দুই বাঁ হাতির টনটন জয়। সৌরভ ও শাকিব।
টনটনে সোমবার বিজয়গাথা লিখল বাংলাদেশ। শাকিব আল হাসান শাসন করে গেলেন ক্যারিবিয়ান বোলারদের। ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে ভেসে উঠল ২০ বছর আগে আর এক বাঁ হাতি বাঙালির রূপকথা গড়ার দিনটা।
১৯৯৯ বিশ্বকাপে টনটনেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মহাকাব্যিক এক ইনিংস খেলেছিলেন। সৌরভ ও রাহুল দ্রাবিড়ের ৩১৮ রানের পার্টনারশিপ এখন রেকর্ড বইয়ের পাতায় জায়গা পেয়েছে। সৌরভের সেই দুরন্ত ইনিংস ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে এখনও টাটকা। চলতি বিশ্বকাপে সৌরভের স্মৃতি জড়িত সেই টনটনেই শাকিব খেললেন অতিমানবিক এক ইনিংস। ৩২১ রান তোলার পরেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দেখল এই রান যথেষ্ট নয়। লিটন দাসের সঙ্গে শাকিব জোড়েন ১৮৯ রান। বিশ্বসেরা বাঁ হাতি অলরাউন্ডার শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে যান ১২৪ রানে। ম্যাচ জিততে আর সমস্যা হয়নি বাংলাদেশের।
২০ বছর আগের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সৌরভের ব্যাট কথা বলেছিল। বেহালার ছেলের ব্যাট ভুলিয়ে দিয়েছিল ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার কাছে হারের লজ্জা। ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার কাছে হারের সেই কালো দিনের কথা কেউ কি ভুলতে পারে?
আরও পড়ুন: শাকিবই কি সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার? দেখে নিন রেকর্ড
আরও পড়ুন: কোন কোন অস্ত্রে গেলদের বধ করলেন শাকিবরা?
দর্শক আসনে বসে দেশকে হারতে দেখেছিলেন সৌরভ। সব ঠিকঠাক থাকলে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সৌরভও হয়তো শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খেলতে নামতেন সেমিফাইনালে। কিন্তু ক্রিকেট দেবতা তাঁর জন্য অন্য চিত্রনাট্য হয়তো লিখে রেখেছিলেন। তিন বছর বাদে টনটেনর মাঠে সৌরভ ইডেনের সেই হারের জ্বালা মেটান। চামিন্ডা ভাস, মুরলী, জয়সূর্যদের মাঠের যত্রতত্র ছুড়ে ফেলে ১৮৩ রানের দুরন্ত এক ইনিংস খেলেন। সে বারের বিশ্বকাপে কপিল দেব নিখাঞ্জের অপরাজিত ১৭৫ রানও টপকে গিয়েছিলেন সৌরভ।
শাকিবও হয়তো অনেক যন্ত্রণার জবাব দিলেন টনটনের মাঠে। বিশ্বকাপের আগে আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ দলের হয়ে বেশি ম্যাচ খেলতে পারেননি বাংলাদেশের তারকা অলরাউন্ডার। ভরা আইপিএলের মাঝেই তাঁকে ফিরে আসতে হয় দেশের মাটিতে। তা ছাড়া বিশ্বকাপের বল গড়ানোর আগে নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাকালাম ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, বাংলাদেশ মাত্র একটা ম্যাচ জিতবে। অত্যন্ত অসম্মানিত হয়ে খেলতে নেমেছিলেন বাংলাদেশের টাইগাররা। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকেই ফুল ফোটাচ্ছেন শাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে মোক্ষম সময়ে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ পার্টনারশিপ গড়েন। প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে রেকর্ড রান গড়ে ম্যাচটা জিতেছিল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শাকিব ৬৪ রানের ইনিংস খেলেও দেশকে বাঁচাতে পারেননি সে যাত্রায়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শাকিবের ব্যাট থেকে আসে ১২১ রান। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচ বৃষ্টির জন্য ভেস্তে যায়। নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জয়টা খুবই দরকার ছিল। ৩২১ রানের বিশাল স্কোর ওয়েস্ট ইন্ডিজ করলেও শাকিবের দাপটে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। আর এই দাপটই ফিরিয়ে দিল ২০ বছর আগের স্মৃতি-সৌরভকে।