উল্লাস: গোলদাতা খুয়ানকে (মাঝে) নিয়ে উৎসব সতীর্থদের। এআইএফএফ
পাহাড়ে উঠেই শেষ পর্যন্ত ঝলমল করল লাল-হলুদ জার্সি। আই লিগের প্রথম দুটি ম্যাচ ড্র করার পরে সমালোচনায় বিদ্ধ ইস্টবেঙ্গল মঙ্গলবার দুপুরে ঘুরে দাঁড়াল কয়েক হাজার ওয়াটের আলো ছড়িয়ে।
তিন স্পেনীয় ফুটবলারের দাপটে শুধু বড় ব্যবধানে জেতাই নয়, বহু দিন পরে আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের দল দেখাল নেরোকার মতো প্রতিপক্ষকেও তারা দুমড়ে-মুচড়ে দিতে পারে।
দু’অর্ধে দু’টো গোল হল পেনাল্টি থেকে। করলেন খাইমে সান্তোস কোলাদো। নেরোকার বক্সের বাইরে থেকে অসাধারণ একটা ফ্রি-কিকে গোল করে জাত চেনালেন খুয়ান মেরা গঞ্জালেস। আর শেষ গোলটি এল মার্কোস এসপারা মার্তিনের মাথা ছুঁয়ে। সেই মার্কোস, যাঁর খেলা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে ক্লাবের অন্দরে। খুমন লামপাক স্টেডিয়ামে শীতের বিকেলে চোখ ধাঁধানো জয়ের পরে ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচকে তাই বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘মার্কোসের খেলা দেখতে ভাল লাগে না। কিন্তু প্রচণ্ড পরিশ্রমী ফুটবলার। গতি একটু কম হলেও খুব কার্যকরী। যত দিন যাবে তত ভাল খেলবে।’’
গতবারের বিদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা এনরিকে এসকুয়েদাকে বাদ নিয়ে মার্কোসকে নিয়েছেন আলেসান্দ্রো। আই লিগের প্রথম দু’টি ম্যাচ ড্র করার পরে তাঁর উপরে চাপও বাড়ছিল। কোলাদোদের কোচ স্বদেশীয় স্ট্রাইকারের হয়ে ব্যাট হাতে নামবেন, সেটাই স্বাভাবিক। ইস্টবেঙ্গলের এই দলটার প্রাণভোমরা কিন্তু খুয়ান মেরা। স্পেনীয় লিগের ‘বি’ ডিভিশনের বিভিন্ন ক্লাবে খেলে আসা লাল-হলুদের এই নতুন বিদেশি মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ তুলে আনায় অসম্ভব দক্ষ। জায়গা বদল করে প্রতিপক্ষকে বোকা বানাতে ওস্তাদ। রিয়াল কাশ্মীর এবং পঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে হারতে হারতে ম্যাচ ড্র করেছিল ইস্টবেঙ্গল। দু’টি ম্যাচে দু’টি গোল করেছিল লাল-হলুদ। তার একটি গোল খুয়ান নিজে করেছিলেন, অন্যটি করিয়েছিলেন। এ দিন আলেসান্দ্রোর দলের প্রথম পেনাল্টিটা এনে দেন তিনিই। খুয়ানকে নিজেদের বক্সে ফেলে দিয়েছিলেন নেরোকার ডিফেন্ডার রোনাল্ড সিংহ। ১-০ থেকে খেলাটা ১-১ হয়ে যাওয়ার পরে দলকে চাপমুক্তও করলেন এই অ্যাটাকিং মিডিয়ো। ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ ও গোলকিপারকে টপকে গোল করেন নেরোকার বউবেকার সিয়াকা। মালির এই স্ট্রাইকার গোল করে যাওয়ার পরে খুয়ানের অসাধারণ ফ্রি-কিকের গোলটা ২-১ করে দিল। বিরতির পরে পেনাল্টি থেকে ফের গোল করেন কোলাদো। বল হাতে লাগিয়েছিলেন নেরোকার এক ডিফেন্ডার। এরপর ৩-১ থেকে ৪-১ হল পিন্টু মাহাতোর ক্রস থেকে। মার্কোসের হেড রোখার ক্ষমতা ছিল না নেরোকার বিদেশি গোলকিপার মরভিন ফিলিপের।
মণিপুরের একটি ছাত্র সংগঠনের ডাকা বনধ উপেক্ষা করে মাঠে এসেছিলেন বহু দর্শক। তাঁরা দেখলেন ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণের দায়িত্বে থাকা স্পেনীয় ত্রয়ীর দৌরাত্ম্য। যা ফালাফালা করে দিল গিফট রাইকানের রক্ষণ।। কোন রসায়নে দলের এই পরিবর্তন? ম্যাচের পরে তৃপ্ত আলেসান্দ্রো বলেছেন, ‘‘আমরা ভাল খেলছিলাম। কিন্তু গোল পাচ্ছিলাম না। দলের খেলায় আমি খুশি। জোড়া পেনাল্টি থেকে আমরা দু’টো গোল পেয়েছি ঠিক। কিন্তু সেটা তো আক্রমণে দল গিয়েছিল বলেই। আর পেনাল্টি খেলার অঙ্গ।’’ পেনাল্টি পেলেও রেফারি তানসান মোজেসরাজের বিরুদ্ধে এ দিন সরব ছিলেন কোলাদোদের কোচ। আলেসান্দ্রো বললেন, ‘‘সহকারী রেফারি অফসাইডের পতাকা তুললেও রেফারি খেলা চালিয়ে গিয়েছেন। আবার অযথা বাঁশিও বাজিয়েছেন।’’ দেখা গিয়েছে, কোলাদো প্রথম পেনাল্টি কিক মারার পরে বল জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। রেফারি তাতে গুরুত্ব দেননি। ফুটবলারদের অভিযোগ পাওয়ার পরে বিরতির সময় তা পরীক্ষা করেন তিনি। নেরোকা এমনিতে খারাপ খেলছে না। ভাল বিদেশি আছে দলে। পাহাড়ি ডার্বিতে তারা হারিয়েছিল আইজলকে। সেই দলের এই হাল কেন? নেরোকা কোচ অবশ্য দুষলেন রেফারিকে। গিফট রাইকানের মন্তব্য, ‘‘দু’টো পেনাল্টিই হয় না। বক্সের বাইরে ফ্রি-কিকও ইস্টবেঙ্গল পায় না। আমার কাছে তাই ফল ১-১।’’
নেরোকা কোচ এ সব বলে তৃপ্তি পেতেই পারেন। কিন্তু এ দিন ইস্টবেঙ্গল যে ভাবে শুরু থেকেই ম্যাচের দখল নিয়ে নিয়েছিল, তাতে পাহাড়ি দলের পক্ষে আলেসান্দ্রোর দলকে রোখা সম্ভব ছিল না।
ইস্টবেঙ্গল: লালথুমাওওয়াইয়া রালতে, সামাদ আলি মল্লিক, মার্তি ক্রেসপি, আশির আখতার, অভিষেক আম্বেকর, পিন্টু মাহাতো (ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ) , কাশিম আইদারা, খুয়ান মেরা গঞ্জালেস, কমলপ্রীত সিংহ, খাইমে সান্তোস কোলাদো (বিদ্যাসাগর সিংহ), মার্কোস এসপারা মার্তিন।