মহড়া: শুক্রবার অনুশীলনে মগ্ন ক্রোমা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
তারুণ্য বনাম অভিজ্ঞতার দ্বৈরথ!
সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের দল ইন্ডিয়ান অ্যারোজের ফুটবলারদের অধিকাংশই সদ্য আঠারো পেরিয়েছেন। কেউ আবার মধ্য উনিশে। এগারো দলের আই লিগে সবার শেষে থাকা বিদেশিহীন দলের একঝাঁক তরুণই আতঙ্ক ইস্টবেঙ্গলের!
শুক্রবার সকালে যুবভারতী সংলগ্ন মাঠে সকাল ন’টায় অনুশীলনে নামার কথা ছিল মার্কোস খিমেনেস দে লা এসপারা মার্তিনদের। কিন্তু চল্লিশ মিনিট পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কাউকে দেখা যায়নি মাঠে। ড্রেসিংরুমের দরজা বন্ধ করে তখন ফুটবলারদের বিশেষ ক্লাস নিচ্ছেন সদ্য যোগ দেওয়া সহকারী কোচ মার্সাল সেভিয়ানো।
ফুটবলের পরেই বার্সেলোনার বাসিন্দা সেভিয়ানোর প্রিয় বিষয় ইতিহাস। জেনারেল ফ্র্যাঙ্কোর বিরুদ্ধে বার্সেলোনার মানুষের লড়াইয়ের ইতিহাস। আঠারো বছর কতটা দুঃসহ, বাংলার কবির মতো মার্সালের কাছেও হয়তো তা অজানা নয়। সেই কারণেই নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন না। ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে তাই যুবভারতীর অনুশীলন মাঠে ড্রেসিংরুমের দরজা বন্ধ করে অভিজ্ঞতায় ভরপুর মার্কোস, খাইমে সান্তোস কোলাদো, কাশিম আইদারা, লালরিনডিকা রালতে থেকে সামাদ আলি মল্লিক— সকলকে চেন্নাই সিটি এফসির বিরুদ্ধে জয় ভুলে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিলেন। অনুশীলনের ফাঁকেও ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। আগের দিন সাংবাদিক বৈঠকে ইস্টবেঙ্গলের আর এক সহকারী কোচ বাস্তব রায় বলেছিলেন, ‘‘অ্যারোজের ফুটবলারেরাও ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ। ওদের হাল্কা ভাবে নিলে বিপর্যয় অনিবার্য।’’ দুই কোচের মতো ফুটবলারেরও বলে গেলেন, ‘‘অ্যারোজ ম্যাচটা একেবারেই সহজ হবে না। সবাই তরুণ ফুটবলার। সামান্য ভুলও করা যাবে না।’’ শনিবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে পৌঁছে ম্যাচের আগে ফুটবলারদের সম্ভবত একই কথা বলবেন নতুন কোচ মারিয়ো রিভেরা।
আরও পড়ুন: পাপাদের দাপটে ধরাশায়ী চেন্নাই
লাল-হলুদ শিবিরে অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন অ্যারোজ কোচ সন্মুগম বেঙ্কটেশ। জাতীয় দলের প্রাক্তন তারকা বলছিলেন, ‘‘আমাদের সব চেয়ে বড় সুবিধে, ছেলেরা কাউকে ভয় পায় না। ফলের কথা ভেবে কেউ মাঠে নামে না। ওদের লক্ষ্য ভারতের সিনিয়র দলের হয়ে খেলা।’’ চিন্তিত বাস্তব বলছিলেন, ‘‘অ্যারোজ প্রচণ্ড গতিতে খেলে। ফুটবলারদের ফিটনেসও দুর্দান্ত।’’
শুক্রবার সকালে ইস্টবেঙ্গল অনুশীলনের প্রায় পুরোটা জুড়েই ছিল অ্যারোজের দৌড় থামানোর মহড়া। সাধারণত ম্যাচের আগে ফুটবলারদের দু’দলে ভাগ করে খেলানো হয়। এ দিনও তাই হল। কিন্তু অন্যান্য দিনের মতো প্রথমে অর্ধেক মাঠে। পরে পুরো মাঠে অনুশীলন ম্যাচ খেলতে দেখা যায়নি।
বাস্তব-মার্সাল জুটি শুক্রবার মাঠের আয়তন আরও কমিয়ে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ অর্ধেক মাঠের অর্ধেক অংশ ব্যবহার করলেন অনুশীলন ম্যাচে। পরিকল্পনা স্পষ্ট— শনিবার কল্যাণীতে অ্যারোজের ফুটবলারদের বল নিয়ে দৌড়নোর সুযোগ না দেওয়া। দ্বিতীয়ত, বিপক্ষের আক্রমণের সময় অ্যারোজের ফরোয়ার্ড ও মিডফিল্ডারেরা রক্ষণে নেমে আসেন দলকে সাহায্য করতে। ফলে অগ্নিপরীক্ষার মুখে পড়তে চলেছেন আনসুমানা ক্রোমা, মার্কোস, কোলাদোরা। এই পরিস্থিতিতে গতিকে অস্ত্র করে ঘনঘন জায়গা বদলে বিপক্ষের রক্ষণে ফাটল ধরানোই রণনীতি লাল-হলুদ শিবিরের। তাতেও যদি গোলের দরজা না খোলে তার জন্য সেট-পিসের মহড়াও চলল।
অনুশীলন শেষ হওয়ার পরে অধিকাংশ ফুটবলার ড্রেসিংরুমে ফিরে গেলেও মাঠ ছাড়েননি কোলাদো। আগের ম্যাচে চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে পেনাল্টি নষ্ট করছেন। পরে ফের পেনাল্টি থেকেই গোল করেছিলেন। যদিও চেন্নাই ম্যাচের পরে তিনি দাবি করেছিলেন, পেনাল্টি নষ্ট খেলারই অঙ্গ। তিনি একেবারেই উদ্বিগ্ন নন। শুক্রবার সকালে কোলাদোকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল, পেনাল্টি নষ্টের যন্ত্রণা এখনও কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে তাঁর মনে। অনুশীলন শেষের পরে একের পর এক পেনাল্টি কিক নিয়ে গেলেন।
অ্যারোজের বিরুদ্ধে ম্যাচটা আরও এক জনের কাছেও প্রমাণ করার। তিনি, মার্তি ক্রেসপি। গোকুলম এবং মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ডার্বিতে হারের জন্য স্পেনীয় ডিফেন্ডারকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন সমর্থকেরা। তার উপরে কার্ড সমস্যায় আগের ম্যাচে খেলতে পারেননি তিনি। মেহতাব সিংহ, আশির আখতার অসাধারণ খেলেছিলেন চেন্নাই ম্যাচে। ফলে শনিবারের ম্যাচে ক্রেসপির প্রথম একাদশে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে। স্পেনীয় ডিফেন্ডার মার্কোসকে ডেকে নিয়ে অনুশীলন করলেন। কয়েক দিন আগে স্পেনীয় স্ট্রাইকারেরও যে তাঁর মতোই হাল ছিল। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে গোল করে সমালোচনার জবাব দিয়েছেন মার্কোস। এ বার পরীক্ষা ক্রেসপির।
শনিবার আই লিগে: ইস্টবেঙ্গল- ইন্ডিয়ান অ্যারোজ (কল্যাণী, বিকেল ৫.০০)।