প্রস্তুতি: বুধবার ম্যাঞ্চেস্টারে অনুশীলনে মগ্ন ওপেনার রোহিত শর্মা। এপি
এ বারের বিশ্বকাপ একটা ব্যাপার খুব ভাল মতো বুঝিয়ে দিচ্ছে। ব্যক্তিগত দক্ষতা এক আধটা ম্যাচ জেতাতে পারে, কিন্তু একটা চ্যাম্পিয়নশিপ নয়। দল হিসেবে জমাট বাঁধলেই তবে কেউ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে। এর সঙ্গে থাকতে হবে বড় মঞ্চে নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা। তা হলেই বিশ্বকাপ জেতা সম্ভব।
ওয়ান ডে ক্রিকেট দাপিয়ে বেড়িয়েছে যে সব দল, তাদের দিকে এক বার তাকিয়ে দেখলেই ব্যাপারটা বোঝা যাবে। সত্তর এবং আশির দশকের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা তার পরের অস্ট্রেলিয়া— কখনও ব্যক্তি নির্ভর দল ছিল না। ওরা দলগত শক্তির উপরে বিশ্বাস রাখত। যার ফলটাও পেয়েছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাপারটাই ধরা যাক। প্রয়োজনের সময় কখনওই নিজেদের খেলার মানটা ওরা তুলে ধরতে পারল না। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের সামনে ওরা মানসিক শক্তির পরিচয় দিতে পারেনি। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে ওদের একটাও বড় ম্যাচ না জেতা প্রমাণ করে কতটা ব্যক্তিনির্ভর দল ওরা। ম্যাচ জিততে দক্ষিণ আফ্রিকা জনা কয়েক ক্রিকেটারের ওপর নির্ভর করে ছিল।
সে দিক দিয়ে ভারত কিন্তু দল হিসেবে দারুণ খেলছে। ব্যাটসম্যানদের একটা খারাপ দিনে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বোলাররা দুর্দান্ত ভাবে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে ভারতকে। আফগানিস্তানের ক্রিকেটারেরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে, অন্যতম ফেভারিটকে হারাতে গেলে পুরো একশো ওভারই সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। ওরা ম্যাচটায় ৯৯ ওভার ভাল খেলেও হেরে গেল! অন্য দিকে, বিশ্বকাপ থেকে প্রায় বিদায়ের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যে জন্য ওরা নিজেদের ছাড়া আর কাউকে দায়ী করতে পারবে না। সেই অতিরিক্ত তারকা নির্ভরতা ওদের ডুবিয়ে দিয়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দু’এক জন ক্রিকেটারের ওপর নির্ভর করে জেতা যায়। পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে সেটা সম্ভব নয়।
ভারতের হয়তো এক জন ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান কম আছে। কিন্তু দলটার অলরাউন্ড শক্তি এতটাই ভাল যে, সমস্যা হয় না। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে কখনওই হাল্কা ভাবে নেওয়া যায় না। কিন্তু ভারতের মতো দলকে হারাতে গেলে ক্যারিবিয়ানদের শুধু দু’এক জনকে খেললেই চলবে না। ভারতের রিজার্ভ বেঞ্চের যা শক্তি, তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ঠিক দলটা নামাতে সমস্যা হবে না। যে ভাবে দুটো দল বিশ্বকাপে এগিয়েছে, তাতে একটা কথা বলাই যায়। ভারত খুব খারাপ না খেললে ম্যাচটা জিতছে।
আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে দুরন্ত হ্যাটট্রিক করার জন্য মহম্মদ শামিকে অভিনন্দন। এই কৃতিত্বের মালিক হওয়াটা সোজা ব্যাপার নয়। বিশেষ করে বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে। শামির একটার পর একটা বলে ব্যাটসম্যানদের স্টাম্প ছিটকে যাচ্ছে আর আমার মনে ভেসে উঠছে ১৯৮৭ সালের নাগপুরের কথা। শামির মতোই চেতন শর্মারও হ্যাটট্রিকটা প্রাপ্য ছিল।