উত্থান: বিমানবন্দরে বাবা-মার সঙ্গে মিত্রাভ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
চার বছর বয়স থেকেই বাবার প্রেরণায় দাবা খেলতে শুরু করেছিলেন। সেটা ছিল ২০০৫ সাল। ছেলের দাবার প্রতি উৎসাহ দেখে সেই মিত্রাভ গুহকে বাংলার প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যেন্দু বড়ুয়ার অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে দিয়েছিলেন বাবা রাজ গুহ। সে দিনের ছোট্ট প্রতিভাই দীর্ঘ ১৬ বছরের নিরন্তর প্রচেষ্টায় সার্বিয়া থেকে গ্র্যান্ডমাস্টার হয়ে টালিগঞ্জের কুঁদঘাটের বাড়িতে ফিরলেন বৃহস্পতিবার। ভারতের ৭২তম ও বাংলার নবম গ্র্যান্ডমাস্টার এখন মিত্রাভ।
রাতে যখন কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হল তখন সাউথ পয়েন্ট স্কুলের প্রাক্তন ও মৌলানা আজ়াদ কলেজের বিবিএ-র ছাত্র পাড়ার মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলছিলেন। খেলা ছেড়ে উঠে এসে বললেন, ‘‘জীবনের একটা মাইল ফলক পেরোলাম সবে। আমাকে আরও এগোতে হবে সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার লক্ষ্যে। এখন আমার এলো রেটিং ২৫০৯। সেটাকে ২৬০০ করতে হবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলে। তার জন্য একজন বিদেশি কোচ আর স্পনসরের আজ থেকেই খুঁজতে শুরু করে দিয়েছি।’’ছেলে যখন এ কথা বলছেন, তখন পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন বাবা রাজ গুহ। তাঁর চোখে তখন আনন্দাশ্রু। বলছিলেন, ‘‘একটা স্বপ্ন বাস্তবায়িত হল। দাবা খেলোয়াড়দের সবার লক্ষ্য থাকে গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়া। সেটা ছেলে করতে পেরেছে অবশেষে। দারুণ খুশির দিন।’’
আর যাঁর কাছে মিত্রাভের দাবায় হাতেখড়ি, সেই দিব্যেন্দু বড়ুয়া বললেন, ‘‘সাড়ে চার বছর বয়সে আমার অ্যাকাডেমিতে দাবা খেলতে এসেছিল। ২০১৪ সাল পর্যন্ত আমার অ্যাকডেমিতেই ছিল। ওর বড় গুণ হল, বরফের মতো শান্ত মাথা। অযথা আবেগে ভাসে না। সে কারণেই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দাবার বোর্ডে দুরন্ত চাল দিয়ে ম্যাচ বের করে আনতে পারে। সুপার গ্র্যান্ড মাস্টার হতে গেলে ওকে আরও বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। সেটা ও পারবে বলেই আমার আস্থা রয়েছে।’’
১৯ বছরের মিত্রাভ দাবাড়ু ম্যাগনাস কার্লসেনের ভক্ত। দাবা নিয়েই বাড়িতে ডুবে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ে কোনও বিশেষ কোচও ছিল না মিত্রাভের কাছে। গত দু’বছর ধরে করোনা সংক্রমণের জন্য ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বা বিদেশে খেলতে যেতে পারেননি। যে সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘‘২০২০ সালের শুরুতে বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী করণীয়। তবে দাবার অনলাইন প্রতিযোগিতাগুলোও চালু ছিল। সেখানে খেলতে খেলতেই অবসাদ কেটে গিয়েছিল।’’আর গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার কাহিনি? মিত্রাভ বলে চলেন, ‘‘সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে প্রতিযোগিতায় খেলতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরেই চলে গিয়েছিলাম আর্মেনিয়ায়। ২-১৪ অক্টোবর সেখানে প্রতিযোগিতা ছিল। তার পরে ১৮-২৮ অক্টোবর ফের ঢাকায় যাই শেখ রাসেল দাবা প্রতিযোগিতায় খেলতে। সেখানে গিয়েই দ্বিতীয় জিএম নর্ম পাই। এলো রেটিং হয়েছিল ২৪৯৮। তৃতীয় জিএম খেতাব ও গ্র্যান্ডমাস্টার হতে দরকার ছিল ২ পয়েন্টের।’’ যোগ করেছেন, ‘‘এর পরে চলে গিয়েছিলাম সার্বিয়ায়। সেখানে নবম রাউন্ডে সার্বিয়ার নিকোলা সেদাককে হারিয়ে স্বপ্নের সেই তৃতীয় জিএম নর্ম ও গ্র্যান্ডমাস্টার সম্মান অর্জন করেছি।’’