কলকাতা আজ থেকে বিশ্বযুদ্ধের মঞ্চ

ঐতিহাসিক যুদ্ধে দুই পড়শিকে ঘাসের পিচ উপহার ইডেনের

ইডেনে আসন্ন মহাযুদ্ধের বাইশ গজ কী রকম হবে? ভারত বনাম পাকিস্তান মহাম্যাচের রিহার্সাল কি হয়ে যাবে আজই? আজ, বুধবার পাকিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচে? নাগপুরের মতো স্পিনিং ট্র্যাক কি ইডেনেও পাবেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনরা? না কি শনিবারের কলকাতা দেখবে মহম্মদ আমের-ওয়াহাব রিয়াজদের ভেলকি? গত সোমবার পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ওয়ার্ম আপ ম্যাচ যে উইকেটে হল, যেখানে বাঁ-হাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম চারটে উইকেট তুলে নিলেন, বুধবার সেই পিচ পাচ্ছেন না শাহিদ আফ্রিদিরা।

Advertisement

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৩
Share:

ব্যাট নিয়ে গবেষণা। ইডেনে মাশরাফি-সাকিব। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

ইডেনে আসন্ন মহাযুদ্ধের বাইশ গজ কী রকম হবে? ভারত বনাম পাকিস্তান মহাম্যাচের রিহার্সাল কি হয়ে যাবে আজই? আজ, বুধবার পাকিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচে?

Advertisement

নাগপুরের মতো স্পিনিং ট্র্যাক কি ইডেনেও পাবেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনরা? না কি শনিবারের কলকাতা দেখবে মহম্মদ আমের-ওয়াহাব রিয়াজদের ভেলকি?

গত সোমবার পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ওয়ার্ম আপ ম্যাচ যে উইকেটে হল, যেখানে বাঁ-হাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিম চারটে উইকেট তুলে নিলেন, বুধবার সেই পিচ পাচ্ছেন না শাহিদ আফ্রিদিরা। একদম বাঁ দিকের পিচটা বুধবারের ম্যাচের জন্য তৈরি করা হয়েছে। যাতে অল্প ঘাস আছে। এবং যে উইকেট দেখে খুশি পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ দু’দলই। রাতে ইডেনের পিচ প্রস্তুতকারক সুজন মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘দুটো টিমই উইকেটে ঘাস চাইছে। আর পিচ দেখে ওয়াকার ইউনিস এবং বাংলাদেশ কোচ দু’জনই খুব খুশি।’’

Advertisement

স্পিনিং ট্র্যাকে প্রথম ম্যাচে বিধ্বস্ত মহেন্দ্র সিংহ ধোনিরা বুধবার সন্ধেয় নাগপুর থেকে কলকাতা পৌঁছবেন। বৃহস্পতিবার পিচ দেখে টিম ইন্ডিয়া কী বলে, তার উপর অবশ্যই অনেকটা নির্ভর করবে শনিবারের চূড়ান্ত বাইশ গজ। আপাতত সুজনের দাবি, বিশ্বকাপের ইডেন পিচকে চিরাচরিত স্লো ট্র্যাক বলা যাবে না। এখানে প্রায় সব প্রস্তুতি ম্যাচেই ভাল রান উঠেছে।

আজ শহরে যে প্রায় হাজার দশেক অতিথি সমাগম হতে চলেছে, তাঁদের অবশ্য এ সব নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। পাকিস্তান বনাম বাংলাদেশ ম্যাচটা ভারত সমর্থকদের কাছে উনিশে মার্চের ড্রেস রিহার্সাল হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীরা তো তাকে একেবারে অন্য চোখে দেখছেন। আর দু’দেশের ইতিহাসের প্রেক্ষিতে এই উপলক্ষকে নিছক একটা ক্রিকেট ম্যাচ বললে বোধহয় ঠিক হবে না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ম্যাচ? সেটাও মঞ্চ হিসেবে ছোট পড়ে যাবে। অংশগ্রহণকারী দুই দেশের সঙ্গে যোগ করুন বুধ-মহাযুদ্ধের পটভূমি— কী বলা যেতে পারে এই ঘটনাকে?

ইডেনে এই প্রথম পাকিস্তান বনাম বাংলাদেশ। যে কোনও বাংলা-পাক ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে এই প্রথম দুটো দেশের অবস্থান অসম নয়। এই প্রথম দু’দেশ ধার ও ভারের এক সমতলে।

মঙ্গলবারের ইডেনে বসে মাশরাফি মর্তুজার দেশের এক সাংবাদিক বলে যাচ্ছিলেন, ‘‘দশ বছর পরে তো মানুষ ক্রিকেট-প্রতিদ্বন্দ্বিতা বলতে বুঝবে ভারত বনাম বাংলাদেশ। ভারত-পাক যুদ্ধে আর সেই বারুদ কোথায়?’’ এই মত যে শুধু তাঁর একার নয়, ও পার বাংলার সিংহ ভাগের, সযত্নে বুঝিয়ে দেন তিনি। অন্তর্নিহিত অর্থটা সহজবোধ্য— প্রতিপক্ষ হিসেবে এই পাকিস্তান আলুনি। সমানে সমানে টক্কর চাইলে অন্য টিম আনো!

এই প্রথম পাকিস্তান-বাংলাদেশ ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে দু’দেশের সম্ভাবনা ৫০-৫০ দেখাচ্ছে— প্রশ্নটা শুনে যেন ব্যাকফুটে চলে যান পাক কোচ ওয়াকার ইউনিস। শুকনো মুখে বলেন, ‘‘হ্যাঁ, বছরদেড়েক ওরা ভাল ক্রিকেট খেলছে।’’ ওয়াকারের টিমের বর্তমান অবস্থা মাথায় রেখে মাশরাফি মর্তুজাদের দেখে নিন। বিতর্ক-বিধ্বস্ত একটা টিমের অধিনায়ক, যিনি ব্যাটে-বলে বর্তমানে জঘন্যতম ফর্মে, তিনি ভারতে পা দিতে না দিতেই টাটকা বিতর্কে। টিমের অন্যতম পেস অস্ত্রের প্রথম প্র্যাকটিসে চোট। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেননি, বুধবারও সম্ভবত বিশ্রাম দেওয়া হবে মহম্মদ সামিকে। এখানেই শেষ নয়। জ্বর থাকায় এ দিন মাঠেই এলেন না আফ্রিদি। শোনা গেল, সকালে ইডেনে আসার জন্য টিম বাসে উঠেও আবার নেমে যান।

সব মিলিয়ে প্রাক্ বিশ্বকাপ পর্ব যে পরিবেশে কাটছে আফ্রিদিদের, তাতে ক্রিকেট আপাতত ফুটনোট। আর এই টিমটার বিপরীত মেরু ছকতে বসলে সেই জায়গার দাবিদার কে হতে পারে? কে আবার, মাশরাফি মর্তুজার টিম বাংলাদেশ।

ওপার বাংলার সবুজ-মেরুন জার্সি যে ছন্দে রয়েছে, যে ক্ষিপ্রতায় নিত্য নতুন শিখর জয়ের লক্ষ্যে এগোচ্ছে, তার ব্যাখ্যা শুধু ক্রিকেট দিয়ে হয় না। তার প্রভাবও ক্রিকেটে সীমাবদ্ধ নয়। আর আশ্চর্যের ব্যাপার, স্বপ্নের মেঘে ভাসতে ভাসতেও মাশরাফির পা দৃঢ় বাস্তবের মাটিতে। ‘মিস্টার বাংলাদেশ ক্রিকেট’ খুব ভাল ভাবেই জানেন যে, আবেগ-দাবি-প্রত্যাশার কোন গন্ধমাদন ঘাড়ে বিশ্বকাপে নামছেন তাঁরা। তাই হয়তো বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কুড়ি ওভারের অনির্দেশ্য পৃথিবীতে আগে থেকে কিছু ধরে বসা অর্থহীন। মনে করিয়ে দিচ্ছেন, নব্বই সালের পর এই প্রথম ইডেনে নামছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান বা তিনি বাদে টিমের সবার এই মাঠটা শুধু টিভিতে দেখা।

ঠিক। পাশাপাশি এটাও ঠিক যে, ব্যাটিংয়ে তামিম ইকবাল দুরন্ত ছন্দে। এ বছর এক ডজন টি-টোয়েন্টিতে ৩৮৮ রান করে ফেলেছেন সাব্বির রেহমান। টাইমিং ফিরে পাওয়ার পথে সাকিব। আর বোলিং? প্রত্যাবর্তনের দোরগোড়ায় মুস্তাফিজুর রহমান। এ দিন তাঁকে যে ভাবে নাগাড়ে নেটে বল করানো হল, তাতে বুধবার খেলানো হতে পারে। তাসকিন আহমেদ সন্ধেয় শহরে ঢুকে পড়লেন। বোলিং টেস্টের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তাঁর বল করায় আপত্তি নেই আইসিসির, সুতরাং প্রথম এগারোয় তাসকিনও প্রায় নিশ্চিত। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ শিবির যে বেশ ফুরফুরে, বোঝা গেল যখন মাশরাফিরা হালকা প্র্যাকটিস করে এ দিনের ট্রেনিং সেশনে ইতি টানলেন। টিম নাকি বলেছে, কোয়ালিফাইং রাউন্ডের ম্যাচে যথেষ্ট প্র্যাকটিস হয়েছে। ও সব আর লাগবে না।

টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞরা এর পরও দুই পড়শির সাক্ষাৎ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে বসবেন না। কুড়ি ওভারের এই গ্রহে তো সব সম্ভব। তবে পরিণতি যা-ই হোক না কেন, বুধ-যুদ্ধের তাৎপর্য তার অংশ-সমষ্টির চেয়ে বহু গুণ বেশি। দিনের শেষে উপলক্ষটা তো শুধু একটা ক্রিকেট ম্যাচ নয়। তা হলে কী বলা যেতে পারে তাকে?

অভূতপূর্ব। অসীম। ঐতিহাসিক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement