প্রত্যয়ী: ধোনির নেতৃত্বে খেলার স্বপ্ন দেখেন সৈফুদ্দিন। ফাইল চিত্র
১৮ জুন ২০০৫। বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে এই দিনটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ দিনই প্রথম বার অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ক্রিকেট দুনিয়ায় সাড়া ফেলেছিল বাংলাদেশ। ১০১ বলে সেঞ্চুরি করে নতুন নায়ক হয়ে উঠেছিলেন মহম্মদ আশরাফুল।
সেই তরুণ ব্যাটসম্যানের উত্থানের দিনে তৈরি হয়ে গিয়েছিল বেশ কিছু স্বপ্ন। যার বেশির ভাগই বাস্তবে পরিণত হতে পারেনি। কিন্তু তাদের মধ্যেই একটি ছেলে হাল ছাড়েনি। ফেনী জেলার প্রতিকূল পরিকাঠামোকে হার মানিয়ে দেশের জার্সিতে বিশ্বমঞ্চে সাড়া ফেলে দিয়েছেন মহম্মদ সৈফুদ্দিন। চলতি বিশ্বকাপে মুস্তাফিজ়ুর রহমানের পরে তিনিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। সাত ম্যাচে তাঁর উইকেট সংখ্যা ১৩।
২২ বছর বয়সি অলরাউন্ডার ভারতের বিরুদ্ধে ৩৮ বলে অপরাজিত ৫১ রানের ইনিংস খেলে দেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সে ম্যাচে বাংলাদেশ হারলেও ক্রিকেটবিশ্বে পরিচিত হয়ে ওঠেন সৈফুদ্দিন। যে যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামিদের সামলাতে রাতের ঘুম চলে গিয়েছিল অনেক বড় দলের ব্যাটসম্যানের। তাঁদের বিরুদ্ধে ৯টি চার মেরে এই অমূল্য ইনিংস গড়েন তিনি।
সে দিন আরও একটি স্বপ্নপূরণ হয়েছিল তরুণ ক্রিকেটারের। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে খেলার স্বপ্ন। ফেনী থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকারে সৈফুদ্দিন বললেন, ‘‘ধোনি কেন অধিনায়ক হিসেবে এত সফল, তা জানার চেষ্টা করতাম ছোট থেকেই। বুঝতাম, উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে আঙুল ও হাতের মাধ্যমে বোলারকে কিছু একটা নির্দেশ দেয়। ভারতের বিরুদ্ধে ব্যাট করার সময় প্রত্যেক বলের আগে এক বার ধোনির দিকে তাকাতাম। লক্ষ্য করতাম হাত দিয়ে ঠিক কী ইশারা করে!’’ কিছু ধরতে পারলেন? তাঁর উত্তর, ‘‘অবশ্যই। হার্দিক বল করার সময় ধোনিকে দেখছিলাম বারবার বুকে হাত দিচ্ছে। তার পরের বলটিই বাউন্সার করছে হার্দিক। তখনই বুঝলাম, এটা বাউন্সারের নির্দেশ। কখনও দেখছিলাম বুমরাকে পায়ের দিকে আঙুল দেখাচ্ছে। পরের বলেই ইয়র্কার ধেয়ে আসছে। এ ভাবেই একাধিক ইঙ্গিত দিয়ে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে ধোনি।’’
সৈফুদ্দিনের বাবা আব্দুল খালেক পুলিশে চাকরি করেন। চাইতেন ছেলে পড়াশোনা করে ভাল চাকরি করুক। কিন্তু ছেলের স্বপ্ন যে কখনওই ১০টা-৫টার একঘেয়ে জীবনে আবদ্ধ থাকতে রাজি ছিল না। শাহিন অ্যাকাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপেনার হিসেবে প্রচুর রান করেছিলেন। সেখান থেকেই উত্থান। তার পরে অনূর্ধ্ব-১৬ বিভাগে চট্টগ্রামের হয়ে ৫৪৬ রান ও ২৪টি উইকেট নিয়ে জাতীয় ক্রিকেটে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে আর ঘুরে দেখতে হয়নি।
বাবা পুলিশ হলেও কিট্স কেনার জন্য তাঁর কাছে হাত পাততেন না। ‘খেপ ক্রিকেট’ খেলে ম্যাচ প্রতি চারশো টাকা করে পেতেন। একশো টাকা হাত খরচের জন্য রেখে তিনশো টাকা করে জমাতেন। তা দিয়েই ক্রিকেটের সরঞ্জাম কিনে আনতেন। সৈফুদ্দিন বলছিলেন, ‘‘এ ধরনের ক্রিকেট শুধু অর্থ সংগ্রহের রাস্তাই দেখায়নি, সঙ্গে গড়ে তুলেছে লড়াকু মনোভাবও। যাঁদের হয়ে খেলতাম, তাঁরা টাকা দিতেন ঠিকই, কিন্তু পারফর্ম করতে না পারলে কটূ মন্তব্যও শুনতে হত।’’
বিশ্বকাপে যে ১৩টি উইকেট পেয়েছেন, তার মধ্যে সেরা কোনটি? ‘‘অবশ্যই ক্রিস গেলের উইকেট। তা ছাড়া প্রস্তুতি ম্যাচে বিরাট কোহালিকে বোল্ড করে সব চেয়ে খুশি হয়েছিলাম। ওর মতো ব্যাটসম্যানকে আউট করা যে কোনও বোলারের কাছেই স্বপ্ন।’’
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে নিয়মিত খেললেও তাঁর স্বপ্ন আইপিএলে খেলা। কোন দলে খেলতে চাইবেন? তাঁর উত্তর, ‘‘সব চেয়ে খুশি হব ধোনির নেতৃত্বে খেলার সুযোগ পেলে। তা না হলে আমার প্রিয় শহর কলকাতার হয়ে খেলতে চাই। শাকিব ভাইয়ের মতোই এপার বাংলার ভালবাসাও কুড়িয়ে নিতে চাই।’’