অনায়াসে হতে পারতেন সফল ইঞ্জিনিয়ার অথবা কর্পোরেট চাকুরে। কিন্তু মেধাবী হর্ষ সাড়া দিয়েছিলেন তাঁর প্যাশন ক্রিকেটের ডাকেই। বিতর্কের কালো দাগ সত্ত্বেও তাঁর কৃতিত্ব ম্লান হয়নি।
অধ্যাপক দম্পতির ছেলে হর্ষের জন্ম ১৯৬১ সালের ১৯ জুলাই, হায়দরাবাদে। তাঁর বাবা ছিলেন ফরাসি ভাষার অধ্যাপক। মায়ের বিষয় ছিল মনস্তত্ব। ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব টেকনোলজি থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন মেধাবী হর্ষ। তাঁর পরবর্তী গন্তব্য ছিল আমদাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট।
আইআইএম থেকে ম্যানেজমেন্টে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করেন হর্ষ। তাঁর প্রথম চাকরি ছিল বিজ্ঞাপন সংস্থায়। পরে দু’বছর কাজ করেন স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট সংস্থাতেও।
পড়াশোনা র পাশাপাশি হর্ষর জীবন জুড়ে ছিল ক্রিকেটও। হায়দরাবাদে তিনি এ ডিভিশন স্তর অবধি ক্রিকেট খেলেছেন। ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বিভিন্ন টুর্নামেন্টে।
মাঠে বাইশ গজে খেলার সঙ্গে হর্ষ উপভোগ করতেন ধারাভাষ্য দেওয়া। মাত্র ১৯ বছর থেকে তিনি ধারাবিবরণী দিতেন অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে। ১৯৯২ ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় তাঁকে ধারাভাষ্য দিতে আমন্ত্রণ জানায় অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন। প্রথম ভারতীয় ধারাভাষ্যকার হিসেবে হর্ষ এই সম্মান লাভ করেন।
১৯৯২ ক্রিকেট বিশ্বকাপে হর্ষর ধারাবিবরণী তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল। ‘সেক্সিয়েস্ট ভয়েস’-এর তকমা পেয়েছিলেন তিনি। এর পর তিনি কাজ করেছেন এবিসি রেডিয়ো গ্র্যান্ডস্ট্যান্ড-এর হয়ে। ১৯৯৬ ও ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সময় হর্ষ ভোগলে ছিলেন বিবিসি-র ধারাভাষ্যকার।
এর পর ক্রমে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হর্ষ হয়ে ওঠেন বেসরকারি স্পোর্টস চ্যানেলের ক্রিকেট ধারাবিবরণীর অন্যতম মুখ। অস্ট্রেলিয়ার ধারাভাষ্যকার রিচি বেনোর সঙ্গে তুলনা করা হয় তাঁর কণ্ঠের। ক্রিকেট বোধ, সেন্স অব হিউমার এবং বাচনভঙ্গি তাঁর সাফল্যের ইউএসপি।
২০০৮ আইপিএল-এ হর্ষ ভোগলে ছিলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের উপদেষ্টা। তার পরের মরসুমে তাঁকে আইপিএল দর্শক পেয়েছে ধারাভাষ্যকার হিসেবে।
তাঁর সঞ্চালনায় জনপ্রিয় হয়েছে বিভিন্ন টেলিভিশন শো। ক্রিকেট সংক্রান্ত লেখাতেও হর্ষ ভোগলে জনপ্রিয় নাম। ক্রিকেট নিয়ে লিখেছেন বই-ও। মহম্মদ আজহারউদ্দিনের জীবনী লিখেছেন তিনি।
আমদাবাদ আইআইএম-এর সহপাঠিনী অনিতাকে বিয়ে করেছেন হর্ষ। স্বামী স্ত্রী মিলে একটা কনসালটেন্সি চালান। একসঙ্গে লিখেছেন বই-ও। হায়দরাবাদ ছেড়েছেন বহু দিন। স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে হর্ষ এখন মুম্বইবাসী।
কাজে সুখ্যাতির পাশাপাশি এসেছে বিতর্কও। বিসিসিআই তাঁকে ধারাভাষ্যকার হিসেবে খারিজ করে। হর্ষর দাবি, কী কারণে তাঁকে বরখাস্ত করা হল, কোনওদিন স্পষ্ট করে জানায়নি বিসিসিআই।
তবে ক্রিকেটের অন্দরমহলে কান পাতলে শোনা যায়, হর্ষর ধারাভাষ্যে তাঁদের সমালোচনায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। তাঁদের রোষের শিকার হয়েছিলেন তিনি। ফলে তাঁর উপর নেমে এসেছিল বোর্ডের খাঁড়ার ঘা।
এক সময় সোশ্যাল মিডিয়াতেও তিনি যথেষ্ট ট্রোলড হয়েছিলেন। নাম না করে তাঁর দিকে আঙুল তুলেছিলেন অমিতাভ বচ্চনও। সবমিলিয়ে মাঝে মাঝেই ভাটা পড়েছে তাঁর জনপ্রিয়তার জোয়ারে।
সঞ্জয় মঞ্জরেকরের সঙ্গে অন এয়ার বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছিলেন হর্ষ ভোগলে। ২০১৯-এ ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচে গোলাপি বলের জন্য বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের অসুবিধে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছিলেন ভোগলে।
উত্তরে মঞ্জরেকর বলেছিলেন, ভোগলে কোনওদিন টেস্ট খেলেননি বলে এই ধারণা হচ্ছে তাঁর। প্রকাশ্যে দু’জনের এ রকম তিক্ততায় বিস্মিত হয়েছিলেন দর্শক-শ্রোতারা।
ক্রিকেট ধারাভাষ্যে হর্ষ ভোগলের হাত ধরে আধুনিকতার হাওয়া এসেছে। এমন মত অনেকেরই। খেলার পাশাপাশি ক্রিকেট যে বিনোদনেরও অন্যতম উপকরণ দেখিয়েছেন, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্টের এই কৃতী ছাত্র।