হাশমাতুল্লার উইকেট নিয়ে বুমরা।—ছবি রয়টার্স।
এ রকম একটা রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে যে ভারত জিততে পারে তা আফগানিস্তানের প্রথম তিরিশ ওভার পর্যন্ত ভাবা যায়নি। ৫০ ওভারে ভারতের করা ২২৪ রান তাড়া করতে গিয়ে আফগানিস্তান তখন ১০৭-৪। জিততে গেলে ১২০ বলে করতে হবে ১১৮ রান। হাতে রয়েছে ছয় উইকেট।
এই জায়গা থেকে আশার আলো দেখলাম ৩৫ ওভারের মাথায়। কারণ বাকি ১৫ ওভারে আফগানদের মোকাবিলা করতে হত শামি-বুমরার বেশ কয়েকটা ওভার। তাই মনে হয়েছিল শামিদের অভিজ্ঞতার মোকাবিলা করতে পারবে না আফগান ব্যাটসম্যানরা। তা পারেওনি। শামিদের অভিজ্ঞতার কাছেই ১১ রানে হেরে গেল আফগানরা। শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক-সহ ৪০ রানে চার উইকেট নিয়ে শামি মাঠ ছাড়লেও বিশ্বকাপে ভারতের পঞ্চাশতম জয়ের নায়ক কিন্তু সেই যশপ্রীত বুমরাই (২-৩৯)।
ভারতের দুই স্পিনার কুলদীপ যাদব (০-৩৯) ও যুজবেন্দ্র চহাল (২-৩৬) এ দিন শুরুতে উইকেট তোলার পরিকল্পনা করে বল করছিল। যে পরিকল্পনায় কোনও ভুল নেই। তাই ওরা ফ্লাইট করাচ্ছিল, ব্যাটসম্যানকে মারার জন্য প্রলুব্ধ করছিল। মন্থর পিচে রহমত শাহ (৩৬), মহম্মদ নবি (৫২)-দের সুবিধা হয়ে যায়। ম্যাচটাকে প্রায় জেতানোর দিকে নিয়ে যাচ্ছিল ওরা। সেখান থেকেই ঝটকা দেয় শামি-বুমরা-হার্দিকের পেস ব্রিগেড। ওদের পরিকল্পনা ছিল ‘ডট বল’। উইকেট তোলার বদলে রান বন্ধ করার দিকে নজর দিয়েছিল পেস ব্রিগেড। উদ্দেশ্য—এতে ওভার প্রতি রান তোলার লক্ষমাত্রা বাড়বে। তখন ঝুঁকিপূর্ণ শট নিতে যাবে আফগান মিডল অর্ডার। তখন শেষ বেলায় ইয়র্কার দিয়ে ওদের আরও চাপে ফেলে দিতে হবে। এটাই হল ভারতীয় পেসারদের অভিজ্ঞতা। ডেথ ওভারে শামি বা বুমরা কেউ ইয়র্কার দিতে গিয়ে একবারও লো ফুলটস দিয়ে ফেলেনি।
আরও পড়ুন: জিতলেও আফগানরা বিরাটদের যে ত্রুটিগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল
তবে ম্যাচ হারলেও এ দিন আফগানিস্তানের স্পিনারদের কৃতিত্বকে খাটো করা যাবে না। ওরা কিন্তু আজ বড় ধাক্কা দিয়েছিল ভারতকে। পিচে বল পড়ে থমকে আসছে। অসুবিধা হচ্ছে ব্যাটসম্যানদের স্ট্রোক নিতে। সেই উইকেটে আফগানিস্তানের চার স্পিনার মুজিব উর রহমান (১-২৬), মহম্মদ নবি (২-৩৩), রশিদ খান (১-৩৮) ও রহমত শাহ (১-২২) ৩৪ ওভার বল করে ১১৯ রান দিয়ে নিয়ে পাঁচ উইকেট নেয়। বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটিং শক্তি, যাদের এ বারের বিশ্বকাপ জেতার অন্যতম দাবিদার ধরা হচ্ছে, সেই ভারতের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের এই লড়াইকে ফুল মার্কস দিতেই হচ্ছে।
ভারতের বিরুদ্ধে স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছিল আফগানিস্তান। কিন্তু ভারত বল হাতে সেই মুজিব উর রহমানকে দেখে একটা রক্ষণাত্মক খোলসে ঢুকে পড়েছিল। সেটাই মানসিক ভাবে এগিয়ে দিয়েছিল আফগান স্পিনারদের। রোহিত শর্মাকে (১) এ দিন মারার জায়গাই দেয়নি মুজিবরা। বেচারা স্পিনার দেখেও ড্রাইভ মারতে পারছিল না। যে জায়গায় বল পেলে রোহিত সাবলীল ভাবে স্ট্রোক নিতে পারে, সেটাই হচ্ছিল না। রোহিতও তাই আফগান স্পিনারদের সামনে ন’টি বল না খেলতে পেরে যে বলে আউট হল, মুজিবের সেই অফমিডে পড়া ক্যারম বলটা বুঝতেই পারেনি।
এই জায়গায় রাহুলের উচিত ছিল স্কোরটাকে সচল করা। রাহুলও সেই একই ভুল করছিল আফগান স্পিনারদের সামনে। তার পরে যখন আক্রমণে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, তখন আবার শট নির্বাচনে ভুল করে বসল। মহম্মদ নবি অন্য দিন যে গতিতে বল করে, এ দিন সেখানে বলের গতি হেরফের করিয়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছিল কে এল রাহুলকে (৩০)। রাহুল উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়ার পরেও নবিকে অহেতুক রিভার্স সুইপ করতে গেল। কেন বুঝলাম না।
তবে বিরাট কোহালি অন্য ধাতুতে গড়া ক্রিকেটার। ও কিন্তু শুরু থেকেই ঠিক ছন্দে রশিদ খানদের মোকাবিলা করছিল। কোনও ঝুঁকি নেয়নি। কেন ওকে এই মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান বলা হচ্ছে তা বুঝিয়ে দিচ্ছিল ব্যাট করার সময়। ৬৩ বলে ৬৭ রানের ওর ইনিংসটা এই উইকেটের আদর্শ। কিন্তু নবির যে বলটায় ও আউট হয়ে ফেরে সেটা নবির ধুরন্ধর বুদ্ধির ফসল। ও বিরাটকে অফসাইডে আটকে দিয়ে বল করে যাচ্ছিল। ভারত অধিনায়ক ওর পরিকল্পনা বুঝতে পেরেই মিডল ও লেগ স্টাম্পে আসা বলগুলো লং অন বা মিড উইকেট অঞ্চল দিয়ে খেলছিল। কিন্তু তার পরেই হঠাৎ অফস্টাম্পে যে বলটা করেছিল নবি তাতে বাউন্স মিশিয়ে দিয়েছিল। সেটা চকিতে ধরতে পারেনি বিরাট। সেই বলে মারতে গিয়েই আউট হয়ে ফেরে ও।
এ দিন আফগান স্পিনারদের ২০৪ বল খেলে ১১৪ করেছে ভারত। যার মধ্যে চার মাত্র ছ’টি। কোনও ছক্কা নেই। বিশ্বকাপ জিততে গেলে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মাঝের সারির ব্যাটসম্যানদের এই ব্যর্থতা দ্রুত শোধরাতে হবে।