ভারতের কাছে হারের পরে আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন পাক কোচ

সংবাদসংস্থা এএফপি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিকি আর্থার বলেছেন, ‘‘গত রবিবার ভারতের কাছে হারের পরে আমি আত্মহত্যা করার কথাও ভেবেছিলাম।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯ ০৩:০৮
Share:

বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি দিলেন পাক দলের কোচ মিকি আর্থার।

ম্যাঞ্চেস্টারে ভারতের বিরুদ্ধে হারের পরে আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছিলেন তিনি। এমনই বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি দিলেন পাক দলের কোচ মিকি আর্থার।

Advertisement

রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত জয়ে ফের লড়াইয়ে ফিরে এসেছেন সরফরাজ় আহমেদরা। সংবাদসংস্থা এএফপি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিকি আর্থার বলেছেন, ‘‘গত রবিবার ভারতের কাছে হারের পরে আমি আত্মহত্যা করার কথাও ভেবেছিলাম।’’ ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপের মধ্যে তৎকালীন কোচ বব উলমারের রহস্যমৃত্যু নিয়ে আলোড়িত হয়েছিল বিশ্বক্রিকেট। প্রবল অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল পাক ক্রিকেটের অন্দরেও। ঘটনাচক্রে উলমারের মতো মিকি আর্থারও দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ। ফলে পাক কোচের এমনই বিতর্কিত মন্তব্যে ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তিনিও কি এখন প্রয়াত পূর্বসূরির মতো প্রবল চাপের মধ্যেই রয়েছেন?

সেই বিষয়ে কোনও কিছু স্পষ্ট করে বলতে চাননি আর্থার। বরং তাঁর মন্তব্যের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সরফরাজ়দের কোচ বলেছেন, ‘‘একটা ম্যাচের হারের ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই আবার একটা ম্যাচে হার। বিশ্বকাপের মতো আসরে সমস্ত দলকেই প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকতে হয়। সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সমর্থকদের প্রত্যাশা—এত কিছুর মধ্যে নিজের অস্তিত্ব বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।’’ সেখানেই না থেমে মিকি আরও বলেন, ‘‘ভারতের বিরুদ্ধে হারের পরে মানসিক ভাবে এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম যে, মনে হয়েছিল আত্মহত্যা করি।’’ তবে পাক সংবাদমাধ্যমের খবর, আর্থারের ভূমিকায় খুশি নন প্রাক্তন ক্রিকেটাররা থেকে পাক ক্রিকেট বোর্ডেরও একাংশ। এমনও শোনা গিয়েছে, বিশ্বকাপ শেষ হলেই আর্থারকে সরিয়ে দেওয়া হবে। তাঁর সঙ্গে নতুন ভাবে চুক্তি করার কোনও ইচ্ছেই নেই পাক বোর্ডের।

Advertisement

তবে আর্থার নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই কিছু ভাবতে চাইছেন না। বরং রবিবার লর্ডসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জয় দলের মতো তাঁকেও চাঙ্গা করে দিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘‘একটা ম্যাচে ভাল একটা পারফরম্যান্সের প্রয়োজন ছিল। রবিবার সেটা আমাদের দল দেখিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। ক্রিকেটারেরা চাঙ্গা হয়ে গিয়েছে। বুধবার আমরা নিউজ়িল্যান্ডকে হারানোর মানসিকতা নিয়েই খেলতে নামব। একটা ভাল পারফরম্যান্সই দলের সামগ্রিক মেজাজে বড় পরিবর্তন ঘটিয়েছে।’’

এ দিকে, ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগেই বাবর আজ়ম জানিয়েছিলেন, তিনি বিরাট কোহালির ভক্ত। নিয়মিত ভারতীয় অধিনায়কের ব্যাটিং দেখেন। কিন্তু তাঁর ব্যাটিংয়ে কোহালির সঙ্গে কোনও মিল খুঁজে পাননি শোয়েব আখতার। তাই তরুণ ব্যাটসম্যানকে শোয়েবের নির্দেশ, ‘‘কোহালি যখন তোমার প্রেরণা, তখন ওর মতোই ব্যাটিং করতে শেখো।’’

শোয়েব হতাশ উইকেটে থিতু হয়ে বাবরের আউট হয়ে যাওয়া দেখে। রবিবার লর্ডসে ৮০ বলে ৬৯ করে উইকেট ছুড়ে দেন তিনি। সোমবার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে শোয়েব বলেন, ‘‘কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও সাবলীল ব্যাট করে বিরাট কোহালি। দেখে মনে হয় না, ওকে আউট করা যাবে। বাবর যখন এতটাই ওকে পছন্দ করে, তা হলে ওর ব্যাটিং দেখেও শেখা উচিত। অন্তত বিরাটের মতো খুচরো রান নিতে শিখুক। পরিণত করুক নিজেকে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘বিরাট, রোহিত শর্মা, কেন উইলিয়ামসনরা কখনও এক ছন্দে ইনিংস গড়ে না। হাফসেঞ্চুরি হয়ে যাওয়ার পরে উন্নত স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে। এগুলো শিখতে হবে। তারই সঙ্গে বাড়াতে হবে শটের বৈচিত্র।’’

যদিও তিনি মুগ্ধ হ্যারিস সোহেলের ব্যাটিংয়ে। বলেছেন, ‘‘বরাবর বলেছি সোহেলকে প্রথম একাদশে রাখতে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ও নিজেকে প্রমাণ করেছে। বাবরের চেয়ে অনেক ভাল ব্যাটিং করেছে ও।’’ শোয়েব মনে করেন, এখনও সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে তাঁর দেশের। ‘‘ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেললে পাকিস্তানকে কেউ আটকাতে পারবে না,’’বলেছেন শোয়েব। এবং তারই সঙ্গে ‘রাওয়ালপিণ্ডি এক্সপ্রেসের’ পরামর্শ, ফিল্ডিংয়ে আরও একটু উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। তাঁর মন্তব্য, ‘‘পাকিস্তানের বোলিং নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। মহম্মদ আমির আবার ছন্দে ফিরেছে। প্রত্যেক ম্যাচে ও-ই কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে উইকেট তুলে নিচ্ছে। সঙ্গে ভাল সহায়তা করছে ওয়াহাব রিয়াজ়ও।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘ফিল্ডিংয়ে বাড়তি গুরুত্ব দিতেই হবে। প্রত্যেক ম্যাচেই এমন সমস্ত সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করছে ক্রিকেটারেরা, তা পরিস্থিতিকে জটিল করে দিচ্ছে। এই জায়গায় উন্নতি করতেই হবে সরফরাজ়দের।’’

পাক অধিনায়কও মনে করছেন, এই জায়গা থেকেও শেষ চারে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে তাঁদের সামনে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের দলের ক্রিকেটারেরা বিশ্বাস করে যে, বিশ্বকাপ জেতা সম্ভব। হয়তো শুরুটা আমাদের ভাল হয়নি। তবে সেই অস্বস্তিকর পরিবেশ থেকে দল অনেকটা বেরিয়েও এসেছে। আমরা বাকি ম্যাচগুলিতেও ভাল খেলব।’’ তারই সঙ্গে সরফরাজ় যোগ করেছেন, ‘‘অনেকেই মনে করছেন, ০ক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে আমরা সমালোচকদের জবাব দিয়েছি। কিন্তু ব্যাপারটা আদৌ তা নয়। অন্যান্য দলের মতো আমরাও এখানে সেরা ক্রিকেট উপহার দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই এসেছি।’’ সরফরাজ় বলেছেন, ‘‘ভারতের বিরুদ্ধে আমাদের পারফরম্যান্স খুবই সাধার ছিল। কিন্তু তার জন্য আমাদের লক্ষ্য করে যে ধরনের বিদ্রুপ করা হয়েছে, সেটাও কিন্তু খুব যুক্তিযুক্ত ছিল না। তাই মাঠের বাইরের ঘটনাকে মন থেকে সরিয়ে আমরা নিউজ়িল্যান্ড ম্যাচ নিয়েই ভাবতে চাই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement