ছবি এএফপি।
ভারত যদি পাল্টে যাওয়া ভারত হয়, পাকিস্তান তা হলে সেই পুরনো পাকিস্তান। ম্যাঞ্চেস্টারে সেই ছবিই উঠে এল।
হারের পরে পাক অধিনায়ক সরফরাজ় আহমেদকে নিয়ে তীব্র তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। তাঁর ক্রিকেটীয় সিদ্ধান্ত এবং অধিনায়ক হিসেবে দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠছেই। সঙ্গে যথেষ্ট সুখি সংসার তিনি রাখতে পারছেন কি না, তা নিয়েও কথা তুলছেন অনেকে।
এ দিন ম্যাচ হারার পরে সরফরাজ় যে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন, তাকে ভারতে পুরনো টিভি প্রোগ্রামের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যা এক সময় খুব ঝড় তুলেছিল। ‘ম্যাচ কা মুজরিম’। দেখে সে রকমই মনে হচ্ছিল পাক অধিনায়ককে। তাঁর নিজের দেশের এক সাংবাদিক সরাসরি মুখের উপর প্রশ্ন করলেন, আপনি কি নিজের ফিটনেস এবং দক্ষতা ঠিক আছে বলে মনে করেন? সরফরাজ় প্রথমে হকচকিয়ে গেলেন মনে হল। সবে বুমরাদের বাউন্সার খেলে উঠতে না উঠতেই নিজের দেশের মিডিয়ার দিক থেকে বাউন্সার। কোনওক্রমে বললেন, ‘‘আমার কথা জিজ্ঞেস করছেন? আমার ফিটনেস ঠিকই আছে বলে আমি মনে করি।’’
সকালে ম্যাচ শুরুর আগে থেকে পাক সংবাদমাধ্যমে সব চেয়ে বেশি করে চলছিল ইমরান খানের টুইট। যেখানে পাক প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁদের দেশের একমাত্র বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক এখনকার অধিনায়ককে বলছেন, ‘‘টস জিতে ব্যাট করো।’’ সরফরাজ একা ইমরানের কথা না শোনার মতো দুঃসাহস দেখাবেন, কল্পনা করা কঠিন। কারও কারও ব্যাখ্যা, সিদ্ধান্তের পিছনে বিদেশি কোচ মিকি আর্থারের হাত থাকতে পারে। ব্যাখ্যা যা-ই হোক, দেখা যাচ্ছে ইমরান ঠিকই পরামর্শ দিয়েছিলেন। পাক মিডিয়া তাঁকে এটা নিয়েও প্রশ্নবাণ ছুড়ল। সরফরাজ় আপ্রাণ চেষ্টা করলেন নিজেদের সিদ্ধান্তকে আড়াল করার। ‘‘পিচে ভিজে ভাব ছিল। গত দু’দিন ধরে এখানে বৃষ্টি হয়েছে। কোহালিও তো টসের সময় বলল, ও ফিল্ডিংই করত। ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পরে ফলাফল দেখে এ সব বলা যায়।’’
আর এক জন জানতে চাইলেন, আপনার দল নির্বাচন ঠিক ছিল বলে মনে করেন? সরফরাজ়ের জবাব, ‘‘যেটা সেরা কম্বিনেশন মনে হয়েছিল, সেটাই আমরা খেলিয়েছি। হয়তো আজ কাজ করল না।’’ তাতেও রেহাই নেই। এ বার আরও সরাসরি প্রশ্ন গেল, আপনাদের ড্রেসিংরুমে না কি প্রচুর গোলমাল চলছে। দুই সিনিয়র ক্রিকেটার শোয়েব মালিক এবং মহম্মদ হাফিজের সঙ্গে আপনার বনিবনা হচ্ছে না। ওদের দিয়ে আপনি বলই করাচ্ছেন না। কী বলবেন? সরফরাজ়কে দেখে মনে হল আবার বাউন্সার উড়ে আসার মুখে ডাক করার চেষ্টা করছেন। বললেন, ‘‘এ সব আপনাদের কাহিনি। আমাদের ড্রেসিংরুমে সব ঠিকই আছে। হাফিজ় আর মালিককে দিয়ে বেশি বল করানো হয়নি কারণ আমরা পাঁচ বিশেষজ্ঞ বোলারে খেলছিলাম। ভারতের দু’জন সেট ব্যাটসম্যান খেলছিল। তাই পার্টটাইম বোলিংয়ের দিকে যাইনি।’’
বললেন বটে তবে শোনার জন্য তাঁর দেশে খুব বেশি লোক লাইনে দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে হয় না। বরাবরই যে অঘোষিত স্লোগান, আর যা-ই করো এই ম্যাচটা হেরো না। আক্রম, ইউনিসদের মতো মহাতারকারা বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হেরে দেশে ফিরতে পারেননি। বাইরে বাইরে ঘুরতে হয়েছে অনেক দিন। তিনি সরফরাজ় আহমেদ— অনেক কম ওজনদার নাম এবং ম্যাঞ্চেস্টারে ০-৭ করলেন। তাতে যতই রোহিত শর্মার রান আউটের সহজ সুযোগ নষ্টের হতাশা থাকুক, ভিতু ভিতু মন নিয়ে টস জিতে ফিল্ডিং করার ছবি রয়েছে।
ভারত-পাক ম্যাচের এত কালের রীতি মেনে আগামী কয়েক দিনে এই ছবিই না বারবার তাড়া করতে থাকে পরাভূত পাক অধিনায়ককে।