বন্ধুরা, পৃথিবী নিউজিল্যান্ডকে কী ভাবে চেনে? চেনে পর্যটনে। বোঝে আমাদের রাগবি টিমটাকে। তোমরাই বলো, এটা হবে কেন? আমরাও দেশের হয়ে খেলি। রাগবি প্লেয়ারদের মতো আমরাও পারফর্মার। আমাদের এমন এক পরম্পরার জন্ম দিতে হবে যে, লোকে নিউজিল্যান্ড বলতে শুধু আমাদের বুঝবে। বুঝবে আমাদের ক্রিকেটকে। সময় লাগবে, কিন্তু হবে না, তা তো নয়।
ছোটবেলায় যখন জিজ্ঞেস করা হত বড় হয়ে কী হতে চাও, আমরা সবাই বলতাম এক দিন দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলব। আমি আর নেই, কিন্তু তোমরা আছো। আরও একটা সুযোগ পাচ্ছ দেশের ক্রিকেটকে উঁচু জায়গায় নিয়ে যাওয়ার। বিশ্বকাপে ব্যর্থতার কথা না ভেবে নিজেদের হান্ড্রেড পার্সেন্ট দাও। আপ্রাণ লড়ে যাও। বাকি যা হবে, দেখা যাবে।
বিশ্বে নিজেদের সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রমাণ করতে গেলে সবার আগে মনের ভয়, হতাশা তাড়াতে হবে। কাউকে, কোনও টিমকে ভয় পেলে চলবে না। হতাশায় ভোগা চলবে না। নেগেটিভ যা কিছু আছে, বাদ দিতে হবে। আমি যেমন মদ্যপান ছেড়ে দিয়েছিলাম। কেন জানো? কারণ লোকে বলে মানুষ মদ্যপান করে হতাশায়। আমি ক্রিকেটার। দেশের প্রতিনিধিত্ব করি। হতাশা আমার মধ্যে ঢুকবে কেন?
উপরের লাইনগুলো যাঁর, তিনি ব্ল্যাক ক্যাপস সমাজে তো বটেই, ভারতীয় ভূখণ্ডেরও বড় চেনা। ছোট করে ছাঁটা চুল, কোঁচকানো চোখ, হাতের ট্যাটু, সর্বক্ষণ চিবিয়ে চলা চুইংগাম— গোটা ক্রিকেটবিশ্বে তাঁর এমন এক ভয়াল ভাবমূর্তি তৈরি করে রেখেছিল যে, বোলাররা দেখলে কাঁপত। রাতে ঘুম হত না। বাইশ গজেও কম বলশালী কীর্তির অধীশ্বর নন তিনি। আইপিএলে তাঁর এক সময়ের অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে মনে রাখবেন, ‘মোস্ট ডেঞ্জারাস’ ব্যাটসম্যান হিসেবে। আইপিএল— তার তো জন্মই হয়েছিল ‘বাজ’ নামের এই চরিত্রের হাত ধরে। তাঁর বিখ্যাত ১৫৮ থেকে। ভিভ রিচার্ডস, তিনিও বা কী করে ভুলে যাবেন? ক্যারিবিয়ান কিংয়ের দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড তো টুকরো করে দিয়েছিলেন ইনিই, জীবনের শেষ টেস্ট খেলতে নেমে।
ব্রেন্ডন ম্যাকালামকে এ বার নিশ্চয়ই চেনা যাচ্ছে।
আর বক্তাকে চেনা গেলে শ্রোতার আন্দাজ পাওয়াও মোটেও কঠিন হওয়া উচিত নয়। ঠিকই, শ্রোতাদের কারও নাম মার্টিন গাপ্টিল। কাউকে কাউকে ক্রিকেট চেনে কোরি অ্যান্ডারসন বা টিম সাউদি নামে। প্রেক্ষাপট? কেন, নিউজিল্যান্ডের প্রাক্-বিশ্বকাপ প্রস্তুতি।
সোমবার জামথা স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে নিউজিল্যান্ড কভার করতে আসা একমাত্র ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাংবাদিক বলছিলেন যে, টিমের উপর প্রভাবে প্রয়াত মার্টিন ক্রো-কে যদি এক নম্বরের সিংহাসন ছেড়ে দিতে হয়, তা হলে অবিসংবাদী দু’নম্বর জায়গাটা নিয়ে চলে যাবেন ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। গত বছর অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে টিমকে ফাইনালে নিয়ে যাওয়ার পর যেটা আরও বেড়েছে। শোনা গেল, ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযানের আগে সদ্যপ্রাক্তন সতীর্থদের সঙ্গে দেখা করে উদ্দীপক বক্তৃতা দেওয়াই শুধু নয়, টিমের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন নিয়মিত। খোঁজ রাখেন টিমে কী চলছে। এবং তিনি খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট যতই কেন উইলিয়ামসনকে অধিনায়ক বেছে নিক না কেন, ক্যাপ্টেন বলতে টিম এখনও শুধু মাঝারি উচ্চতার ওই ডাকাবুকো লোকটাকেই বোঝে।
ভুল নয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে ক্রো-র প্রসঙ্গ উঠতে শ্রদ্ধায় যেমন বর্তমান ব্ল্যাক ক্যাপস অধিনায়ককে ডুবে যেতে দেখা গেল, ঠিক একই রকম মুগ্ধ শোনালো ম্যাকালাম নিয়ে প্রশ্নে। উইলিয়ামসনকে দু’টো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। আইসিসি টুর্নামেন্টের আগে তাঁর অবসর আটকানোর কোনও চেষ্টা নিউজিল্যান্ড টিম থেকে করা হয়েছিল কি না? আর দু’নম্বর, পূর্বসূরির থেকে অধিনায়কত্ব নিয়ে তিনি কী কী শিখেছেন? উইলিয়ামসন বললেন যে, তাঁরা ভাগ্যবান ম্যাকালামকে অধিনায়ক হিসেবে পেয়েছিলেন বলে। “ওর সঙ্গে এখনও আমরা যোগাযোগ রাখি। ওর সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলোর কথা ভাবলে এখনও অসম্ভব ভাল লাগে।” বলে ফের জুড়ে দিলেন, “অনেক কিছু শিখেছি ওর থেকে। আর ও তো শুধু আমাদের টিমকে পাল্টে দেয়নি। গোটা দুনিয়া জুড়ে নিউজিল্যান্ড টিম সম্পর্কে ধারণাই পাল্টে দিয়েছিল। আপনারা বলছেন, ওকে প্লেয়ার বা অধিনায়ক হিসেবে আমরা আর পাব না। ঠিকই। এই দু’টো জায়গাতেই ও অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের এ বার নতুন একটা স্টাইল খুঁজে বার করতে হবে। ব্রেন্ডনকে তো আর চাইলেও পাওয়া যাবে না। আমরা এখনও বিশ্বাস করি ওর মধ্যে অনেক ক্রিকেট বাকি ছিল।”
কথা শুনলে মনে হবে, টিম কেন। কে যে আজও ব্ল্যাক ক্যাপসের আসল অধিনায়ক, সেটা তাদের অধিনায়কই স্বয়ং জানেন। কিন্তু ব্রেন্ডন আচমকা ছাড়লেনই বা কেন? সাংবাদিক মহলের খবর, ব্রেন্ডনের পিঠ আর হাঁটুর অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছিল। গল্ফ খেলা বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। আর আশ্চর্য লাগবে শুনলে, গল্ফের প্রতি নাকি বিগ ম্যাকের বরাবরের অদ্ভুত ভালবাসা। সংক্ষেপে, জীবন।
আসল কারণ যা-ই হোক, বাস্তব হল ব্রেন্ডন ম্যাকালাম টিমে আজ আর নেই। অবসর নিয়ে ফেলেছেন, টিমকেও আজ থেকে বিশ্বকাপে নামতে হবে তাঁকে ছাড়া। কিন্তু বাস্তব যে সব সময় সত্যি বলে, সেটাও বা কে বলল?
ব্রেন্ডন ম্যাকালাম আজ থেকে অবশ্যই নামবেন। গোটা টুর্নামেন্ট খেলবেন। শুধু অদৃশ্য ভাবে, নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেনের জার্সিতে!