ইস্টবেঙ্গলের নতুন দশ নম্বরের মালিক। মঙ্গলবার লাল হলুদ ড্রেসিংরুমে ওয়েডসন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে প্রথম বার যখন পা দিলেন তখনও মধ্যাহ্নভোজ সারার সময় পাননি। ক্লাবের ক্যাফেটেরিয়ায় কোনও ক্রমে নাকেমুখে গুঁজে সাংবাদিক সম্মেলনে ছুটলেন লাল-হলুদের নবাগত বিদেশি ফরোয়ার্ড, হাইতির ওয়েডসন আনসলেম। তার পর ড্রেসিংরুমে ফিরে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার-কে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে তিন বছর খেললেও আপনি নাকি কখনও ইলিশ মাছ খেয়ে দেখেননি! জানেন কি, ইস্টবেঙ্গল মানেই ইলিশ?
ওয়েডসন: হা হা হা! আমি মাছ খাই না। আর শুনেছি ইলিশে খুব কাঁটা। তবে আই লিগ জিতলে এক বার চেখে দেখব, এখনই কথা দিচ্ছি।
প্র: আই লিগে ইস্টবেঙ্গলের দশ নম্বর জার্সিটা এ বার আপনার। গত আই লিগে আপনার নতুন ক্লাবের এই নম্বরের জার্সির মালিককে চেনেন?
ওয়েডসন: ভীষণ ভাল করে চিনি। র্যান্টি মার্টিন্স তো? গত বার বাংলাদেশে বসে টিভিতে ইস্টবেঙ্গলের সব ম্যাচ দেখেছি। গোলের পর গোল করত র্যান্টি।
প্র: তা-ও আই লিগ ইস্টবেঙ্গল জেতেনি। লাল-হলুদে তেরো বছরের খরা র্যান্টিও কাটাতে পারেননি। আপনি পারবেন?
ওয়েডসন: আমি ফুটবলার। জ্যোতিষী নই। কী ভাবে ভবিষ্যৎ বলি বলুন তো?
প্র: ডিপ্লোম্যাটিক উত্তর হয়ে গেল না?
ওয়েডসন: ডিপ্লোম্যাটিক? (হো হো হাসি) ঠিক আছে, বলুন।
প্র: বলছেন গত বছর ইস্টবেঙ্গলের র্যান্টিদের সব ম্যাচ দেখেছেন। তা হলে আপনার বর্তমান ক্লাবে গত বার আই লিগ না আসার কারণ কী বলুন।
ওয়েডসন: বেশি কিছু বলব না। একটা কথাই বলছি— ইস্টবেঙ্গলের গত বার আই লিগ না পাওয়ার পিছনে কোথাও বোধহয় মনঃসংযোগের অভাব ঘটেছিল।
প্র: এ বারও তা হবে না গ্যারান্টি কী?
ওয়েডসন: হ্যাঁ, হতেই পারে। ইস্টবেঙ্গলের মতো ক্লাবে তেরো বছর আই লিগ ঢোকে না, এটা মোটেও ভাল ব্যাপার নয়। কর্তারা ট্রফিটা চান বলেই আমার এখানে আসা। কোচ ট্রেভর এবং টিমমেটদের সঙ্গে এখনও আমার কথা হয়নি। কোচের সঙ্গে কথা হলে প্রথমেই বলব, আমাদের ফোকাস নড়ে গেলেই আপনি ওয়েক আপ কল দেবেন, তা সেটা যত কড়াই হোক না কেন। আর সতীর্থদের বলব, আমরা যদি চাই এই ট্রফিটা এ বার ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে ঢুকবে, তা হলে কেউ সেটা আটকাতে পারবে না। এই বিশ্বাসটা মরসুমের শেষ দিন পর্যন্ত আমাদের থাকতে হবে।
প্র: আপনার সঙ্গে শেখ জামাল ধানমন্ডির চুক্তি শেষ?
ওয়েডসন: গতকালই শেষ হয়েছে।
প্র: শোনা যাচ্ছিল মোহনবাগানও আপনাকে অফার দিয়েছিল?
ওয়েডসন: গত জুন থেকে ইস্টবেঙ্গলের অরুণাভ (ভট্টাচার্য) আমার পিছনে পড়েছিল। ইস্টবেঙ্গল প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিল, তাই এই ক্লাব ছাড়া অন্য কোনও টিমের কথা ভাবিনি। তা ছাড়া বাংলাদেশে আমার দেওয়ার বা পাওয়ার আর কিছু ছিল না।
প্র: কেন?
ওয়েডসন: চলতি বছরটা আমার ফুটবলার জীবনের অন্যতম খারাপ বছর। যদিও ধানমন্ডির হয়ে লিগে নয় ম্যাচে নয় গোল, ফেড কাপে পাঁচ ম্যাচে পাঁচ গোল, এএফসি কাপে ছয় ম্যাচে চার গোল এ বার করেছি। কিন্তু এর বাইরে পরিবার বলে তো একটা ব্যাপার আছে। ভাবতে পারেন হাইতির বাড়িতে আমার স্ত্রী বার্থা আর ছেলে ওয়েডবারসনের সঙ্গে গোটা বছরে মোটে তিন দিন দেখা হয়েছে! মনের দিক থেকে দুঃখী হয়ে পড়ছিলাম। তাই ইস্টবেঙ্গলের প্রস্তাব আসতে আর ভাবিনি। এখানে সেই সমস্যা হবে না। ক্লাবই বলেছে।
প্র: কলকাতা ডার্বি সম্পর্কে আপনার কতটুকু ধারণা আছে?
ওয়েডসন: এই ম্যাচটার কথা আইএফএ শিল্ড খেলতে এসেই জেনে গিয়েছিলাম। গত কয়েক বছর টিভিতে এই ম্যাচটা নিয়ম করে দেখি। আমার বন্ধু সনি নর্ডির থেকেও নানা গল্প শুনেছি। এও জানি এ বার কলকাতা লিগে এই ম্যাচটা হয়নি। তাই মরসুমের প্রথম ডার্বিটা আই লিগে খেলতে পারব ভেবে এখন থেকেই ভেতরে ভেতরে উত্তেজিত হচ্ছি। তবে অতীতে ব্রাজিলের আলডেয়ার, অ্যান্ডারসনদের বিরুদ্ধে অনেক বড় বড় ম্যাচ খেলেছি। এ বার এখানে উল্টো দিকে বন্ধু সনি। ম্যাচটা জমে যাবে।
প্র: ইস্টবেঙ্গলে মঙ্গলবার সই করার আগে সনির সঙ্গে কথা হল?
ওয়েডসন: সনি সব জানে। ও আমাকে ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে সব বলেছে। কিন্তু কোন ক্লাবে খেলব তা নিয়ে একবিন্দু হস্তক্ষেপ করেনি। দু’তিন দিন আগে ফোনে ওকে খবরটা দিলাম। সনি বলল, বেস্ট অব লাক।