সফল: লর্ডসে পাকিস্তান ইনিংসকে টানলেন হ্যারিস সোহেল।—ছবি রয়টার্স।
বিশ্বকাপে লর্ডসে প্রথম ম্যাচ। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি পাকিস্তান। ভারতের বিরুদ্ধে হারের পরের ম্যাচেই কাগিসো রাবাডা, লুনগি এনগিডিদের বিরুদ্ধে ৩০৮ রান করল পাকিস্তান। জবাবে ফ্যাফ ডুপ্লেসির দল আটকে যায় ২৫৯-৯ স্কোরে। পাকিস্তান জেতে ৪৯ রানে। ফলে অঙ্কের বিচারেও আর টিকে থাকল না দক্ষিণ আফ্রিকা।
ভারতের বিরুদ্ধে যে ভুল করেছিল পাকিস্তান, এ দিন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তা দেখা গেল না। শুরু থেকেই সাবধানে ইনিংস সাজিয়েছেন ইমাম-উল-হক ও ফখর জ়মান। বোলিংয়েও মহম্মদ আমির ও ওয়াহাব রিয়াজ়কে পরিণত দেখিয়েছে। প্রথম বলেই হাসিম আমলাকে ফিরিয়ে আমির বুঝিয়ে দেন, তাঁর বল সুইং করতে শুরু করেছে। দুই উইকেট নেন আমির। তিন উইকেট শাদাব খান ও ওয়াহাবের। কিন্তু ফিল্ডিং এখনও শোধরাতে পারেনি সরফরাজ়ের দল। অধিনায়ক নিজেই দু’টি সহজ ক্যাচ ফস্কান। দু’টি ক্যাচ পড়ে আমিরের হাত থেকে। এই নিয়ে চলতি বিশ্বকাপে মোট ১৩টি ক্যাচ ফেলল পাকিস্তান!
ব্যাটিংয়ে যদিও নিজেদের শুধরে নেমেছিলেন ইমাম ও ফখর জ়মান। ইমাম এক দিক ধরেছিলেন। অন্য দিকে আক্রমণ করছিলেন ফখর। কিন্তু উইকেটে থিতু হওয়ার পরেই ফিরে যান দু’জনে। ৪৪ রান করতে ইমাম নেন ৫৮ বল। সমান রান করতে ৫০ বল খেলেন ফখর।
পরপর দু’টি উইকেট হারিয়ে ফের চাপের মধ্যে পড়ে পাকিস্তানের মিডল অর্ডার। কিন্তু বাবর আজ়ম ও হ্যারিস সোহেল চাপের মুখ থেকে দলকে ফিরিয়ে আনেন। রবিবার শোয়েব মালিকের পরিবর্তে দলে আসেন হ্যারিস। তাঁর অবদান ৫৯ বলে ৮৯ রান। ৯টি চার ও তিনটি ছয়ের সৌজন্যে দুরন্ত ইনিংস উপহার দেন ক্রিকেটবিশ্বকে। তাঁকে যোগ্য সহায়তা দেন বাবর। ৮০ বলে ৬৯ রান করে। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়ার কাজ করলেও রান বাড়ানোর সময়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান বাবর। না হলে এই রান আরও বাড়তে পারত।
মেঘলা আবহাওয়ায় রাবাডা, এনগিডিদের সুইং থামাল হ্যারিসের আগ্রাসী ব্যাটিং। তাঁকে দেখে মনেই হয়নি, পিচ পেসারদের সাহায্য করছিল। অদ্ভুত স্টান্সে দাঁড়িয়ে উইকেটের আড়াআড়ি একের পর এক শট নিয়ে গেলেন হ্যারিস। ম্যাচ শেষে নায়ক বলেন, ‘‘দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বাবরের সঙ্গে বড় জুটি গড়ার। সেটাই চেষ্টা করেছি। বাবরের ক্রিজে থাকা প্রয়োজন ছিল। তাই আমি স্কোরবোর্ড সচল রাখার চেষ্টা করি। উইকেট অতটা সহজ ছিল না। তবুও যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছি।’’
ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের মিডল অর্ডারই সব চেয়ে সমস্যায় পড়েছিল। শোয়েব মালিক ও মহম্মদ হাফিজ় ফিরে গিয়েছিলেন পরপর দু’টি ডেলিভারিতে। এ দিন কিন্তু মিডল অর্ডারের জন্যই বড় রান করল পাকিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হারলে বিশ্বকাপের শেষ চারের জন্য লড়াই করার আর কিছু থাকত না। সরফরাজ় আহমেদকে অপেক্ষা করতে হত অন্যদের পরাজয়ের জন্য। তিন বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও পাকিস্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করে দিয়েছিল ক্রিকেটবিশ্ব। কিন্তু টানা ম্যাচ জিতে ও ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পাকিস্তান। ভুল প্রমাণিত করেছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের। এ বারও হয়তো সেই স্বপ্নই দেখতে শুরু করেছেন সরফরাজ়।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়েও জ্বলে উঠলেন এক পাকিস্তান বংশোদ্ভূত বোলার। তিনি ইমরান তাহির। ১০ ওভার বল করে ৪১ রান দিয়ে তুলে নেন দুই উইকেট। এনগিডি তিন উইকেট পেলেও তাহিরকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ইমামকে যে ক্যাচ নিয়ে তিনি ফিরিয়েছেন তা বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা। নিজের বলেই ডান দিকে ঝাঁপিয়ে এক হাতে তালুবন্দি করেন ইমামকে।
ম্যাচ জিতে পাক অধিনায়ক সরফরাজ় আহমেদ বলেন, ‘‘দলগত প্রয়াসেই জয় পেয়েছি। শুরুতেই প্রশংসা করব ওপেনারদের। মিডল অর্ডারের জন্য আদর্শ পরিস্থিতি তৈরি করেছে ওরা।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘বাবরের থেকে এ ধরনের ইনিংসই আশা করি। ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বরে ওকে ছাড়া কারও কথা ভাবতেই পারি না। তবে হ্যারিস ভাল না খেললে ফের ব্যাটিংয়ে সমস্যা হতে পারত। ওর দক্ষতার উপরে আস্থা রেখেছে দল। তাই সুযোগ পেয়েই তার সদ্ব্যবহার করেছে।’’
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হেরে পাকাপাকি ভাবে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেল ফ্যাফ ডুপ্লেসির দল। ম্যাচ শেষে হতাশ অধিনায়ক বলে গেলেন, ‘‘এক দিনও দেখলাম না ওপেনারেরা ভাল শুরু করল। প্রত্যেক ম্যাচেই শুরুতে উইকেট হারিয়েছি। একজনও তাদের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি।’’