পরামর্শ: ধোনির ক্লাসে ছাত্র ঋষভ। বিশ্বকাপে তাঁর খেলার সম্ভাবনাও ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। ফাইল চিত্র
সারা বিশ্বের ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের মধ্যে পাকিস্তানকে হারানোর বিজয়োৎসব চলছে। আর তার মধ্যেই কঠিন সিদ্ধান্ত কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের দরজায়।
শিখর ধওয়নকে নিয়ে এ বার একটা এসপার-ওসপারের দিকে এগোচ্ছেন বিরাট কোহালিরা। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নেথান কুল্টার-নাইলের বল আছড়ে পড়ে ধওয়নের বাঁ-হাতে। তা নিয়েই তিনি লড়াই করে যান এবং সেঞ্চুরি করে দলকে জেতার মতো স্কোরে পৌঁছে দেন। ম্যাচের পরে স্ক্যানে ধরা পড়ে ধওয়নের বাঁ-হাতের হাড়ে চিড় ধরেছে। ঘটনা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই ম্যাচ হয়েছে গত রবিবার, অর্থাৎ ৯ জুন। আট দিন কেটে গিয়েছে। তার পর আরও দু’টি ম্যাচ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ধওয়নের হাতের অবস্থার দারুণ কিছু উন্নতি হয়েছে বলে শোনা যায়নি।
ম্যাঞ্চেস্টারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ধওয়নকে দ্বাদশ ব্যক্তির ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। দুর্দান্ত ছবি হয়ে থাকল সেই মুহূর্তটা। যখন ব্যাট করছেন রোহিত শর্মা এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে ওপেনার হিসেবে প্রোমোশন পাওয়া কে এল রাহুল। তাঁদের জন্য জলের বোতল আর গ্লাভস নিয়ে মাঠে দৌড়ে গেলেন ধওয়ন। বোঝা গেল, বিশ্বকাপে টিম বন্ধন বাড়ানোর জন্যই এমন অভিনব উদ্যোগ। শাস্ত্রী-কোহালি জমানায় টিম স্পিরিট এবং ড্রেসিংরুম আবহকে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র-জুনিয়র বিভেদ কাটানোর শপথ নেওয়া হয়েছে। সেই কারণেই দেখা যাচ্ছে হার্দিক পাণ্ড্যর মতো তরুণ তারকাও ম্যাচ জেতার পরে ধোনির কাঁধে হাত রেখে মাঠ ছাড়তে সংকোচ বোধ করছেন না। শাস্ত্রী-কোহালি জুটির যুক্তি হচ্ছে, খোলামেলা আবহাওয়া তৈরি না করতে পারলে দলের তরুণ সদস্যরা মাঠে গিয়ে সম্পূর্ণ ভাবে নিজেকে প্রকাশ করবেন কী ভাবে? আটকে-আটকে থাকলে তো তার প্রভাব তাঁর খেলাতেও পড়তে পারে। বিশ্বকাপে সুখী পরিবার রাখার অভিযান আরও গতি পেয়ে গেল ধওয়নের দ্বাদশ ব্যক্তি হিসেবে ‘ব্যাটিংয়ে’। যেন মুহূর্তে তিনি বার্তা দিয়ে দিতে চাইলেন তরুণদের উদ্দেশে— জল বওয়া মানেই এই দলে দুয়োরানির ছেলে নয়।
আরও পডু়ন: শাকিবের দুরন্ত সেঞ্চুরিতে জয় বাংলা
বাঁ-হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় জল আর গ্লাভস আঁকড়ে ধরে ধওয়ন ঢুকছেন তাঁর সঙ্গী দুই ওপেনারের সেবা করার জন্য। উদাহরণ হিসেবে অসাধারণ। পাশাপাশি, করুণ সুরও বাজছে। ধওয়ন কি আদৌ আর এই বিশ্বকাপে খেলতে পারবেন? তাঁর বিশ্বকাপ অভিযান ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই শেষ হয়ে গেল না তো? ওয়াকিবহাল মহলের পর্যবেক্ষণ, ধওয়নের পক্ষে দ্রুত সেরে ওঠা কঠিন। হাড়ে চিড় ধরেছে বলেই তাঁকে লড়তে হবে সময়ের বিরুদ্ধে। কোহালিদের বাকি পাঁচ ম্যাচ যথাক্রমে এ রকম: ২২ জুন আফগানিস্তান। ২৭ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩০ জুন ইংল্যান্ড। ২ জুলাই বাংলাদেশ। ৬ জুলাই শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ড ম্যাচ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তার আগে যদি ধওয়নকে সুস্থ না করে তোলা যায়, তা হলে কার্যত চোদ্দো জনের স্কোয়াড নিয়ে চলতে হবে। আচমকা কোনও ব্যাটসম্যানের চোট লেগে গেলে বিপদে পড়তে পারে দল।
সম্ভবত সব দিক খতিয়ে দেখে একটা এসপার-ওসপার সিদ্ধান্ত নিতে হবে দলকে। ম্যাঞ্চেস্টারে জেতার পরে সোমবার সাউদাম্পটনে গেল দল। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে জেতার পরে দু’দিন বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে দলকে। যে যার মতো ছুটি কাটাতে পারো। অনেকের পরিবার রয়েছে সঙ্গে। গত কালই যেমন রোহিত শর্মা সেঞ্চুরি করার পরে ক্যামেরা দেখাল তাঁর স্ত্রী রীতিকাকে। কিন্তু পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর মধ্যে সাউদাম্পটনেই হয়তো ধওয়নের ভাগ্য ঠিক হয়ে যাবে। দু’এক দিনের মধ্যেই ফের পরীক্ষা করা হবে তাঁর চোটের জায়গা। বাঁ-হাতের তালুর হাড়ে চিড় ধরেছে। স্ক্যান করে দেখা হবে আঘাতের কী অবস্থা। যদি খুব একটা উন্নতির লক্ষণ না দেখা যায়, তা হলে পরিবর্ত হিসেবে ঋষভ পন্থের নাম ঘোষণা করা হবে। আবার এটাও শোনা যাচ্ছে যে, ধওয়ন যদি দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বকাপের বাইরে চলে যান, তা হলেও তাঁকে অতিরিক্ত সদস্য হিসেবে রেখে দেওয়ার জন্য বোর্ডের কাছে অনুরোধ করা হতে পারে। এখন যেমন ঋষভ দলের সঙ্গে ট্রেনিং করছেন, তখন ধওয়ন সে রকম থাকবেন। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ের পুরস্কার হিসেবে তাঁকে দলের সঙ্গে রেখে দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁর খরচ বহন করবে ভারতীয় বোর্ড। তবে ম্যাচের দিনে তিনি দলের সঙ্গে ড্রেসিংরুমে প্রবেশ অধিকার পাবেন না।
ধওয়ন নিয়ে যে ম্যাঞ্চেস্টারের আকাশের মতোই কালো মেঘ উপস্থিত হয়েছে, তা আরও ভাল বোঝা যাচ্ছিল কোহালিদের নেট প্র্যাক্টিসে। হেড কোচ রবি শাস্ত্রীকে দেখা গেল, আলাদা করে পড়ে আছেন ঋষভ পন্থকে নিয়ে। এই ইংল্যান্ডেই টেস্ট সিরিজে ঋদ্ধিমান সাহার অনুপস্থিতিতে যখন দীনেশ কার্তিক খারাপ কিপিং করলেন, শাস্ত্রী উদ্যোগ নেন ঋষভের টেস্ট অভিষেক ঘটানোর। যে-ভাবে পাকিস্তান ম্যাচের আগে তাঁকে তৈরি করতে দেখা গেল ঋষভকে, তাতে মনে হচ্ছে, দিল্লির বিস্ফোরক বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানকে ভীষণ ভাবেই তৈরি রাখা হচ্ছে। যাতে শিখর নিয়ে দুঃসংবাদ এলেও বিকল্প না হাতড়ে বেড়াতে হয়। এক বার দেখা গেল শাস্ত্রী চেঁচিয়ে পন্থকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেললেন। বললেন, ‘‘লাস্ট ওভার। ১৫ রান করতে হবে জিততে গেলে। করে দেখা।’’ পন্থ মেরে তুলে দিলেন। একটা শট এত জোরে মারলেন যে, সময় মতো পা সরাতে না পেরে ফিল্ডিং কোচ শ্রীধরের সজোরে লাগল। তিনি পা ধরে বসে পড়লেন। ফিজিয়োকে ছুটে আসতে হল। শাস্ত্রীর ওই শেষ ওভারের চ্যালেঞ্জ ছোড়া এবং পন্থের জবাব দেখে মনে হচ্ছে, ধওয়নের বিকল্পকে ম্যাচের মানসিকতায় নিয়ে আসার অনুশীলন শুরু হয়ে গিয়েছে।
সাউদাম্পটনে দু’দিন বিশ্রামের পরে দল যখন অনুশীলনে ফিরবে, পন্থকে নিয়ে হইচই আরও বেড়ে যেতে পারে। দলের অন্দরমহলে ধওয়নকে নিয়ে ছবিটা দু’দিনের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাওয়া উচিত।