প্যারিস অলিম্পিক্সের গেমস ভিলেজ। ছবি: রয়টার্স।
চার বছর অন্তর আয়োজিত হয় অলিম্পিক্স। দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার ক্রীড়াবিদ অংশ নেন। তাঁদের থাকার জন্য তৈরি হয় আবাসন, যার পোশাকি নাম ‘গেমস ভিলেজ’। প্যারিসও তার ব্যতিক্রম নয়। সেই শহরে উঁচু বেশ কিছু অট্টালিকা তৈরি হয়েছে ক্রীড়াবিদদের রাখার জন্য। তবে আগের বারের অলিম্পিক্সগুলির তুলনায় এ বারের গেমস ভিলেজে রয়েছে বেশ কিছু চমক। দূষণ কমানোয় প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যত কম সম্ভব কার্বন নিঃসরণের দিকে নজর দেওয়া হয়েছে।
প্রতি বারই দেখা যায় এই ধরনের আবাসন তৈরি করতে গিয়ে সেই শহরের দূষণ বেড়ে গিয়েছে। তাই প্যারিস অলিম্পিক্সের আয়োজকেরা এমন পন্থা অবলম্বন করেছেন, যাতে অট্টালিকাগুলি হয়েছে পরিবেশবান্ধব। গেমস ভিলেজে ৪০টি ব্লক রয়েছে। একুশ শতকের সেরা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে বলে আয়োজকদের দাবি, যা সময়ের থেকে এগিয়ে।
গেমস ভিলেজে থাকছে ২৮০০টি ঘর। কার্বন নিঃসরণ অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। গেমস ভিলেজে পরে যাঁরা থাকবেন, তাঁদেরও অনেক সুবিধা হবে। অলিম্পিক্স এবং প্যারালিম্পিক্স শেষ হয়ে গেলে এই গেমস ভিলেজগুলি নিলামের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের হাতে অর্থের বিনিময়ে তুলে দেওয়া হবে।
কী কী বৈশিষ্ট্য রয়েছে এই গেমস ভিলেজে?
শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র নেই
আয়োজকেরা জানিয়েছেন, ভিলেজে শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের দরকার পড়বে না। এমন ভাবেই তৈরি হয়েছে, যাতে বাইরের থেকে ভিতরে অন্তত ছ’ডিগ্রি তাপমাত্রা কম থাকবে। তাপ পরিবহণের সুব্যবস্থা এবং ‘সান শেড’ থাকছে। নীচের তলায় ‘থার্মাল প্ল্যান্ট’ রয়েছে। ফলে সেখান থেকে ঠান্ডা বাতাস টেনে এনে উপরে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এতে বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের খরচও কমবে। তবে প্যারিসের গরম নিয়ে অনেক দেশই চিন্তিত। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপানের মতো কিছু দেশ সাময়িক ভাবে হালকা শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র আনতে দিয়েছে।
বহনযোগ্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র। ছবি: রয়টার্স।
উন্নত মানের কংক্রিট
প্রতি স্কোয়্যার মিটারে ৩০ শতাংশ কম দূষণ হবে, এমন চুক্তিতেই আবাসন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাই নতুন কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কার্বন মেশানো কংক্রিটের বদলে কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকৃতি থেকে পাওয়া যায় এমন উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নির্মাণ। মেঝেতেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। কম কার্বনের কংক্রিটও ব্যবহার করা হয়েছে। আবাসন তৈরি করা রিয়েল এস্টেটের কর্ণধার জুলি বশ বলেছেন, “আমরা কৌশলগত, আর্থিক বা সৌন্দর্যের কথা মাথায় রাখিনি। কার্বন কমানোর দিকেই নজর রেখেছিলাম। কংক্রিটকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তুলে সেগুলিকেও কাজে লাগানো হয়েছে।
ভিলেজের অন্দরমহল। ছবি: রয়টার্স।
সবুজে ছয়লাপ
বড় বড় অট্টালিকা থাকলেও সবুজে যাতে খামতি না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখা হয়েছে। ভিলেজের মোট এলাকার অন্তত ৪০ শতাংশ সবুজ রাখা হয়েছে। নয় হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। আবাসনের অনুপাতে সবুজের সংখ্যা বেশি। এর ফলে জল পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা সহজ হবে। পাশাপাশি ভিলেজও ঠান্ডা থাকবে।
জলের ব্যবস্থাপনা এবং রাস্তাঘাট
নিজস্ব জল নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা ব্যবস্থা থাকছে ভিলেজে। বর্জ্য জল সংগ্রহ করে সেগুলিকে শোধন করে গাছে জল দেওয়া হবে। ‘সাইকেল বিল্ডিং’ নামের একটি পরীক্ষামূলক আবাসনে সংশোধিত জল স্নানাগারে সরবরাহ করা হবে। কিছু কিছু ফুটপাথ তৈরি করা হয়েছে ঝিনুক এবং সামুদ্রিক প্রাণীর খোলস দিয়ে। তবে কোনও সামুদ্রিক প্রাণী হত্যা করা হয়নি। ফলে সাধারণ টাইলের জায়গায় এগুলি বেশি গরম শুষে নেবে। চলাচলের বাকি রাস্তাগুলিতে কাগজ তৈরির কারখানায় পড়ে থাকা উদ্বৃত্ত এবং পাইন গাছের আঠা ব্যবহার করা হবে। তেল দেওয়া বিটুমিন থাকছে না।
ভিলেজের কাফেটেরিয়া। ছবি: রয়টার্স।
বৃত্তাকার অর্থনীতি
গেমস ভিলেজে যে তিন লক্ষ আসবাবপত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তা সবই দ্বিতীয় বার ব্যবহার করা যাবে। ভিলেজের এক ডিরেক্টর বলেছেন, “আমরা সরবরাহকারীদের সঙ্গে এমন চুক্তি সই করেছি, যেখানে প্রতিটি জিনিস আবার ব্যবহার করার বিষয়টি মেনে চলা হয়েছে।” যেমন, ক্রীড়াবিদদের বিছানা তৈরি হয়েছে কার্ডবোর্ড দিয়ে। তোশক তৈরি করা হয়েছে পুনর্ব্যবহারযোগ্য মাছ ধরার জাল দিয়ে। আগে টোকিয়ো অলিম্পিক্সেও এই জিনিস দেখা গিয়েছিল। বেশির ভাগ আসবাবপত্রই তৈরি হয়েছে বাতিল হয়ে যাওয়া কাঠ দিয়ে। রাস্তার আলোয় ব্যবহার করা হয়েছে পুনর্ব্যবহারযোগ্য স্টিলের পাইপ।
ক্রীড়াবিদদের বিছানা। ছবি: রয়টার্স।