শর্মা। মঙ্গলবার এজবাস্টনে। ছবি: এএফপি।

এই বিশ্বকাপের চার সেরা ক্রিকেটার বিরাট কোহালি, রোহিত শর্মা, যশপ্রীত বুমরা ও শাকিব আল হাসান। তারা ভারত বনাম বাংলাদেশ দ্বৈরথে মুখোমুখি! তাই মঙ্গলবার টস থেকেই টিভির সামনে বসে পড়েছিলাম।

Advertisement

আমার স্ত্রী বাঙালি। আমি নিজেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একজন আদ্যন্ত ভক্ত। গোটা বিশ্বে একমাত্র এই ম্যাচটা শুরুর আগেই দু’টো চমৎকার রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনার সুযোগ থাকে। তাই এই খেলাটা আমি সব সময়েই শুরু থেকে দেখি।

ম্যাচ শুরুর আগে দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত যদি মনে প্রফুল্লতা এনে দেয়, তা হলে ম্যাচ শেষে মনটা খুশিতে ভরিয়ে দিল বাংলাদেশকে ২৮ রানে হারিয়ে ভারতের সেমিফাইনালে চলে যাওয়া। শুরুতে ব্যাট করে ভারত নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভারে করেছিল ৩১৪-৯। জবাবে ২৮৬ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। এই নিয়ে টানা তিন বার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে গেল ভারত। যার মধ্যে একবার চ্যাম্পিয়ন। তাই বিরাটদের এই কৃতিত্বে গর্ব হওয়া স্বাভাবিক।

Advertisement

আমার মতে, মঙ্গলবার বার্মিংহামে ভারতের জয়ের নায়ক তিন জন। দুই ওপেনার কে এল রাহুল (৯২ বলে ৭৭ রান) ও রোহিত শর্মা (৯২ বলে ১০৪ রান)। আর বল হাতে যশপ্রীত বুমরা (৪-৫৫)।

রোহিত শর্মাকে এ বার বিশ্বকাপে যত দেখছি তত মুগ্ধ হচ্ছি। একদম পাল্টে গিয়েছে মুম্বইয়ের এই ছেলেটা। আগে ৫০-৬০ রান করে আত্মতুষ্ট হয়ে পড়ত। এখন কিন্তু ও তা করছে না। প্রথম ২০-৩০ ওভার ক্রিজে থাকার চেষ্টা করছে। আর তাতেই সাফল্য পাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, ইংল্যান্ডের পরে মঙ্গলবার এজবাস্টনে এই বিশ্বকাপে তার চতুর্থ শতরানও করে ফেলল ও। মানছি, রোহিতের ব্যক্তিগত ৯ রানের মাথায় বাংলাদেশের তামিম ইকবাল সহজ ক্যাচ ফেলেছে। কিন্তু রোহিত যদি তখনই আউট হয়ে যায়, তা হলে এজবাস্টনের এই ম্যাচে ৫০ ওভারে ভারত ৩১৪-৯ করতে পারত কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। একই সঙ্গে বলব ওই ক্যাচ ফেলায় শুরুতেই মানসিক ভাবে একটা ধাক্কা খেয়েছিল বাংলাদেশ। যেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি ওরা।

বার্মিংহামের এই মাঠেই রবিবার ভারত খেলেছে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এজবাস্টনের স্কোয়ার বাউন্ডারি ছোট। ওয়ান ডে ক্রিকেটে ওর ২৬তম সেঞ্চুরি করার মাঝে এই জায়গাটাকেই নিশানা বানিয়েছিল ও।

পিচে বল পড়ে মন্থর গতিতে আসছিল। সাদা বল পড়ে পুরনো হলে মারতে সমস্যা হবে। তাই অন্য দিনের মতো পরের দিকে নয়। প্রথম ওভার থেকেই বাংলাদেশের বোলারদের বিরুদ্ধে আক্রমণের রাস্তায়

হেঁটেছিল রোহিত।

শুরুতে ক্যাচ পড়া। তার পরে এই আগ্রাসী ব্যাটিং। এতেই বিভ্রান্ত হয়ে বাংলাদেশ বোলাররা শুরু থেকেই ওকে মারার জায়গা দিচ্ছিল। রোহিত কখনও মুস্তাফিজ়ুর, রুবেল, শাকিবদের বল তাড়া করেনি। শরীরের কাছে ব্যাট নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাট করে গিয়েছে। তবে এ দিনও শতরান করার পরেই ফিরে যায় ও। সেমিফাইনালে এই একশোগুলিকে দেড়শো করতে হবে ওকে। তা হলে আরও উপকৃত হবে ভারত।

অন্য দিকে, ভারতের অপর ওপেনার কে এল রাহুল ৯২ বলে ৭৭ রান করে গেল। ওর সময়জ্ঞান আর ফুটওয়ার্ক ছিল দেখার মতো। এই দু’টো বিষয় কাজে লাগিয়েই কভার ড্রাইভ, স্ট্রেট ড্রাইভ, পুল মেরে রানটাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। চার নম্বরে ব্যাট করতে নামা ঋষভ পন্থও ভালই করল। যখন বিশ্বকাপে ওর প্রথম অর্ধশতরান আসতে চলেছে, তখনই শাকিব আল হাসানের (১-৪১) বলে আউট হয়ে ফিরে যায় ও।

জিতলেও আমি এ দিনও বুঝে পাইনি ভারতের প্রথম একাদশ গঠন নিয়ে। দলে কেন দীনেশ কার্তিক? আমার মতে, দীনেশের জায়গায় খেলানো উচিত ছিল রবীন্দ্র জাডেজাকে। আর চহালের বদলে কুলদীপ যাদবকে রাখা উচিত ছিল। কুলদীপ ‘চায়নাম্যান’ বোলার। ওর গুগলির হদিশ ব্যাটসম্যানরা আজও ঠিকঠাক বুঝতে পারে না।

এ দিন দুর্দান্ত বল করল বাংলাদেশের মুস্তাফিজ়ুর রহমান। ৫৯ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট পেয়েছে। ও ধোনিকে বুদ্ধি করে বল করে গিয়েছে। ধোনির দুর্বলতার জায়গাগুলো ও দুর্দান্ত ভাবে কাজে লাগাল। ধোনি শরীর লক্ষ্য করে আসা বল মোকাবিলা করতে সমস্যায় পড়ে। মুস্তাফিজ় সেগুলোই করেছে। ফলে মারার জায়গা পায়নি ধোনি। কাটারটা অফস্টাম্পে ফেলায় ধোনি সিঙ্গলসের বেশি নিতে পারছিল না। এ ছাড়াও, স্লোয়ার বাউন্সার দিয়ে ধোনিকে শেষের দিকের ওভারে নিষ্প্রভ করে রেখেছিল।

সব শেষে, যশপ্রীত বুমরা ও হার্দিক পাণ্ড্য। ভারত আজ একজন স্পিনার কম নিয়ে খেলেও ওদের জন্যই ম্যাচটা বার করল। তার অন্যতম কারণ, বুমরার ইয়র্কার। আর হার্দিকের স্লোয়ার ও বলের গতির হেরফের বুঝতে পারেনি বাংলাদেশের সৌম্য, শাকিবরা। মনে হচ্ছে, ইংল্যান্ডের কাছে হারটা ভারতীয় শিবিরকে তাতিয়ে দিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement