Indian Banks Deposit Crunch

বাড়ছে খরচ, কমছে আমানত, সেই সঙ্গে মুনাফার অঙ্কও, গভীর সমস্যায় দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা?

ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির আমানত কমে যাওয়ায় লাভের অঙ্ক দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সেই সঙ্গে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা উদয় কোটাক।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৫৯
Share:
০১ ১৮
Uday Kotak

ভারতের ব্যাঙ্কিং ব্যবসায় লেগেছে গ্রহণ! ঋণ দিলে লাভের বদলে উল্টে লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। অথচ বিভিন্ন খাতে লগ্নিতে বেশি সুদ পাচ্ছেন গ্রাহকেরা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন এশিয়ার ধনীতম ব্যাঙ্ক-কর্ণধার উদয় কোটাক। তাঁর দাবি, প্রতি ঋণে কমবেশি ০.৫ শতাংশ করে ক্ষতি হচ্ছে সরকারি বা বেসরকারি ব্যাঙ্কের।

০২ ১৮
Uday Kotak

কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা উদয় কোটাকের ওই মন্তব্যের পর দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি হয়েছে আশঙ্কা। কারণ, ব্যাঙ্কের উপর এটি অনেকাংশেই নির্ভরশীল। এ ব্যাপারে এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) করা একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলি আমানত ঘাটতির সমস্যায় ভুগছে। এই পরিস্থিতি বজায় থাকলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসা বেশ কঠিন হবে।’’

Advertisement
০৩ ১৮
Indian Banks (Representative Picture)

একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করছেন কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর দাবি, দেশের অন্যতম প্রধান ব্যাঙ্কগুলি বর্তমানে আট শতাংশ সুদের হারে পাইকারি আমানত (হোলসেল ডিপোজ়িট) গ্রহণ করছে। অন্য দিকে তাদের প্রান্তিক আমানত ব্যয় (মার্জিনাল ডিপোজ়িট কস্ট) প্রায় ন’শতাংশ। ফলে প্রতি দিনই ব্যাঙ্কের লাভের অঙ্ক একটু একটু করে কমছে।

০৪ ১৮

এখন প্রশ্ন হল, পাইকারি আমানত কী? যখন একটি সংস্থা কোনও ব্যাঙ্কে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রাখে, তখন সেই আমানতের উপর সুদ দিয়ে থাকে সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান। অর্থনীতির পরিভাষায় একে বলে হোলসেল ডিপোজ়িট বা পাইকারি আমানত। উল্লেখ্য, এই অর্থ ঋণ বাবদ বাজারে খাটিয়ে সুদ আদায় করে ব্যাঙ্ক। এই পদ্ধতিতে আয় এবং লাভ করে সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

০৫ ১৮

ভারতের সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ককে নিয়ন্ত্রণ করে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)। নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাঙ্কিং ব্যবসা চালু রাখার জন্য তাদের আরবিআইতে একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখতে হয়। একে বলে ক্যাশ রিজ়ার্ভ রেশিয়ো বা সিআরআর। আরবিআই কিন্তু এই জমা রাখা অর্থের উপর কোনও রকমের সুদ প্রদান করে না। ফলে এখান থেকে ব্যাঙ্কের লাভ করার কোনও সুযোগ নেই।

০৬ ১৮

দ্বিতীয়ত, সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে তাদের আমানতের একটি অংশ বাধ্যতামূলক ভাবে সরকারি শেয়ারে লগ্নি করতে হয়। আর্থিক পরিভাষায় একে বলে স্ট্যাটুটারি লিকুইডিটি রেশিয়ো বা এসএলআর। এখান থেকে ব্যাঙ্কগুলির লাভের পরিমাণ খুবই সামান্য। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একে খরচের খাতায় ধরা হয়। এ ছাড়া লগ্নিকারীদের বাধ্যতামূলক ভাবে বিমার সুবিধা দিতে হয় ব্যাঙ্ককে। অ্যাকাউন্টপিছু এর পরিমাণ পাঁচ লক্ষ টাকা।

০৭ ১৮

মজার বিষয় হল, অ্যাকাউন্টপিছু বিমার যাবতীয় প্রিমিয়াম সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক দিয়ে থাকে। তা ছাড়া আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকে স্বাবলম্বী করতে দেশে চালু রয়েছে একাধিক সামাজিক সুরক্ষামূলক প্রকল্প। তার মধ্যে অন্যতম হল ছোট ব্যবসা বা স্বনিযুক্ত গোষ্ঠীগুলিকে দেওয়া ঋণ। এর থেকে কখনওই বিপুল পরিমাণ সুদ আদায় করতে সক্ষম হয় না ব্যাঙ্ক।

০৮ ১৮

ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির লোকসানের ব্যাখ্যা দিতে দিয়ে এই কারণগুলির কথা বলেছেন কোটাক মাহিন্দ্রার প্রতিষ্ঠাতা উদয় কোটাক। তাঁর দাবি, পাইকারি আমানতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে আট শতাংশ সুদ দিতে হচ্ছে। অথচ সিআরআর, এসএলআর, বিমা এবং বিশেষ শ্রেণির জন্য দেওয়া ঋণ থেকে আয় হচ্ছে না। ফলে খরচ বাড়ছে, অথচ হ্রাস পাচ্ছে লাভের অঙ্ক।

০৯ ১৮

এই পরিস্থিতিতে ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার বৃদ্ধি করে ব্যাঙ্কগুলির মুনাফা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। কিন্তু, বিশ্ব জুড়ে আর্থিক অস্থিরতার কারণে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রেপো রেট হ্রাস করে আরবিআই। ফলে বর্তমানে রেপো রেট ৬.২৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এতে ব্যাঙ্কগুলির দেওয়া বাড়ি এবং গাড়ির ঋণ সস্তা হয়েছে। কমেছে মাসিক কিস্তির পরিমাণ। অর্থাৎ, সুদের হার বৃদ্ধি করে মুনাফার অঙ্ক যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি বৃদ্ধি করবে, আরবিআইয়ের নীতিতে বন্ধ রয়েছে সেই রাস্তা।

১০ ১৮

পাশাপাশি, দেশের আর্থিক বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে ব্যাঙ্কগুলিকে আমজনতাকে বেশি করে ঋণ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে সরকার। কম সুদের হারে বাড়ির ঋণ মঞ্জুর করায় জোর দিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে প্রবল প্রতিযোগিতা রয়েছে। ফলে এখান থেকে ব্যাঙ্কগুলির লাভ কম হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

১১ ১৮

বর্তমানে দেশের ব্যাঙ্কগুলি আরও একটি সমস্যায় ভুগছে। তা হল খুচরো আমানতের স্বল্পতা। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে বেশি লাভের আশায় সাধারণ গ্রাহক স্টক বা মিউচুয়াল ফান্ডের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বেশি বিনিয়োগ করছেন। ফলে ব্যাঙ্কগুলির আমানত কমছে। এই অবস্থায় আর্থিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে পাইকারি আমানত ধরে রাখতে বেশি সুদ দিচ্ছে ব্যাঙ্ক। এতেও লাভের অঙ্ক কমছে।

১২ ১৮

আর্থিক বিশ্লেষকদের দাবি, মুনাফা হ্রাস পেলে একটা সময়ে ব্যাঙ্কের দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার বৃদ্ধি করতে পারে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়ার চাহিদা কমার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি, এতে আর্থিক বৃদ্ধির সূচকও নিম্নমুখী হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

১৩ ১৮

ব্যাঙ্কের তহবিলে আমানত কমে গেলে সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির আরবিআই বা বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কোনও ব্যাঙ্কের জন্যেই বাজার থেকে লাগাতার ঋণ নেওয়া ভাল নয়। এতে সুদ বাবদ বিপুল টাকা সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানটিকে দিতে হয়। এতে ঋণের জালে জড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

১৪ ১৮

এ বছরের এপ্রিলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক রয়েছে। সেখানে ফের এক বার রেপো রেট কমানোর ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে সাম্প্রতিক রিপোর্টে দাবি করেছে ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকা (বিওএ)। সে ক্ষেত্রে দু’মাসের মাথায় ফের কমে যাবে বাড়ি ও গাড়ির ঋণের কিস্তি। আরবিআই শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত নিলে আরও মুনাফা কমবে ব্যাঙ্কের।

১৫ ১৮

বিওএ-র দাবি, এপ্রিল রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাবে আরবিআই। এতে সুদের হার নেমে আসবে ছ’শতাংশে। শুধু তা-ই নয়, আগামী কয়েক মাস মুদ্রাস্ফীতির হার চার শতাংশের নীচে থাকবে বলে মনে করছে ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকা। বিনিময় সুদের হারের চাপ উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পাবে বলে রিপোর্টে লিখেছে ওই আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

১৬ ১৮

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে গৃহঋণের সংখ্যা কমেছে ন’শতাংশ। ফলে এর পরিমাণ তিন শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। গৃহঋণের সংখ্যা কমার প্রভাব রিয়্যাল এস্টেট শিল্পে দেখা গিয়েছে। বিশ্লেষকদের একাংশ, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলির উপর আরবিআইয়ের কড়া নজরদারি এবং নিয়ম শিথিল করার পক্ষে সওয়াল করেছেন। এতে ব্যাঙ্কের মুনাফা বৃদ্ধি পাবে বলে যুক্তি দিয়েছেন তাঁরা।

১৭ ১৮

ব্যাঙ্কের লাভ বৃদ্ধি করতে আর্থিক বিশ্লেষকরা একাধিক পরামর্শ দিয়েছেন। তার মধ্যে অন্যতম হল ঋণের ক্ষেত্রে বৈচিত্র আনা। বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাঙ্ক গৃহঋণের উপর বেশি পরিমাণে নির্ভরশীল। সেখানে অন্য ধরনের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলিকে এগিয়ে আসার কথা বলেছেন তাঁরা। পাশাপাশি দৈনন্দিন অফিস বা কার্যপ্রণালী চালানোর খরচ কম করতে বলা হয়েছে।

১৮ ১৮

তবে ব্যাঙ্কগুলিকে মুনাফা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঋণ পুনরুদ্ধারে নজর দিতে হবে। অনেক সময় সুদসমেত ঋণের টাকা ফেরত পায় না সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এতে বাড়তে থাকে ব্যাঙ্কটির অনুৎপাদক সম্পদ (নন-পারফর্মিং অ্যাসেট বা এনপিএ)। আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক স্বাস্থ্যের জন্য যা মোটেই ভাল নয়, বলছেন বিশ্লেষকেরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement