নায়ক: প্রয়াত দাদুর স্বপ্ন সফল করলেন ডমিনিক সিবলি। ফাইল চিত্র
ইংল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেট দলে গত নভেম্বরেই অভিষেক হয়েছে তাঁর। আর কেপ টাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সোমবার টেস্ট জীবনের প্রথম শতরানটি করেছেন ডান হাতি ব্যাটসম্যান ডমিনিক পিটার ওরফে ডম সিবলি। যে শতরানের পরে তাঁকে নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম।
তবে জীবনের প্রথম শতরানের চেয়েও অন্য কারণে এই মুহূর্তে সংবাদের শিরোনামে ডম ও তাঁর পরিবার। শতরানের পরেই ডমের পরিবারের আর্থিক প্রাপ্তি হয় ২১,৬০০ পাউন্ড বা ২৮,৫০০ মার্কিন ডলার! ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২০ লক্ষ টাকারও বেশি। তবে ক্রিকেট খেলে এই অর্থপ্রাপ্তি হয়নি ডমের পরিবারে। ইংল্যান্ড ক্রিকেটারের পরিবারে অর্থলাভ হয়েছে ‘বেটিং’ থেকে। তবে এই ‘বেটিং’-এর সঙ্গে ক্রিকেট ম্যাচ গড়াপেটার কোনও সম্পর্ক নেই। এই ‘বেটিং’ বা বাজি রাখা ইংল্যান্ডে আইনসিদ্ধ বিষয়।
গোটা ঘটনার নেপথ্যে রয়েছেন ডমের মাতামহ কেনেথ ম্যাকেঞ্জি। যিনি প্রয়াত হয়েছে আজ থেকে নয় বছর আগে। ২০১১ সালে। ডমের ছোটবেলা থেকেই নাতির ক্রিকেট-প্রতিভা নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন দাদু কেনেথ। নাতিকে নিয়ে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, একদিন ইংল্যান্ডের হয়ে খেলবে ডম। মৃত্যুর চার মাস আগে বেটিং সিন্ডিকেটে গিয়ে দু’টি বাজি ধরে বসেন তিনি। বাজি রাখার বিষয়টিও আরও চমকপ্রদ। তা হল, একদিন ডম ইংল্যান্ডের হয়ে ক্রিকেট খেলবে। প্রথম বাজির দর ছিল ১৫০-১। দ্বিতীয় বাজির দর ছিল ৬৬-১। তখন কেউ এই বাজিকে গুরুত্ব দেননি। কিন্তু দু’মাস আগে নভেম্বরে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ডমের টেস্ট ক্রিকেটের অভিষেকের পরে নয় বছর আগে রাখা দাদুর সেই বাজিই অর্থলাভের রাস্তা তৈরি করে ডমের পরিবারে।
দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের সারে কাউন্টির বাসিন্দা ডমের পরিবার অবশ্য নাতিকে নিয়ে কেনেথের এই জোড়া বাজি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। কবরে শুয়ে থাকা কেনেথের বাজির দৌলতে যে পরিবারে অর্থযোগ তৈরি হতে চলেছে, তা ডমের মা ক্রিস্টিন সিবলি জানতে পারেন সম্প্রতি। সারের উইলিয়াম হিল বেটিং সিন্ডিকেটের একটি কেন্দ্রে গিয়ে তিনি বিস্তারিত বিষয়টি জানতে পারেন ।
এ প্রসঙ্গে ক্রিস্টিন বলছেন, ‘‘ডমের এই শতরান করার মুহূর্ত দেখতে পেলে খুশিই হতেন বাবা। তাই বেটিং কেন্দ্রে গিয়ে বাবার বাজি রাখার সেই ঘটনা শুনে চোখে জল এসে গিয়েছিল। ডমকে ভাল খেলতে দেখেও ওঁর কথা ভেবে কান্না আসে। তিনি এমন একটা বিষয় নিয়ে বাজি রেখেছিলেন ১১ বছর আগে, যা আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না তা নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা ছিল না।’’
ডমের ক্রিকেট প্রতিভা নিয়ে ছোটবেলা থেকেই তাঁর দাদুর প্রত্যাশা ছিল আকাশ ছোঁয়া। ডমের বয়স ১৬ হওয়ার পরে প্রথম বাজি কার্যকর হতে শুরু করে। ক্রিস্টিন বলছেন, ‘‘ভাবতেই পারি না, নাতির প্রতিভার প্রতি আস্থা রেখে ডমের দাদু অদ্ভুত একটা বাজি ধরেছিলেন। ক্রিকেটের প্রতি একটা আলাদা অনুরাগ ছিল বাবার।’’ যোগ করেন, ‘‘ছেলের যখন পাঁচ বছর বয়স, তখনই বাবা বলেছিলেন, ডম একদিন ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলবে। সাত-আট বছর বয়সে যখন অনূর্ধ্ব-৯ ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় খেলতে শুরু করে।’’