রেফারিরা অপেক্ষায়। কল্যাণীতে।
কল্যাণীতে দল না নামানোয় সমালোচনায় ক্ষতবিক্ষত ইস্টবেঙ্গল। অনেকে বলছেন, শতবর্ষে কলঙ্কিত হল লাল-হলুদ শিবির। কেউ আবার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন, কল্যাণীতে কেন নামানো হল না দল? কলকাতা কাস্টমস-এর টিডি বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘আমরা এ রকম দৃশ্য তো আগে কখনও দেখিনি। ইস্টবেঙ্গল না খেলায় সমর্থকদের কাছে কিন্তু ভুল বার্তাই গেল।’’ বিশ্বজিতের ছেলেরা বৃহস্পতিবার কল্যাণীতে গা ঘামালেন, রেফারি-ম্যাচ কমিশনাররা অপেক্ষায় থাকলেন। অথচ ইস্টবেঙ্গলের দেখা মিলল না।
কলকাতা ময়দানে মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়ার যেমন নজির রয়েছে, তেমনই হাজার ব্যক্তিগত সমস্যার মধ্যেও খেলা ছেড়ে না যাওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বরের ডার্বির মাঝপথেই মাঠ ছেড়ে চলে গিয়েছিল মোহনবাগান। ২০১৬ সালে কল্যাণীতে অনুপস্থিত থাকে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। ফলে সে বারের ডার্বির বল গড়ায়নি। ম্যাচ না খেলে চলে যাওয়ার কলঙ্কিত ইতিহাস যেমন রয়েছে, তেমনই সন্তানের মৃত্যুর খবর বুকে চেপেও চোয়াল শক্ত করে খেলার উদাহরণ রয়েছে। ২০০৯ সালে কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহনবাগান। সে বার লিগ জয়ের দৌড়ে ছিল ইউনাইটেড স্পোর্টসও। দু’ দলের ম্যাচটা আসলে ছিল ফাইনাল। সবুজ-মেরুন শিবিরে সে বার একাধিক কোচ বদল করা হয়েছিল। লিগ নির্ণায়ক সেই ম্যাচে বাগানের কোচ ছিলেন বহু যুদ্ধের সৈনিক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য।
১০ বছর আগের সেই ম্যাচের বল গড়ানোর আগেই বাগানের নাইজেরীয় স্ট্রাইকার এডে চিডি জানতে পারেন তাঁর প্রথম সন্তান মারা গিয়েছে। প্রথম সন্তানকে হারানোর শোক বুকে চেপে চিডি খেলতে নেমেছিলেন। পেনাল্টি থেকে গোলও করেছিলেন। তার পরে খেলা শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে মাঠ ছেড়েই দেশে ফেরার বিমান ধরার জন্য দৌড়েছিলেন বিমানবন্দরে। ইউনাইটেড স্পোর্টসের কর্তা নবাব ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়েও অনেকে খেলেছে। র্যান্টি মার্টিন্সের মা মারা গিয়েছে, তবুও মরসুম শেষ করে দেশে ফিরেছিল। বেলো রজ্জাকও তাই করেছিল। ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা মাঠে না নেমে অপেশাদারিত্বেরই পরিচয় দিল।’’
আরও পড়ুন: আস্থার মর্যাদা দিতে হবে শাস্ত্রীকে, কে বললেন জানেন?
এ রকম একটা ম্যাচে কেন নামল না লাল-হলুদ ব্রিগেড? কোয়েস-ইস্টবেঙ্গলের যৌথ উদ্যোগে সিইও সঞ্জিৎ সেন ধোঁয়াশা দূর করে বলছেন, ‘‘ফুটবলাররা অপেশাদার কী ভাবে বলবো? আগের সময় আর এখনকার সময়ের মধ্যে অনেক পার্থক্য। শেষ ম্যাচটা আমাদের কবে দেওয়া হচ্ছে, সেটাই তো আমরা জানতাম না। আমাদের হাতে যদি ফুটবলারই থাকবে, তা হলে আমরা খেলব না কেন?’’
ইস্টবেঙ্গল শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাইমে কোলাডো, কোচ আলেয়ান্দ্রো মেনেন্দেজরা এ দিন সকালেই শহর ছেড়ে চলে গিয়েছেন। এমনকি ভিন রাজ্যের ফুটবলাররাও চলে গিয়েছেন যে যাঁর বাড়িতে। খবরের ভিতরের খবর, এ দিন ভোর পর্যন্ত ফুটবলারদের আনার মরিয়া চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, ফুটবলারদের পাওয়া যায়নি। সঞ্জিৎবাবু বলছিলেন, ‘‘প্লেয়ারদের আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, সাকুল্যে সাত-আট জনের বেশি ফুটবলার জোগাড় করা সম্ভব হয়নি।’’
আলেয়ান্দ্রো ফুটবলারদের আগেই ছুটি দিয়েছেন। সমর্থকদের মনে প্রশ্নের ঝড়, ৩ তারিখ কল্যাণীতে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। অথচ তার আগে কোচ কেন ছুটি দিয়ে দিলেন? সঞ্জিৎবাবু বলছেন, ‘‘আগের সূচি অনুযায়ী, কলকাতা লিগ আরও আগে শেষ হওয়ার কথা ছিল। সেই মতোই কোচ ফুটবলারদের আরও আগে ছুটি দিয়েছিলেন। আমার কথামতোই আরও সপ্তাহখানেক পরে ফুটবলারদের ছুটি দেওয়া হয়। ১ অক্টোবর শুনেছিলাম ৩ অক্টোবর ম্যাচ হতে পারে আমাদের। সে দিনই আমি জানিয়ে দিয়েছিলাম ৩ অক্টোবর আমাদের পক্ষে নামা কোনওমতেই সম্ভব নয়। কারণ আমার হাতে ফুটবলারই নেই। এখনও পর্যন্ত সরকারি ভাবে আমাদের জানা নেই ম্যাচটা ৩ তারিখে ফেলা হয়েছে। মৌখিক ভাবে আর সরকারি ভাবে বলার মধ্যে কিন্তু অনেক পার্থক্য।’’
আরও পড়ুন: কল্যাণীতে মাঠে এল না ইস্টবেঙ্গল, লিগ চ্যাম্পিয়ন পিয়ারলেস
২৯ সেপ্টেম্বর একসঙ্গে তিনটি ম্যাচ রাখা হয়েছিল লিগের সূচিতে। বারাসতে পিয়ারলেস-জর্জ টেলিগ্রাফ ম্যাচ হলেও ইস্টবেঙ্গল-কাস্টমস ম্যাচ ভেস্তে যায়। পিয়ারলেস ২-০ গোলে জর্জ টেলিগ্রাফকে হারানোর ফলে কাস্টমসের বিরুদ্ধে সাত গোলের ব্যবধানে জিততে হত ইস্টবেঙ্গলকে। লাল-হলুদ-এর তরফে আইএফএ-র কাছে অনুরোধ করা হয় ম্যাচটা যেন ২১ অক্টোবর বা তার পরে দেওয়া হয়। কিন্তু আইএফএ নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। কিছুতেই ম্যাচের দিনক্ষণ পরিবর্তন করতে চায়নি তারা। সঞ্জিৎ সেন বলছিলেন, ‘‘আইএফএ-সঙ্গে কমিউনিকেশন হয় ক্লাবের। আমাদের সঙ্গে কিন্তু আইএফএ-র সরাসরি কোনও কমিউনিকেশন হয় না। ক্লাবের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি। ম্যাচটা যে ৩ তারিখ দেওয়া হচ্ছে, তা কিন্তু আইএফএ আমাদের জানায়নি। আর খেলতেই যখন নামবো, তখন যত কঠিনই সমীকরণ হোক আমরা জেতার জন্যই খেলবো। ম্যাচটা রি সিডিউলই যখন করা হল, তখন ২১ অক্টোবর খেলাটা দিলে কি ক্ষতি হত? কাস্টমসও পুরো দল নিয়ে খেলতে পারত। ওদের প্লেয়ারদের সঙ্গে তো এক বছরের চুক্তি রয়েছে বলেই শুনেছি। আমরাও জেতার মরিয়া চেষ্টা করতাম।’’