নায়ক: পাঁচ উইকেটের স্মারক বল হাতে স্টার্ক। বৃহস্পতিবার। রয়টার্স
ক্রিকেট খেলায় স্ট্র্যাটেজি, ট্যাকটিক্সের ঝনঝনানি থাকেই। কিন্তু সব রণনীতি ছাপিয়ে যায়, ইতিবাচক মানসিকতা। ছোটবেলায় থেকেই শিখে এসেছি, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও সাহস নিয়ে ব্যাট করতে পারলে যে কোনও বোলিং বিভাগকেই সামলে দেওয়া যায়। যেমনটা বৃহস্পতিবার ব্যাট হাতে দেখলাম অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথকে।
চাপের মুখে স্মিথের (১০৩ বলে ৭৩ রান) ইনিংসটাই হারতে বসা ম্যাচও বৃহস্পতিবার ১৫ রানে জিতিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়াকে। শুরুতে ব্যাট করে ৪৯ ওভারে ২৮৮ রান করেছিল অস্ট্রেলিয়া। জবাবে নয় উইকেট হারিয়ে ২৭৩ রানে শেষ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস।
বেলার দিকে রোদ উঠে পিচ শুকিয়ে যাবে। তার আগেই অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নেওয়ার জন্যই বোধ হয় টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক হোল্ডার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই পেসার ওশেন থমাস ও শেল্ডন কটরেলের দাপটে স্থায়ী হয়নি অস্ট্রেলিয়ার দুই পেসার। এর মধ্যে কটরেল একে বাঁ হাতি। তার উপরে বল দু’দিকে সুইং করাতে পারে। সঙ্গে রয়েছে এক্সপ্রেস গতি। আর ওশান থমাসের বলে গতি ও বাউন্স রয়েছে। এই গতিতে সমস্যায় পড়ে গিয়েই থমাসের বলে কট বিহাইন্ড হয় ফিঞ্চ (৬)। আর কটরেলের বলের বাড়তি বাউন্স বুঝতে না পেরেই ফিরে যায় ওয়ার্নার (৩)।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রথম ১৮ ওভারে বুদ্ধি করে শর্ট বলগুলো রাখছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসাররা। প্রতি ওভারের দ্বিতীয় বা তৃতীয় বলে বাউন্সার। বাকি সব বল থ্রি কোয়ার্টার লেংথে (গুড লেংথ ও শট লেংথ-এর মাঝামাঝি) করছিল থমাস ও কটরেলরা। উসমান খোয়াজা (১৩) ক্যারিবিয়ানদের এই কৌশল ধরতে না পেরেই পতন ডেকে আনে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের (০) ক্ষেত্রেই একই কথা প্রযোজ্য। ৩৮-৪ থেকে এর পরেও যে অস্ট্রেলিয়া জিতে ফিরল তার নায়ক তিন জন—স্টিভ স্মিথ, নেথান কুল্টার-নাইল (৬০ বলে ৯২ রান) ও অবশ্যই বল হাতে মিচেল স্টার্ক (৫-৪৬)।
ক্যারিবিয়ান পেস ব্যাটারির বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধটা গড়ে গড়ে তোলে স্টিভ স্মিথ। ব্যাট করতে নেমে শর্ট বল বুদ্ধি করে যেমন খেলছিল, তেমনই ফিল্ডারদের মাঝে ফাঁক খুঁজে স্কোরবোর্ডও সচল রেখেছিল ওর ইতিবাচক মানসিকতা দিয়ে। পিচ ততক্ষণে শুকনো হয়ে যাওয়ায় সাবলীল ইনিংস খেলতে সমস্যা হয়নি স্মিথের। ওর সাহস ও আত্মবিশ্বাসটা দারুণ লাগল।
রণনীতি ধাক্কা খাওয়ায় জেসন হোল্ডারের ভাবনাতেও প্রভাব পড়েছিল। যার প্রভাব পড়ে নেথান কুল্টার-নাইল ব্যাট করার সময়। কুল্টার-নাইল অনসাইডে বেশি মারছে দেখার পরেও ওকে অফসাইডে বলই করল না ক্যারিবিয়ান বোলাররা। আর মিড উইকেট, স্কোয়ার লেগ অঞ্চল দিয়ে মজায় রান তুলল নেথান।
সব শেষে স্টার্ক। একে বাঁ হাতি। তার উপর রিভার্স সুইং হাতে রয়েছে। শেষের দিকের ওভারে ওকে খেলাই দুষ্কর। এ দিন সেই গতি ও সুইং কাজে লাগিয়েই স্টার্ক ফেরায় ক্রিস গেল, আন্দ্রে রাসেল, কার্লোস ব্রাথওয়েট, জেসন হোল্ডারদের। এর মধ্যে হোল্ডার ছাড়া রাসেল ও ব্রাথওয়েট ভুল শট খেলে আউট। তবে স্টার্কের বলে গেলের এলবিডব্লিউ আউট হওয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।। সিমরন হেটমায়ার ভাগ্য খারাপ থাকায় ফিরে যায় রান আউট হয়ে। না হলে কিন্তু এই ম্যাচটা বার করে নিতে পারত হোল্ডাররাও।
স্কোরকার্ড
অস্ট্রেলিয়া ২৮৮ (৪৯)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৭৩-৯ (৫০)
অস্ট্রেলিয়া
ওয়ার্নার ক হেটমায়ার বো কটরেল ৩•৮
ফিঞ্চ ক হোপ বো থমাস ৬•১০
খোয়াজা ক হোপ বো রাসেল ১৩•১৯
স্মিথ ক কটরেল বো থমাস ৭৩•১০৩
ম্যাক্সওয়েল ক হোপ বো কটরেল ০•২
স্টোয়নিস ক পুরান বো হোল্ডার ১৯•২৩
ক্যারি ক হোপ বো রাসেল ৪৫•৫৫
নাইল ক হোল্ডার বো ব্রাথওয়েট ৯২•৬০
কামিন্স ক কটরেল বো ব্রাথওয়েট ২•৬
স্টার্ক ক হোল্ডার বো ব্রাথওয়েট ৮•৯
জ়াম্পা ন. আ. ০•০
অতিরিক্ত ২৭
মোট ২৮৮ (৪৯)
পতন: ১-১৫ (ফিঞ্চ, ২.২), ২-২৬ (ওয়ার্নার, ৩.৬), ৩-৩৬ (খোয়াজা, ৬.৬)), ৪-৩৮ (ম্যাক্সওয়েল, ৭.৪), ৫-৭৯ (স্টোয়নিস, ১৬.১), ৬-১৪৭ (ক্যারি, ৩০.৪), ৭-২৪৯ (স্মিথ, ৪৪.২), ৮-২৬৮ (কামিন্স, ৪৬.১), ৯-২৮৪ (কুল্টার নাইল, ৪৮.২), ১০-২৮৮ (স্টার্ক, ৪৮.৬)।
বোলিং: ওসেন থমাস ১০-০-৬৩-২, শেল্ডন কটরেল ৯-০-৫৬-২, আন্দ্রে রাসেল ৮-০-৪১-২, কার্লোস ব্রাথওয়েট ১০-০-৬৭-৩, জেসন হোল্ডার ৭-২-২৮-১, অ্যাশলে নার্স ৫-০-৩১-০।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
গেল এলবিডব্লিউ বো স্টার্ক ২১•১৭
লুইস ক স্মিথ বো কামিন্স ১•৫
হোপ ক খোয়াজা বো কামিন্স ৬৮•১০৫
পুরান ক ফিঞ্চ বো জ়াম্পা ৪০•৩৬
হেটমায়ার রান আউট ২১•২৮
হোল্ডার ক জ়াম্পা বো স্টার্ক ৫১•৫৭
রাসেল ক ম্যাক্সওয়েল বো স্টার্ক ১৫•১১
ব্রাথওয়েট ক ফিঞ্চ বো স্টার্ক ১৬•১৭
নার্স ন. আ. ১৯•১৮
কটরেল বো স্টার্ক ১•২
থমাস ন. আ. ০•৪
অতিরিক্ত ২০ মোট ২৭৩-৯ (৫০)
পতন: ১-৭ (লুইস, ১.৪), ২-৩১ (গেল, ৪.৫), ৩-৯৯ (পুুরান, ১৯.১), ৪-১৪৯ (হেটমায়ার, ২৭.২), ৫-১৯০ (হোপ, ৩৪.৬), ৬-২১৬ (রাসেল, ৩৮.৫), ৭-২৫২ (ব্রাথওয়েট, ৪৫.৩), ৮-২৫২ (হোল্ডার, ৪৫.৬), ৯-২৫৬ (কটরেল, ৪৭.৩)।
বোলিং: মিচেল স্টার্ক ১০-১-৪৬-৫, প্যাট কামিন্স ১০-৩-৪১-২, নেথান কুল্টার-নাইল ১০-০-৭০-০, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ৬-১-৩১-০, অ্যাডাম জ়াম্পা ১০-০-৫৮-১, মার্কাস স্টোয়নিস ৪-০-১৮-০।