Turkey’s Mosque Waqf property

ওয়াকফের সম্পত্তির তালিকায় তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী ‘জাদুঘর’ হাইয়া সোফিয়া! কারা কী ভাবে করলেন দান?

গির্জা ভেঙে তৈরি হওয়া তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী হাইয়া সোফিয়া মসজিদে গড়ে ওঠে জাদুঘর। বর্তমানে সেটাও ওয়াকফের সম্পত্তি। কিন্তু কী ভাবে?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৫৯
Share:
০১ ১৮
Waqf Board

কখনও ইডেন উদ্যান। কখনও আবার সংসদ ভবন। কিংবা তামিলনাড়ুর ইতিহাস প্রসিদ্ধ চোল রাজাদের মন্দির। সংশোধিত ওয়াকফ বিলের দীর্ঘ বিতর্কে বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে এই সমস্ত জায়গার নাম। বিজেপি-শাসিত কেন্দ্রের এনডিএ জোটের অভিযোগ, এগুলিকেও তাদের সম্পত্তি বলে দাবি করেছে ওয়াকফ বোর্ড। যদিও পত্রপাঠ এই অভিযোগ খারিজ করেছে দেশের তাবড় মুসলিম সংগঠন-সহ বিরোধীরা।

০২ ১৮
Hagia Sophia Mosque

স্বাধীনতার পর থেকে ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে এ দেশে বিতর্ক কম হয়নি। ভারতের বাইরে ইসলামিক রাষ্ট্রে এই ইস্যুতে কোনও সমস্যা নেই, তা ভাবলে ভুল হবে। এ ক্ষেত্রে তুরস্কের খ্যাতনামা হাইয়া সোফিয়া মসজিদের কথা বলা যেতে পারে। ধর্মীয় স্থলটিকে জাদুঘরে পরিণত করার দাবি উঠেছিল। কিন্তু, সেটিকে ওয়াকফ বোর্ডের হাতে তুলে দেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোগান।

Advertisement
০৩ ১৮
Hagia Sophia Mosque

১৯৩৪ সালে হাইয়া সোফিয়াকে জাদুঘরে বদলে ফেলতে একটি ডিক্রি জারি করে আঙ্কারা। কিন্তু, ২০২০ সালের জুলাইয়ে তা বাতিল করে দেয় তুরস্কের সর্বোচ্চ আদালত ‘কাউন্সিল অফ স্টেট’। রায়ে বলা হয়, ওয়াকফ ইসলামীয় আইনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। একে অস্বীকার করার উপায় নেই।

০৪ ১৮

শীর্ষ আদালতের ওই নির্দেশের পর দ্রুত নতুন ডিক্রি জারি করেন এর্ডোগান। সেখানেই হাইয়া সোফিয়াকে ওয়াকফ সম্পত্তি বলে ঘোষণা করা হয়। শুধু তা-ই নয়, ৮৬ বছর পর ২০২০ সালের ২৪ জুলাই খ্যাতনামা মসজিদটিতে ফের নমাজের আয়োজন করা হয়। তাতে উপস্থিত ছিলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট-সহ দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা।

০৫ ১৮

উল্লেখ্য, যুগে যুগে নিজের রূপ বদলেছে হাইয়া সোফিয়া। বহু বার ধ্বংসের পর কখনও রোমান, কখনও আবার তুর্কিদের হাত ঘুরে নতুন সাজে সেজে উঠেছে এই খ্যাতনামা সৌধ। সয়েছে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ঝড়ঝাপ্টা। ইতিহাস বলছে, প্রাচীন যুগে ওই স্থানে ছিল একটি গ্রিক-রোমান মন্দির। এর ভিতরে নিত্য পুজো পেতেন কোনও ইউরোপীয় দেবতা।

০৬ ১৮

চতুর্থ শতকে ইউরোপ জুড়ে খ্রিস্ট ধর্মের প্রসার ঘটতে থাকে। ফলে ৩৬০ সালে হাইয়া সোফিয়ার জমিতে তৈরি হয় নতুন গির্জা, নাম ম্যাগনা এক্লেসিয়া। কিন্তু স্থানীয় দাঙ্গায় উপাসনাস্থলটি ভেঙে গুঁড়িয়ে গেলে ৪১৫ সালে স্থানীয় শাসকরা ফের তা নির্মাণ করেন। রোমানদের পতনের পর পূর্ব ইউরোপে জন্ম হয় বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের। এতে ভাগ্যবদল হয় সংশ্লিষ্ট গির্জার।

০৭ ১৮

ষষ্ঠ শতাব্দীতে বাইজান্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান হাইয়া সোফিয়ার জমিতে ফের গির্জা নির্মাণের নির্দেশ দেন। পুরনো উপাসনা ঘরটি তত দিনে প্রায় ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল। নতুন করে গির্জা তৈরি করতে পাঁচ বছর সময় লেগেছিল। নির্মাণকাজের নেতৃত্বে ছিলেন বিখ্যাত গণিতজ্ঞ ট্র্যালেসের অ্যান্থেমিয়াস এবং মিলেটাসের ইসিডোর।

০৮ ১৮

৫৩৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নতুন গির্জার উদ্বোধন করেন সম্রাট জাস্টিনিয়ান। এর মূল গম্বুজটি ছিল সোনালি। এ ছাড়া উপাসনালয়ের ভিতরের হলুদ ধাতু ও রুপোর কারুকার্য ছিল দেখার মতো। উদ্বোধনের দিন গরিবদের মধ্যে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়। কিন্তু, ৫৫৩ এবং ৫৫৭ সালে ভূমিকম্পের ফলে গির্জাটির গম্বুজ দুর্বল হয়ে পড়ে। পরের বছর (পড়ুন ৫৫৮ সাল) কিছুটা ভেঙেও পড়ে সেটি।

০৯ ১৮

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেটে গেলে গির্জাটির গম্বুজ মেরামত করা হয়। তার দায়িত্ব আবার ছিলেন মূল স্থপতির ভাইপো ইসিডোরাস। ১২০৪ সালে চতুর্থ ক্রুসেডের সময়ে লুট হয় ওই উপাসনালয়। ১২৬১ সালে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের কর্তাব্যক্তিরা সেটিকে পুনরুদ্ধার না করা পর্যন্ত গির্জাটি অনাদরে পড়ে ছিল। এর ভিতরের মূর্তিটিকে ধ্বংস করতে দু’বার ভাবেননি ধর্মযুদ্ধে যোগ দেওয়া সৈনিকেরা।

১০ ১৮

১৩১৭ সালে বাইজান্টাইন সম্রাট দ্বিতীয় অ্যান্ড্রোনিকাস গির্জাটি পুনরুদ্ধারের মরিয়া চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৩৪৪ সালে ফের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে মাটিতে মিশে যায় সেটি। ১৪৫৩ সালে অটোমান শাসক দ্বিতীয় মেহমেদ মাত্র ২১ বছর বয়সে রাজধানী কনস্টান্টিনোপল দখল করলে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের পতন ঘটে।

১১ ১৮

কনস্টান্টিনোপলে তিন দিন ধরে লুটপাট চালায় অটোমান তুর্কির দল। তাদের হাতে পড়ে ফের এক বার ধ্বংস হয় ওই গির্জা। সেই ভগ্নস্তূপের উপরে মসজিদ তৈরি করেন মেহমেদ। নাম হয় হাইয়া সোফিয়া। পরবর্তী শাসক দ্বিতীয় মহম্মদ একটি অছির কাছে মসজিদটির যাবতীয় সম্পত্তি দান করে দেন।

১২ ১৮

১৪৮১ সালে মসজিদটির ছোট মিনারগুলির নির্মাণ শেষ হয়েছিল। ওই সময় স্থানীয় বাজারের আয়ে চলত এর রক্ষণাবেক্ষণ। কিন্তু ১৯ শতকে ফের ভূমিকম্পে দুর্বল হয়ে যায় এর কাঠামো। ফলে এর পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেন সুলতান প্রথম আবদুলমেজ়িদ। মসজিদদের সঙ্গে একটি মাদ্রাসাকেও যুক্ত করেন তিনি।

১৩ ১৮

১৯ শতকে সংস্কার কাজের জন্য দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল এই মসজিদ। ১৮৪৯ সালের ১৩ জুলাই ফের সেটিকে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি ও অস্ট্রো-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের জোটে যোগ দেয় তুরস্ক। তত দিন এশিয়া মাইনর ও ইউরোপের সংযোগস্থলের দেশটির কপালে জুটে গিয়েছে ‘ইউরোপের রুগ্ন মানুষ’-এর তকমা।

১৪ ১৮

বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯২৩ সাল পর্যন্ত কনস্টান্টিনোপল দখলে রাখে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মিত্রবাহিনী। ফলে ইতিহাসের পাতায় চলে যায় অটোমান সাম্রাজ্য। ১৯২৩ সালে আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠা করেন মোস্তাফা কামাল আতাতুর্ক। ইসলামীয় শাসনের আধিপত্য থেকে আঙ্কারাকে বার করে নিয়ে আসেন তিনি।

১৫ ১৮

কামাল আতাতুর্কের হাত ধরে ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কের জন্ম হয়। ১৯২৪ সালে খিলাফত বিলুপ্ত করেন তিনি। ১৯২৮ সালে ল্যাটিন বর্ণমালা গ্রহণ করে আঙ্কারা। ১৯৩৪ সালে সেখানে ভোটাধিকার পান মেয়েরা। এই সমস্ত বদলের পাশাপাশি পরিবর্তন হয় হাইয়া সোফিয়ারও। মসজিদটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করেন তৎকালীন তুর্কি শাসকেরা।

১৬ ১৮

বিশ্লেষকদের দাবি, এর মাধ্যমে পশ্চিমি দুনিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় আঙ্কারা। ধীরে ধীরে অটোমান আমলের ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে বেরিয়ে আসে তুরস্ক। ফলস্বরূপ, ১৯৩২ সালে লিগ অফ নেশন্‌সে যোগ দেওয়ার সুযোগ পায় এককালের ‘ইউরোপের রুগ্ন মানুষ’।

১৭ ১৮

১৯৩৪ সালে হাইয়া সোফিয়াকে নিয়ে একটি ডিক্রির মূল হোতা ছিলেন কামাল আতাতুর্ক। এর মাধ্যমে রাতারাতি জাদুঘরে পরিণত হয় ওই মসজিদ। কিন্তু, ২০১৮ সালে এর্ডোগান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। তাঁকে পুরনো অটোমান সাম্রাজ্যের গোঁড়া সমর্থক বলে চিহ্নিত করেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা।

১৮ ১৮

২০২০ সালে জাদুঘর থেকে ফের মসজিদে বদলে গেলেও হাইয়া সোফিয়া ইউনেস্কোর ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম। টিকিট ছাড়াই এতে দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার রয়েছে। কিন্তু, এর্ডোগান প্রশাসন এর যাবতীয় সম্পত্তি তুলে দিয়েছে ওয়াকফের হাতে।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement