অমলিন: ৩৬ বছর আগের সেই ছবি। ২৫ জুন, ১৯৮৩। লর্ডসের ব্যালকনিতে বিশ্বকাপ হাতে কপিল। পাশে মহিন্দর। টুইটার
৩৬ বছর পেরিয়েও আজ জ্বলজ্বল করছে সেই ছবি। ২৫ জুন, ১৯৮৩ সাল। বিশ্বক্রিকেটের তাজ সে দিন প্রথম বার উঠেছিল কপিল দেব নিখাঞ্জের ভারতীয় দলের মাথায়। ঐতিহাসিক ফাইনালে দু’বারের বিশ্বজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ওঠার পরে লর্ডসের ব্যালকনিতে ট্রফি হাতে অধিনায়ক কপিল। পাশে সেমিফাইনাল ও ফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ মহিন্দর অমরনাথ।
সে বারের মতো এ বারও বিশ্বকাপ সেই ইংল্যান্ডের মাটিতে। তফাত এটাই যে, সে বার ভারত বিশ্বকাপ জিততে পারে, এটা অনেকেই ভাবতে পারেনি। কিন্তু বিরাট কোহালির এই ভারত চলতি বিশ্বকাপে খেলছে প্রতিযোগিতার অন্যতম ফেভারিট হিসেবে। আর সে বার বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলতে হয়নি ভারতকে। সেখানে এ বার বিরাটের দল পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করে গ্রুপের ম্যাচে হারানোর পাশাপাশি এখনও অপরাজিত।
কপিলের সেই দলের অন্যতম সদস্য রবি শাস্ত্রী এ বার ভারতীয় দলের কোচ। ফাইনালে মহিন্দর অমরনাথের বলে মাইকেল হোল্ডিং এলবিডব্লিউ হতেই লর্ডসের সেই বিখ্যাত ব্যালকনিতে বর্তমান ভারতীয় কোচ শাস্ত্রীর সেই মুষ্ঠিবদ্ধ হাত আকাশে ছোড়ার দৃশ্য আজও ভারতবাসীর স্মৃতিতে উজ্জ্বল। ১৪ জুলাই সেই লর্ডসে কি ফের ৩৬ বসন্ত পরে হবে তিরাশির পুনরাবৃত্তি? প্রার্থনা গোটা ভারতের। এ বারও কি লর্ডস মেতে উঠবে ভাঙড়ায়! সে বার মুম্বইয়ের ‘সাহিত্য সহবাস’ আবাসনে কপিলদের বিশ্বকাপ জয় দেখেই সচিন তেন্ডুলকরের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু। ফাইনালে মদনলালের বলে ভিভিয়ান রিচার্ডসের ক্যাচ কপিলদেব দৌড়ে গিয়ে ধরার পড়ে গ্যালারিতেই বাবার হাত ধরে অজয় জাডেজার আবদার ছিল দেশে ফিরে ক্রিকেটার হওয়ার তালিম নেওয়ার।
বিরাট কোহালির দল এ বারের বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত হারিয়েছে, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে। বৃষ্টিতে ভেস্তে গিয়েছে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচ। খেলা বাকি ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে।
ফুরফুরে: ইংল্যান্ডেই বিশ্বকাপে ব্যস্ত কোহালিরা। তাঁদের হাতেও চ্যাম্পিয়নের ট্রফি দেখার অপেক্ষায় ভক্তরা। টুইটার
এ বার ইংল্যান্ডে ভারতীয় দল বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগে বেঙ্গালুরুতে আড্ডায় বসেছিলেন ১৯৮৩ সালের চার সদস্য সৈয়দ কিরমানি, কপিল দেব, রজার বিনি ও কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত। তিরাশির অধিনায়ক কপিল সে দিন বিরাটকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘‘আমাদের দলের সদস্যরাও কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। সেখানে বিরাট কোহালির এই দলটা দুর্দান্ত প্রতিভা ও ফিটনেসে পূর্ণ। তাই এই দলটাও বিশ্বকাপ জেতার ক্ষমতা রাখে।’’
কপিলের সেই দলের কয়েক জন এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডেরই কাছাকাছি রয়েছেন। সুনীল গাওস্কর ধারাভাষ্যকার হিসেবে হাজির থাকছেন মাঠে। ভারতের সেই প্রথম বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য দিলীপ বেঙ্গসরকর। যিনি বিখ্যাত ‘লর্ড অব লর্ডস’ নামেও। তিনি বলেছেন, ‘‘ইতিহাস ফেরানোর মতো দক্ষতা এই ভারতের রয়েছে। এ বারও ফাইনাল সেই লর্ডসেই। আমি নিশ্চিত, ২৫ জুনের সেই ইতিহাস আগামী ১৪ জুলাই লর্ডসে ফিরিয়ে আনবে বিরাট কোহালিরা।’’ কথা বলার সময়ে ভীষণই প্রত্যয়ী শোনাল ভারতীয় ক্রিকেটের কর্নেলের গলা।
‘কপিলের দৈত্যদের’ তিরাশি সালের সেই নাটকীয় বিশ্বজয় নিয়ে ছবি তৈরি হচ্ছে বলিউডে। বিশ্বকাপের পাশাপাশি তার শুটিংও এই মুহূর্তে চলছে ইংল্যান্ডেই। অভিনেতা রণবীর সিংহকে ছবিতে দেখা যাবে কপিল দেবের ভূমিকায়। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের দিন ম্যাঞ্চেস্টারে সেই ছবির কলাকুশলী ও অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে তিনি হাজির ছিলেন মাঠেই। রোহিত শর্মাদের সঙ্গে নিজস্বীও তোলেন।
তিরাশির বিশ্বকাপের আগে প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক কিম হিউজ ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি ভারতের বিশ্বজয় নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। আর এ বার স্টিভ ওয় থেকে মাইকেল ক্লার্ক দুই বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলীয় অধিনায়কও বিশ্বকাপের সম্ভাব্য জয়ী হিসেবে বাছছেন কোহালির ভারতকেই। ১৪ জুলাই সেই ‘স্মৃতি অফ জয়’ ফিরে আসে কি না এখন সেটাই দেখার।