একাগ্র: তৈরি হচ্ছেন যশপ্রীত বুমরা। বৃহস্পতিবার সাউদাম্পটনে ভারতের নেটে। শনিবার প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। এপি
বিশ্বকাপের শুরু থেকেই ইংল্যান্ডের পিচ নিয়ে বিতর্ক কম হচ্ছে না। কোনও পিচে প্রচুর রান উঠছে তো কখনও দেখা যাচ্ছে ধীর গতির পিচে ব্যাটসম্যানদের রান তুলতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। আইসিসির নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল বিশ্বকাপের শুরুতে আইসিসির পিচ প্রধান অ্যান্ডি অ্যাটকিনসনকে দেখা যাচ্ছিল না বলে। বিভিন্ন জায়গার পিচে তফাৎ ধরা পড়ছিল। চাপে পড়ে আইসিসি শেষ পর্যন্ত তাদের প্রধান পিচ প্রস্তুতকারক অ্যাটকিনসনকে ফিরিয়ে আনে।
বুধবার আবার পিচ নিয়ে বিতর্ক উস্কে দিলেন ভারতের পেসার যশপ্রীত বুমরা। তিনি বলেন, ‘‘এখনও সাদা বলের ক্রিকেট যা খেলেছি, তাতে বুঝেছি, ইংল্যান্ডের মতো নিষ্প্রাণ পিচ আর কোথাও নেই। বোলাররা কোনও সাহায্য পাচ্ছে না এখানকার পিচ থেকে।’’ তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘‘মেঘলা আকাশ দেখে মনে হতে পারে বল সুইং করবে। কিন্তু এখানে কোনও সিম মুভমেন্ট নেই, সুইংও নেই।’’ বুমরার এই বক্তব্য যে ইংল্যান্ড বোর্ড এবং আইসিসির কাছে খুব শ্রুতিমধুর মনে হবে না, সেটা স্পষ্ট। বুমরা জানাচ্ছেন, ইংল্যান্ডে খেলার সময় ভারতীয় বোলাররা সব সময় খারাপ পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকে। যদি কোনও সাহায্য পিচ থেকে পাওয়ায় যায় সেটা উপরি পাওনা। ‘‘কী করতে চলেছি সেই সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। নিখুঁত ভাবে নিশানায় আঘাত করার আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। এটাই আমরা চেষ্টা করে যাই। আমরা জানি ইংল্যান্ডের পিচ নিষ্প্রাণ থাকবে। তাই বোলিং করার সময় সব চেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকি। যদি কোনও সাহায্য পাওয়া যায়, তখন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সুবিধে হয়,’’ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন বুমরা।
শিখর ধওয়নের পরে ভুবনেশ্বর কুমার। বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতীয় দলে চোট-আতঙ্ক তাড়া করছে। ধওয়ন ছিটকে ইগিয়েছেন। কয়েকটি ম্যাচে খেলতে পারবেন না ভুবনেশ্বর কুমারও। তাই পেস বিভাগে মহম্মদ শামির সঙ্গে বোলিং করবেন যশপ্রীত বুমরা। কিন্তু তাতে কোনও সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন তিনি। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে বুমরা বলেন, ভুবনেশ্বর কুমার, শামি এবং তিনি বহু বার এক সঙ্গে বোলিং করেছেন। তাই এটা কোনও বড় ব্যাপার নয়। ‘‘আমরা শুধু কী করতে হবে তাতে জোর দিচ্ছি। অন্য কিছু মাথায় রাখছি না। তা ছাড়া এর আগেও আমরা তিন জন একসঙ্গে বোলিং করেছি। তাই এটা কোনও ব্যাপার নয়,’’ বলেন বুমরা।
বিজয় শঙ্করের চোট নিয়েও মুখ খুলেছেন বুমরা। বুধবার বুমরার ইয়র্কার শঙ্করের পায়ে লেগে চোট লাগে। এ দিন বুমরা বলেন, ‘‘শঙ্করের ব্যথা হচ্ছিল ঠিকই, তবে বিকেলের মধ্যে অনেকটা ঠিক হয়ে গিয়েছিল। আশা করি সে রকম গুরুতর চোট নয়।’’ এ রকম চোট লাগার পরে এ বার নেটে ব্যাটসম্যানদের বিরুদ্ধে কিছুটা রয়ে-সয়ে বোলিং করবেন কি না জানতে চাইলে বুমরা বলেন, ‘‘অবশ্যই আমরা ব্যাটসম্যানকে আহত করতে চাই না। কিন্তু নেটে ব্যাটসম্যানদের তো আর বলে দেওয়া হয় না, তোমরা বড় শট খেলো না। তাই ওরাও নেটে বোলারদের বিরুদ্ধে শট খেলে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে শঙ্করের চোট লেগে গিয়েছে। এটা হতেই পারে। আশা করছি ও ঠিক হয়ে যাবে।’’
শিখর ধওয়নের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়াটা তাঁর কতটা খারাপ লেগেছে সেটাও জানান বুমরা। ‘‘শিখর দলের খুব গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এত দিন ধরে ও ভাল খেলে আসছে। বিশেষ করে আইসিসির প্রতিযোগিতাগুলিতে ওর রেকর্ড দুরন্ত। যা হয়েছে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। যাই হোক আমাদের এগিয়ে যেতে হবে,’’ বলেন বুমরা।
বিশ্বকাপ অভিযানের শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচে দুরন্ত স্পেল করেছিলেন বুমরা। সাউদাম্পটনের পিচও ঠিকঠাকই মনে হচ্ছে তাঁর। তবে বল এক বার পুরনো হয়ে গেলেই ব্যাটিং করা এই পিচে সহজ হয়ে যাবে বলে মনে হয় তাঁর। ‘‘এখানে প্রথম ম্যাচে যখন আমরা নেমেছিলাম, নতুন বলে পিচ থেকে কিছুটা সাহায্য পেয়েছিলাম। কিন্তু বল এক বার পুরনো হয়ে যাওয়ার পরেই ব্যাট করা সহজ হয়ে গিয়েছিল। ওভালে ব্যাটিং উইকেট ছিল। ওখানে ৩৫০ রানও উঠতে দেখা গিয়েছে,’’ বলেন তিনি। তবে বুমরার মনে হয়, পিচের বিশ্লেষণ ম্যাচের দিন করে সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করা ভাল। ‘‘ম্যাচের দিন কী কী কাজে আসবে সেটা দেখে নেওয়া ভাল। দ্রুত উইকেট দেখে বুঝতে হয়, পিচের চরিত্র কী রকম হতে পারে। যদি মনে হয়, পিচ থেকে কোনও সাহায্য পাওয়া যাবে না, তা হলে নিজের শক্তির ওপর ভরসা রাখো। যদি সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তা হলে সুইং করানোর চেষ্টা করে উইকেট তোলাই লক্ষ্য থাকে।’’
সাধারণত নেট সেশনে বোলাররা পুরো শক্তি নিয়ে ঝাঁপান না। কিন্তু বুমরা বৃহস্পতিবার অনুশীলনে কে এল রাহুল এবং বিরাট কোহালিকে অস্বস্তিতে ফেলার টানা চেষ্টা করলেন। নেটে বুমরার ইয়র্কার রাহুলের অফ স্টাম্পও ছিটকে যায়।
কোহালি ব্যাট করার সময়ও দেখা যায় বুমরার একটি শর্ট বল থেকে বাঁচতে তিনি মাথা সরিয়ে নিচ্ছেন। বলটা তাঁর ব্যাটের মাথায় লেগে উড়ে যায়। কিন্তু কোহালি তাতে বিন্দুমাত্র অসন্তোষ প্রকাশ করেননি। তাঁর হাসিতেই বোঝা গেল এই বোলিংয়ে কতটা সন্তুষ্ট। বুমরাকে এই নিয়ে প্রশ্ন করাতে বলেন, ‘‘ম্যাচে অনেক সময় আলাদা কিছু পরীক্ষা করার ইচ্ছা হয়। সেগুলো নেটে আগে দেখে নিই। ম্যাচে সেগুলোই করতে হয়। আমি সব ধরনের অনুশীলনই করি নেটে।’’