রাজসিক: ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরির পরে ধওয়ন। ছবি: এএফপি
ছোটবেলা থেকে একটা জিনিস শিখেছি, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করলে যে কোনও বোলারের বিরুদ্ধে সফল হওয়া যায়। রবিবার শিখর ধওয়নের ইনিংসে সেটাই সব চেয়ে বেশি নজর কাড়ল। প্রথম দশ ওভারে শিখর কিন্তু নিজের চেনা ছন্দে ব্যাট করতে পারছিল না। তবুও দিনের শেষে ওর নামের পাশে ১১৭ রান। পরিস্থিতির সঙ্গে কী ভাবে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়, তা রবিবার ওভালে দেখিয়ে দিল শিখর।
খুবই দৃঢ় মানসিকতার ছেলে শিখর। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ওকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। তখনই দেখেছিলাম, যদি কোনও শট খেলতে গিয়ে ও আউট হত, নেট শেষ হওয়ার পরে ঘণ্টাখানেক সামনে থেকে ছোড়া বলে প্র্যাক্টিসের সাহায্যে একাধিক বার সেই শট অনুশীলন করে নিজেকে শুধরে নিত শিখর।
একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝানো যাক। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে যখন ব্যাটিং কোচ ছিলাম, সেই সময় শিখর এবং সুরেশ রায়না আমাদের শিবিরে এসেছিল। বরাবর শর্ট বলের বিরুদ্ধে শিখর খুব শক্তিশালী। কিন্তু কভার ড্রাইভ খেলতে সমস্যা হত ওর। বল সামান্য সুইং করলে আর সামলাতে পারত না। নেট শেষ হয়ে যাওয়ার পরে আমাকে আলাদা করে একটি নেটে নিয়ে গিয়ে ঘণ্টাখানেক থ্রো-ডাউনে অনুশীলন করত ও। এই খিদেটা দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম, ও লম্বা রেসের ঘোড়া। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেই সমস্যা থেকে রেহাই পেল শিখর। বর্তমানে ইংল্যান্ডের পরিবেশে অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান। কভার ড্রাইভ ওর অন্যতম অস্ত্র হয়ে উঠেছে।
দিনে এক বার অনুশীলন করে মন ভরত না ওর। সকালে নেট করলেও বিকেলে ফের ‘নকিং’ করার জন্য মাঠে ছুটত। অনেক বকুনিও খেয়েছে। কিন্তু ওর পরিচিত হাসি দিয়ে সবাইকে ভুলিয়ে রাখত। ম্যাচ প্র্যাক্টিসে শূন্য করলেও ভেঙে পড়তে দেখিনি ওকে। কোথায় ভুল হয়েছে, কোথায় উন্নতি প্রয়োজন, সাধারণত সেই লক্ষ্য নিয়ে পরিশ্রম করে যেত।
শিখরের ব্যাটিং দেখে অনেকের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে, শর্ট বলের বিরুদ্ধে কী করে এত সফল ও? তার বড় কারণ অবশ্যই দিল্লির স্থানীয় ক্রিকেট। দিল্লির স্থানীয় ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা আমারও আছে। ফিরোজ শা কোটলা বাদে দিল্লির বাকি মাঠের উইকেটে কিন্তু বাউন্স থাকে। তাই দিল্লির ব্যাটসম্যানেরা উইকেটের আড়াআড়ি শট খেলতে পছন্দ করে। এ ধরনের মাঠে খেলেই উঠে এসেছে শিখর। তাই ওভালের পিচে সামান্য বাউন্স কিন্তু শিখরকে বেকায়দায় ফেলতে পারেনি। মার্কাস স্টোয়নিস, নেথান কুল্টার-নাইলের শর্ট বল অনায়াসে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দিচ্ছিল স্কোয়ার কাট ও আপার কাট করে।
শুরুর সাত ওভার যে ভাবে শিখর সামলেছে তা সত্যি প্রশংসনীয়। শরীরের বাইরে ও খেলতে পছন্দ করে। তাই ওকে বেশি জায়গা দিচ্ছিল না প্যাট কামিন্স ও মিচেল স্টার্ক। কিন্তু কোনও ঝুঁকি না নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রেখেছে। অষ্টম ওভারে কুল্টার-নাইল বল করতে আসা মাত্রই অন্য রূপে দেখা যায় ধওয়নকে। কুল্টার-নাইলকে বাধ্য করে শরীরের বাইরে বল করতে। সেই ওভারে তিনটি চার মেরে ছন্দ ফিরে পায় বাঁ-হাতি ওপেনার। একজন ব্যাটসম্যান তখনই সফল, যখন সে বোলারকে বাধ্য করবে তার প্রিয় জায়গায় বল করতে। এ দিন শিখর সেটাই করে দেখাল।
ক্রিকেটীয় ভাষায় আমরা যাকে বলি ‘স্মার্ট ক্রিকেটার’ শিখর কিন্তু তাই। কোন বোলারকে আক্রমণ করতে হয় আর কাকে সম্মান দিতে হয়, সেটা ও বুঝেশুনে ব্যাটিং করে। স্টার্ক ও কামিন্সকে যে বেশি আক্রমণ করা উচিত নয় সেটা বুঝতে পেরেছিল। তাই মিডিয়াম পেসার কুল্টার-নাইলকে আক্রমণ করা শুরু করে। সেই আগ্রাসী মনোভাব নিয়েই অ্যাডাম জ়াম্পা, মার্কাস স্টোয়নিস ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বিরুদ্ধে ব্যাট করল। রবিবার ওভালের মাঠে পঞ্চম ইনিংস খেলল ধওয়ন। সেই পাঁচ ইনিংসের মধ্যে তিনটিতেই সেঞ্চুরি রয়েছে ওর। যা দেখলেই বোঝা যায় ইংল্যান্ডের মাঠ কতটা ও পছন্দ করে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।