জেমাইমা রড্রিগেজ। ভারতের মিডল অর্ডারের অন্যতম ভরসা তিনি। ব্যাটিংয়ের জন্য তিনি বহু বার এসেছেন শিরোনামে। এই মুহূর্তে টি২০ বিশ্বকাপ ফাইনালের জন্য জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে তাঁর।
১৯ বছরের জেমাইমা আক্ষরিক অর্থেই অলরাউন্ডার। শুধু ক্রিকেটেই যে তাঁর হাত পোক্ত তা নয়, দারুণ হকিও খেলেন তিনি। তার উপর বলিউড নাচেও দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। সম্প্রতি বলিউড গানে তাঁর নাচের ভিডিয়ো ভাইরালও হয়েছে। তাঁকে ‘ভারতীয় ক্রিকেটের রকস্টার’ও বলছেন নেটাগরিকদের একাংশ।
জেমাইমার জন্ম ২০০০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ের ভানদুপে। তবে এখন সচিন তেন্ডুলকরের বান্দ্রার বাড়ির নিকটতম প্রতিবেশী জেমাইমা। দুই ক্রিকেটারের ব্যবধান মাত্র এক দেওয়ালের।
দু’বছর বয়স থেকেই জেমাইমা পুতুলের বদলে প্লাস্টিকের বল নিয়ে খেলতেন। ছোট মেয়েটার খেলার প্রতি এত আগ্রহ দেখে তিন বছরের জন্মদিনে ঠাকুরদা একটা ব্যাট কিনে দিয়েছিলেন। সেই থেকেই নাকি তাঁর ক্রিকেটার হয়ে ওঠার ইচ্ছা বেড়ে যায়।
বাবা ইভান রড্রিগেজ জেমাইমার স্কুলেরই জুনিয়র কোচ। স্কুলেই মেয়েকে নিজের অধীনে ক্রিকেটে কোচিং দেওয়া শুরু করেন তিনি।
বাবা ইভানও কলেজ জীবনে ক্রিকেটার হতে চাইতেন। ক্লাব ক্রিকেটও খেলেছেন। কিন্তু পারিবারিক সমস্যার জেরে বেশি দূর এগোতে পারেননি।
বিয়ের পর জেমাইমার স্কুলেই কোচিং করানোর চাকরি পান তিনি। সেই অর্থেই মেয়েকে ক্রিকেটার তৈরি করেছেন।
সেই রোজগার থেকেই ঘরে বোলিং মেশিন কিনে মেয়েকে বাড়িতে অনুশীলন করিয়েই রপ্ত করিয়েছেন কভার ড্রাইভ, ব্যাকফুট ড্রাইভ, হুক, পুল, স্কোয়ার কাট। এই কঠোর অনুশীলনের সুফলেই এখন জেমাইমা উইকেটের চারদিকে শট নিতে পারেন।
মা লবিতা একজন পুষ্টি বিশারদ এবং ক্রীড়াপ্রেমী। মেয়ের পুষ্টিগুণের বিষয়ে খেলার রাখার সমস্ত দায়িত্বই তাই তাঁর।
জেমাইমা কিন্তু প্রথমে হকি খেলতেও বেশি ভালবাসতেন। মু্ম্বই অনূর্ধ্ব ১৯ হকি দলে তিনি খেলেছেন। তখন ভারতীয় হকি দলের কোচ জোয়াকিম কারভালহো তাঁর খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন।
ক্রিকেটে জেমাইমার উত্থান কী ভাবে? তাঁর দুই দাদা এলি ও এলক। তারা ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে অনুশীলন করতেন ভারতীয় ক্রিকেটার পৃথ্বী শ-র সঙ্গে। দুই দাদার সঙ্গেই জেমাইমা বাড়িতে ক্রিকেট খেলতেন।
২০০৮ সালে বান্দ্রার ক্লাবে ট্রায়াল হচ্ছিল। সেখানে দাদাদের সঙ্গে ট্রায়াল দিতে যায় ছোট্ট জেমাইমাও। কিন্তু মেয়ে বলে তাঁকে ডাকা হচ্ছিল না। জেমাইমার বাবা শেষমেশ সে দিন ট্রায়াল দেখতে আসা সচিনের গুরু রমাকান্ত আচরেকরের কন্যা কল্পনার কাছে আবেদন করেন। কল্পনা আয়োজকদের অনুরোধ করলে ট্রায়ালে নামতে পারে জেমাইমা।
মাত্র ১২ বছর বয়সে ২০১২-’১৩ ক্রিকেট মরসুমে অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট দলে খেলার সুযোগ পান তিনি। স্মৃতি মন্ধানার পর জেমাইমা দ্বিতীয় মহিলা ক্রিকেটার যিনি ৫০ ওভারের ম্যাচে দ্বিশতরান করেছেন। ২০১৭ সালে সৌরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ১৬৩ বলে ২০২ রান করেন তিনি।
২০১৮ সালে ভারতীয় মহিলা দলে সুযোগ পান তিনি। হরমনপ্রীত কৌরের থেকে ওডিআই ক্যাপ পরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। এই মুহূর্তে ভাল ফর্মে রয়েছেন জেমাইমা। ফাইনালে কতটা প্রভাব ফেলতে পারেন, সে দিকেই তাকিয়ে তাঁর পরিবার।
চলতি টি২০ বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত ৯৪টি বল খেলে ৮৫ রান করেছেন তিনি। তাঁর ব্যাটিং গড় ২৮.৩৩।