আশা জাগিয়েও ম্যাচ জেতাতে পারলেন না সইফুদ্দিন। ছবি: এপি।
ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ হেরে চলতি বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল বাংলাদেশ। ক্রিকেটবিশ্ব মুগ্ধ টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে ‘টাইগার’দের লড়াই দেখে। ভারতের ৩১৫ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে পর পর উইকেট হারিয়ে একসময়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। ৩৩ ওভারের মাথায় বঙ্গ ব্রিগেডের শেষ ভরসা শাকিব আল হাসানও যখন দীনেশ কার্তিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান, তখন অতি বড় বাংলাদেশী সমর্থকও ভাবতে পারেননি ম্যাচটা বের করতে পারবেন মাশরাফিরা। বুমরা, ভুবির আগুনে বোলিংয়ের সামনে সৌম্য,তামিম,মুশফিকুররা আগেই আত্মসমর্পণ করেছেন। আশা জাগিয়েও ৬৬ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন শাকিব।
৭ ম্যাচে ১ উইকেট, ব্যাট হাতে ১৯ রান, শুধুমাত্র অধিনায়ক বলেই কি দলে মোর্তাজা?
কিন্তু, ক্রিজে সাত নম্বরে ব্যাট করতে নামা ২২ বছর বয়সী অনামী সইফুদ্দিন হয়তো অন্য কিছু ভেবেছিলেন। ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচ তখন ধীরে ধীরে বেরিয়ে যাচ্ছে। বল কমে গিয়ে লক্ষ্য ক্রমশই অসম্ভব হয়ে উঠছে। ঠিক তখনই খোলস ছেড়ে বেরোন সইফুদ্দিন। সাব্বির রহমানকে সঙ্গী করে পাল্টা মার দিতে শুরু করেন তিনি। কুঁকড়ে না থেকে সইফুদ্দিন সাহসী ব্যাটিং শুরু করেন। এরকম সাহসী ব্যাটিং দেখতেই তো সবাই পছন্দ করেন। বুমরা,ভুবি, শামি কিংবা চহাল কাউকেই রেয়াত করেনি সইফুদ্দিনের ব্যাট। তাঁর ব্যাট কথা বলতে শুরু করায় নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বাংলাদেশ। অসম্ভবকে যদি সম্ভব করা যায়! ভারতের আগ্রাসন দেখে গ্যালারিতে ঝিমিয়ে থাকা লাল-সবুজ সমর্থকরা ফের জেগে ওঠেন।এর আগে কেরিয়ারে তাঁর সর্বাধিক রান ছিল ৪১, ব্যাট হাতে কোনও সময়েই সফল হননি তিনি। সেই সইফুদ্দিনই যেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে দেখা দেন এজবাস্টনে। শাকিব যখন ফিরে গিয়েছিলেন, তখন বাংলাদেশের রান ১৭৯। সাব্বির রহমান এবং সইফুদ্দিনহাল ছাড়েননি। মরিয়া লড়াই করে জুটিতে ৬৬ রান জোড়েন। ৪৩তম ওভারের শুরুতেই বুমরার বল ফিরিয়ে দেয় সাব্বির রহমানকে। তবুও থেমে যাননি সইফুদ্দিন।
ম্যাচ জিততে বাংলাদেশের তখন ১৮ বলে বাকি আর মাত্র ৩৬ রান। এখনকার দিনের ক্রিকেটে এই রান খুব সহজেই তোলা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য অন্য কোনও চিত্রনাট্য হয়তো লেখা হয়ে গিয়েছিল আগেই। ক্রিজের অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা সইফুদ্দিনকে দেখতে হল, বুমরার বলে একে একে ফিরছেন তাঁর সতীর্থরা। বুমরার বিষাক্ত ইয়র্কারে রুবেল আর মুস্তাফিজুরের উইকেট মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে দেখার পরে সইফুদ্দিনের বুক হয়তো ভেঙে যাচ্ছিল। প্রত্যাশা জাগিয়েও সেই আশা আর পূরণ করতে পারেননি সইফুদ্দিন, ৩৮ বলে ৫১ রান করে নিজের সেরা ইনিংস খেলেও ম্যাচ বের করতে পারেননি তিনি।তাঁর সঙ্গেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ-স্বপ্ন শেষ এজবাস্টনেই। তাঁর লড়াই দেখে মুগ্ধ হয়েছে গোটা ক্রিকেটবিশ্ব। টুইট করে সইফুদ্দিনের ইনিংসের প্রশংসা করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
এর আগেও ক্রিকেট ইতিহাস সাক্ষী থেকেছে বহু স্মরণীয় লড়াইয়ের। সইফুদ্দিনের এই লড়াইও ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেবে, তা বলাই বাহুল্য।