—নিজস্ব চিত্র
গয়না বন্ধক দিয়ে ঋণ নিয়ে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্কুল স্পোর্টসের আসরে মেয়েকে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন মা-বাবা। গত ২৫ এপ্রিল আনন্দবাজার অনলাইনে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর শুক্রবার জিমন্যাস্ট জয়িতা মালিকের সব দায়িত্ব নিল একটি সংস্থা। জীবন বীমা নিগমের (এলআইসি) কয়েক জন কর্মী গড়ে তুলেছেন এই সংস্থাটি। জয়িতাদের মত আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়ায় তারা।
জয়িতার হাতে তিন লক্ষ টাকার একটি চেক তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁর যাতায়াতে খরচ হবে আড়াই লক্ষ টাকা। বাকি যে ৫০ হাজার টাকা থাকবে তা জয়িতার থাকা এবং খাওয়ার জন্য খরচ করতে বলে ওই সংস্থা। জয়িতার ট্রেনারের সঙ্গেও কথা বলেছে ওই সংস্থা। জয়িতার আর যা কিছু প্রয়োজন তার সব ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছে তারা।
হুগলি গার্লস স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী জয়িতা। ফ্রান্সে ১৪ থেকে ২২ মে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিশ্ব স্কুল স্পোর্টস। সেখানে আর্টিস্টিক জিমনাস্টিকসে সুযোগ পেয়েছে জয়িতা। নিজের গয়না বন্ধক দিয়ে, ঋণ নিয়ে, পরিচিত কয়েক জনের থেকে ধার করে মেয়েকে ফ্রান্সে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন জয়িতার বাবা জয়ন্ত এবং মা সুমিতা মালিক। জয়ন্ত মেলায় খেলনা বিক্রি করেন। সুমিতা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সহায়িকার কাজ করেন। অভাবের সংসারে মেয়ের জন্য আড়াই লক্ষ টাকা জোগাড় করা কঠিন ছিল। জয়িতা ফ্রান্সে গিয়ে ভাল ফল করবে বলে আশা করেন মা-বাবা।
ভোর চারটেয় উঠে বাঁশবেড়িয়াতে মেয়েকে অনুশীলনে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সব সময় মেয়েকে উৎসাহ দেন জয়ন্ত। ১৩ মে ফ্রান্সে যাবেন জয়িতা। তাঁর ভিসা হয়ে গিয়েছে। ফ্রান্সে যাওয়ার আগে কঠোর অনুশীলন চললেও মায়ের গয়না আর বাবার ঋণের চিন্তায় ঘুম আসছিল না জয়িতার। আজকের পর সে অনেকটাই নিশ্চিন্ত। এবার অনেক বেশি ফোকাস করতে পারবে তার জিমনাস্টিকসে। নিশ্চিন্ত হলেন তাঁর বাবা-মাও।
শুক্রবার কল্পনা মণ্ডলের হাত দিয়ে সেই সংস্থা তিন লক্ষ টাকার চেক তুলে দেয় জয়িতার মা সুমিতা মালিকের হাতে। কল্পনা কলকাতায় বাস চালান। তাঁর বাস চালক বাবার মৃত্যুর পর সংসার চালাতে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত ছিল কল্পনার। বাসের প্রায় সারে চার লাখ টাকা ঋণ ছিল। সেই খবর সামনে আসতেই কল্পনার পাশেও দাঁড়িয়েছিল এই সংস্থা। বাসের ঋণ শোধ করে কল্পনা এখন সেই বাসের মালিক।