প্রার্থনা: দু’দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হোক, চান আসিফ। ফাইল চিত্র
ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে রবিবার ভারত-পাকিস্তান লড়াই। বিশ্বকাপের যে ম্যাচ নিয়ে উপমহাদেশে আগ্রহ তুঙ্গে। উত্তেজনার অংশ হয়ে উঠছেন প্রাক্তনরা। কিন্তু একজন উত্তাপের ত্রিসীমানায় থাকতে চান না। তাঁকে কষ্ট দেয় দু’দেশের শীতল সম্পর্ক। এক দশকের বেশি লন্ডনবাসী পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক আসিফ ইকবাল চান, সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বড় ভূমিকা নিক ক্রিকেট। বিশ্বাস করেন, এ ব্যাপারে সদর্থক ভূমিকা নিতে পারেন ইমরান খান।
ক্রিকেট জীবনে ইমরানের অধিনায়ক ছিলেন আসিফ। তখনকার তরুণ ফাস্টবোলারের চরিত্রে স্থির সংকল্পের বিষয়টি টানত আসিফকে। ক্রিকেটের গণ্ডি ছাপিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে নিয়ে এতটাই ইতিবাচক ভাবেন আসিফ যে, তাঁর বিশ্বাস এ বার ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উন্নতি হবে।
আসিফের বয়স ৭৬। তাঁর নেতৃত্বে বহু ম্যাচ খেলেছেন ইমরান। যে ভাবে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকতেন প্রাক্তন পাক অলরাউন্ডার তা ভেবে আসিফ অবাক হন। সংবাদসংস্থাকে বলেছেন, ‘‘যদি কোনও বিষয়ে ইমরানের স্থির বিশ্বাস থাকে তা হলে সেটাকে সত্যি করতে শেষ পর্যন্ত লেগে থাকে। ও বিশ্বাস করে ভারত আর পাকিস্তান বন্ধু হয়ে উঠবে। আমরা ওর কথা বিশ্বাস করি।’’
আসিফ হতাশ আর পাঁচটা বিষয়ের জন্য দু’দেশের ক্রিকেট-সম্পর্ক নষ্ট হওয়ায়। ‘‘চারদিকে যা যা হচ্ছে তার সঙ্গে ক্রিকেট বা ক্রিকেটারদের সম্পর্কই নেই। সব কিছুর মূলে রাজনীতি। আমি খুবই হতাশ। সম্পর্কে অবনতি হওয়ার মূলে রাজনীতিকরা। যাদের খেলা নিয়ে আগ্রহ নেই,’’ বলছেন আসিফ। সঙ্গে জুড়েছেন, ‘‘সৌভাগ্যবশত ইমরান প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। ও বৈরিতার মানসিকতা দূর করতে আগ্রহী।’’
আসিফ মনে করেন সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বড় ভূমিকা নিতে পারে ক্রিকেটও। তাঁর কথা, ‘‘আমরা নিজেদের মধ্যে নিয়মিত খেলতে শুরু করলে খেলোয়াড় এবং সমর্থকদের আচরণ পাল্টে যাবে। দু’দেশের মানুষই ক্রিকেটে আমাদের লড়াই দেখতে ভালবাসে। যা স্বাস্থ্যকর ব্যাপার। এমন নয় যে আমরা পস্পরকে খুন করব।’’
পাক ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আসিফ বলেছেন, ‘‘ইমরানকে বাদ দিলে এখনকার অধিনায়ক সরফরাজ় আহমেদ বড় বড় নামের পূর্বসুরিদের থেকে অনেক বেশি কিছু করেছে।’’ তাঁর সময়ের ক্রিকেট নিয়ে আসিফের কথা, ‘‘আমাদের সময় পড়াশোনার ক্ষতি হবে বলে বেশি খেলতে দিতেন না অভিভাবকরা। এমনকি খেলা বন্ধ করে দিতেন। আর অধিনায়ক হত ধনী, অভিজাত পরিবার থেকে। পাকিস্তানে ক্রিকেট তখনও ব্রিটিশদের খেলা। এখন উল্টো। বেসরকারি নামী স্কুল থেকে ক্রিকেটাররা আসে না। আসে গলি থেকে, ময়দানে খেলে। এরা কিন্তু অনেক ভাল খেলে।’’
আসিফ এখানেই থামেননি, ‘‘ক্রিকেটের চরিত্রই বদলে গিয়েছে। শুধু পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের ক্ষেত্রে না। উপমহাদেশেরই এটা সত্যি। দশটি দেশের মধ্যে (বিশ্বকাপে) পাঁচটি দেশ উপমহাদেশের। যা বিরাট সাফল্য।’’ যোগ করেন, ‘‘ক্রিকেটাররা এখন সচেতন। ওরা জানে নিজেদের সুস্থ রাখতে হবে, ভাল খেলতে হবে। আর টি-টোয়েন্টি জীবিকা নির্বাহের উপায়।’’ আসিফ মজা করে বলেছেন, ‘‘আমরা পাকিস্তানের হয়ে খেলার জন্য দৈনিক ১০ টাকা পেতাম। তবু ভাবতাম না, কম পাচ্ছি, না বেশি। এখন ক্রিকেট শিল্প। ক্রিকেটাররা আসলে পণ্য। ভাল খেললে বাজারে টিঁকে থাকা যাবে। নিজেকে বিক্রি করা যাবে।’’