একসঙ্গে শুরু করেন একঝাঁক ক্রিকেটার। তার মধ্যে মাত্র কয়েক জন সুযোগ পান জাতীয় দলে। বেশির ভাগ প্রতিভাই হয় হারিয়ে যান। নয়তো তাঁদের সন্তুষ্ট থাকতে হয় ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স নিয়েই। গত কয়েক বছর ধরে এটাই যুব বিশ্বকাপের পরিচিত ধারা। সে রকমই একটি বিস্মৃত প্রতিভা তন্ময় শ্রীবাস্তব।
২০০৮ সালের যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেট ভারতীয় ক্রীড়াজগতে উল্লেখযোগ্য। এই মঞ্চ থেকেই পরিচিত হন বিরাট কোহালি। কিন্তু মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টে কোহালিকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন আর এক জন। তিনি তন্ময় শ্রীবাস্তব।
এক দশকেরও বেশি আগে ওই বিশ্বকাপে বিরাট কোহালি ৬ ম্যাচে ২৩৫ রান করেছিলেন। সেখানে শ্রীবাস্তবের স্কোর ছিল ২৬২ রান। তিনি ছিলেন ভারতীয় দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দলের জয়ে তাঁর ৪৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে শ্রীবাস্তবের অভিষেক ২০০৬ সালে। নাগপুরে তিনি উত্তরপ্রদেশের হয়ে খেলেছিলেন অবশিষ্ট ভারত-এর বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে শ্রীবাস্তবের প্রতিপক্ষ দলে ছিলেন জাহির খান, লক্ষ্মীপতি বালাজির মতো ক্রিকেটার।
বাঁ হাতি এই ব্যাটসম্যান আবার অনিয়মিত ডানহাতি মিডিয়াম পেস বলও করেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর মোট রান ৪৮৯৯। সর্বোচ্চ ১৭৯। উইকেট পেয়েছেন ৩ টি।
লিস্ট এ ম্যাচে রান করেছেন ১৭২৮। টি-২০ ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৬৪৯ রান।
ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম দিকে তন্ময়ের আহামরি পারফরম্যান্স ছিল না। বরং তিনি বিস্মিত করেছিলেন অনূর্ধ্ব ১৯-এর আন্তর্জাতিক মঞ্চে। কিন্তু সেই আন্তর্জাতিক মঞ্চ ভবিষ্যতে তাঁর কাছে অধরাই থেকে যায়। জাতীয় দলের সদস্য আর হতে পারেননি তিনি।
কুয়ালালামপুরের পরে আক্ষরিক অর্থেই কোহালি আর শ্রীবাস্তবের পথ দু’দিকে চলে যায়। কোহালি যেমন নিজের প্রতিভা মেলে ধরেন, অন্যদিকে শ্রীবাস্তব ধীরে ধীরে হারিয়ে যান। তাঁর গণ্ডি সীমাবদ্ধ হয়ে যায় ঘরোয়া ক্রিকেটের গণ্ডিতেই।
কিন্তু কেন এই অবনমন? এক সাক্ষাৎকারে পরবর্তীকালে শ্রীবাস্তব জানিয়েছিলেন, অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ আর ঘরোয়া ক্রিকেটের মঞ্চের মধ্যে অনেক পার্থক্য।
শ্রীবাস্তব বলেছিলেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে আজ হয়তো খেলতে হল ধর্মশালার হাড়হিম করা ঠান্ডায়। পরের দিনই খেলা পড়ল কটক বা চেন্নাইয়ের তীব্র গরমে। সব রকম পরিবেশে লাগাতার ভাল পারফরম্যান্স না করলে জাতীয় দলের দরজা বন্ধই থেকে যাবে।
২০০৮ থেকে ২০১২ অবধি আইপিএল-এ তিনটি দলে খেলেছেন তন্ময় শ্রীবাস্তব। ২০০৮-২০১০ তিনি ছিলেন কিংস ইলেভেন পঞ্জাব-এ। তার পরের মরসুমে কোচি টাস্কার্স কেরল এবং ২০১২ সালে তিনি ছিলেন ডেকান চার্জার্স-এ।
ঘরোয়া ক্রিকেটে তন্ময় এখন খেলেন উত্তরাখণ্ড-এর হয়ে। তাঁর ক্রিকেট পরিসর এখন আটকে গিয়েছে এই স্তরেই। এক সাক্ষাৎকারে তাঁর গলায় ঝরে পড়েছে আক্ষেপ। কারণ, তাঁকে প্রায়ই শুনতে হয়, “বিরাট কোহালি কোথায় পৌঁছে গিয়েছে, আর তুমি কোথায় পড়ে আছো!”
অবশ্য তন্ময় একা নন। আরও অসংখ্য নামের সাক্ষী ভারতীয় ক্রিকেট। যাঁরা ধূমকেতুর মতো জ্বলে উঠে আবার হারিয়ে গিয়েছেন। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেকেরই প্রাথমিক সাফল্যে মাথা ঘুরে যায়। ফলে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেন না। আবার অনেকেই অল্প বয়সে আইপিএল-এ মোটা অঙ্কের অর্থের মোহে পড়ে যান।
কক্ষচ্যুত কেরিয়ারে দাঁড়িয়ে তন্ময় আর কারণ খুঁজতে যান না। শুধু সুযোগ না পাওয়ার খেদ রয়ে গিয়েছে। সেটা জানাতে ভোলেন না। বলেন, ‘‘বিরাট সুযোগ পেয়ে গেল। প্রথমে বর্ডার-গাওস্কর চ্যালেঞ্জ কাপ, তারপর ভারতীয় এ দল, তারপর জাতীয় দল।’’ কিন্তু তাঁকে হাঁটতে হল পিছন দিকে। (ছবি: আর্কাইভ ও ফেসবুক)