সিন্ধুর ফাইনাল বিপর্যয় দেখে চিন্তিত নন গোপী

ক্রিকেটে ‘নার্ভাস নাইন্টি’ বলে একটা কথা আছে। যে রোগে সেঞ্চুরির কাছাকাছি এসে টেনশনে বারবার ব্যাটসম্যানের আউট হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:১৬
Share:

ধরাশায়ী: ফাইনালে পতনই ঘটে চলেছে সিন্ধুর। ফাইল চিত্র

ফের হাতের মুঠোয় এসেও হার। খেতাব পকেটে পুরতে গিয়েও একটা ভুলে মুহূর্তে চ্যাম্পিয়ন থেকে রানার্স হয়ে যাওয়া। গত চারটে ফাইনালে তিন বারই যার শিকার তিনি—পিভি সিন্ধু।

Advertisement

শুরুটা হয়েছিল ২০১৬ অলিম্পিক্সে। রিওর ফাইনালে ক্যারোলিনা মারিনের কাছে হেরেছিলেন সিন্ধু। গত মরসুমে গ্লাসগোয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও নজোমি ওকুহারা এবং বিশ্ব ব্যাডমিন্টন সংস্থার সুপার সিরিজ ফাইনালসে আকানে ইয়ামাগুচির বিরুদ্ধে একই ভাবে হারতে হয় তাঁকে।

স্বাভাবিক ভাবেই তাই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে কেন বারবার ফাইনালে হারছেন সিন্ধু। সমস্যাটা কোথায়? মানসিক না টেকনিক্যাল কোনও ত্রুটিতে বারবার ধাক্কা খাচ্ছে ২২ বছর বয়সি ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের ‘পোস্টার গার্ল’-এর খেতাবী লড়াই?

Advertisement

ক্রিকেটে ‘নার্ভাস নাইন্টি’ বলে একটা কথা আছে। যে রোগে সেঞ্চুরির কাছাকাছি এসে টেনশনে বারবার ব্যাটসম্যানের আউট হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়। প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনার চেতন চৌহানই এর শিকার ছিলেন বলা হয়। বেশ কয়েক বারই নব্বই রানের ঘরে আউট হয়েছেন তিনি। টেস্টে তাঁর সর্বোচ্চ রান ৯৭। সিন্ধুও কি ব্যাডমিন্টনের ‘নার্ভাস নাইন্টির’ শিকার কি না প্রশ্ন উঠতে পারে। বিশেষ করে রবিবারের ইন্ডিয়া ওপেনের ফাইনালে হারের পরে আরও বেশি করে প্রশ্নটা উঠছে।

আরও পড়ুন: টানাটানির সংসারে স্বপ্নপূরণের লড়াই

বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রায় সাত ধাপ পিছনে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বী বেইওয়ান ঝ্যাং-এর বিরুদ্ধে ম্যাচ পয়েন্ট পেয়েও ঘরের মাঠে টানা দ্বিতীয় বার খেতাব ধরে রাখতে পারেননি সিন্ধু। তাও সিন্ধুর পাশে ছিলেন পুল্লেলা গোপীচন্দ। ছাত্রীকে ম্যাচের মধ্যে নানা সময়ে পরামর্শ দিতে দেখা গিয়েছে গোপীচন্দকে। সেখানে বেইওয়ান গোটা টুর্নামেন্টে খেলেছেন কোচ ছাড়াই। কোচ নিয়ে টুর্নামেন্টে আসার আর্থিক সামর্থ্য তাঁর নেই বলে। প্রত্যাশার চাপ কি প্রভাব ফেলেছিল সিন্ধুর খেলায়?

ফাইনালের আগে সিন্ধু বলেছিলেন, ‘‘মেয়েদের ব্যাডমিন্টনে এখন লড়াইটা সমানে সমানে। বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ২০ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য নেই। যে দিন যে ভাল খেলতে পারবে সেই জিতবে।’’

তবে সিন্ধুর রবিবারের ফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু মনে করেন সিন্ধুই চাপে পড়ে গিয়েছিলেন। ফাইনালের পরে ঝ্যাং বলেছেন, ‘‘আমার তো কিছুই হারানোর ছিল না। তাই খোলা মনে খেলেছি। সিন্ধুর উপর বেশ চাপ ছিল। দর্শকরা সিন্ধুকে প্রচণ্ড সমর্থন করছিল। সিন্ধুই চাপটা নিয়ে ফেলেছিল তাই। চাপটা মনে হয় ও সামলাতে পারেনি শেষ পর্যন্ত।’’

সে জন্যই কী রবিবারের হারের পরে এতটা ভেঙে পড়তে দেখা গিয়েছিল সিন্ধুকে। এর আগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ বা সুপার সিরিজ ফাইনালসে যে দৃশ্য নাকি দেখা যায়নি। গোপীচন্দ এবং অন্য ভারতীয় কোচরা সিন্ধুকে সামলান বলেও শোনা যাচ্ছে।

গোপীচন্দ অবশ্য আগেই সিন্ধুর এ ভাবে ফাইনালে বারাবার ব্যর্থ হওয়া নিয়ে আগেই বলেছিলেন, ‘‘সাফল্য পাওয়ার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ শেষ বারের ব্যর্থতা ভুলে গিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। খেলোয়াড়ের মাথায় যেন ঘুরতে না থাকে কেন আমি হেরে যাচ্ছি, কোথায় ভুল হচ্ছে, এই ব্যাপারগুলো। মানসিক ভাবে তরতাজা থাকাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কোচ হিসেবে আমার কাজ একজন খেলোয়াড়কে হার থেকে ঘুরে দাঁড়ায়ে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করা।’’

সোমবার ফোনে জাতীয় ব্যাডমিন্টন কোচ প্রায় একই কথা বললেন আনন্দবাজারকে। তিনি বলেন, ‘‘আমি একেবারেই সিন্ধুর ফাইনালে হার নিয়ে চিন্তিত নই। যে ভাবে ও টুর্নামেন্টে খেলেছে, ফাইনালে উঠেছে তাতে আমি খুশি।’’ সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন, ‘‘নতুন মরসুমের প্র্যাকটিস সেশন শুরু হয়ে গিয়েছে। আমরা যদি পরিকল্পনা মতো এগোতে পারি। এ মরসুমে আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টনে ভারতীয় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়দের সাফল্য পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’’

গুয়াহাটিতে মাস দু’য়েক আগে প্রিমিয়ার ব্যাডমিন্টন লিগে সিন্ধুকে অস্বস্তিকর প্রশ্নটার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। কেন ফাইনালে আপনি বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন? সিন্ধু বলেছিলেন, ‘‘হার নিয়ে বেশি ভাবি না। যে দিনটা যে খেলোয়াড়ের হয় সেই জেতে। ফাইনালেও তাই। আমার কাছে ফাইনালে ওঠাটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।’’ বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, হারের পরেও আত্মবিশ্বাস কোনও ভাবেই হারাতে নারাজ তিনি।

এ বার দেখার সিন্ধুর এই আত্মবিশ্বাস ফাইনাল হার্ডল পেরোতে চলতি মরসুমে কতটা সাহায্য করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement