আক্ষেপ: ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটে আরও প্রতিভা চান অ্যামব্রোজ।
বর্তমান প্রজন্মের ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে দেখে খুব প্রশংসাসূচক মন্তব্য করতে পারছেন না কার্টলে অ্যামব্রোজ। কিংবদন্তি ফাস্ট বোলার বরং বলে দিচ্ছেন, এখনকার ছেলেরা জানেই না ক্যারিবিয়ান জনতার কাছে ক্রিকেটের কী বিশাল অর্থ! একই সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই স্বর্ণযুগের ক্রিকেট গৌরব আর হয়তো কখনওই ফিরে আসবে না!
অ্যামব্রোজের সোজাসাপ্টা মন্তব্য, ‘‘এখন আমরা যে সব তরুণকে দেখছি দেশের হয়ে খেলছে, তারা জানেই না ওয়েস্ট ইন্ডিজের মানুষের কাছে ক্রিকেটের জায়গা কোথায়।’’ নিজেদের দেশে তো বটেই, বিদেশে বসবাসকারী ক্যারিবিয়ানদের কথাও উঠে এসেছে তাঁর বক্তব্যে। বলেছেন, ‘‘দেশে এং বিদেশে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মানুষদের একসূত্রে গেঁথে রাখার মাধ্যম ক্রিকেট। আমি জানি না, বর্তমান প্রজন্ম কতটা সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।’’
ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম দু’টি বিশ্বকাপ জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তিরাশিতে ক্লাইভ লয়েডের বিশ্বত্রাস দলের জয়যাত্রা থামিয়ে দেয় কপিল দেবের ভারত। তার পরেও বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করেছেন ভিভ রিচার্ডস, ডেসমন্ড হেনেস, রিচি রিচার্ডসন, ব্রায়ান লারা এবং তাঁদের বিশ্বত্রাস ফাস্ট বোলারেরা। কিন্তু সেই ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের পরম্পরা এখন আর নেই। সেই ১৯৭৯-তে বিশ্বকাপ জয়ের পরে ২০১২ এবং ২০১৬-তে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল। কিন্তু পঞ্চাশ ওভারের বিশ্বকাপ আর জিততে পারেনি। অ্যামব্রোজ বলছেন, ‘‘আমি বর্তমান প্রজন্মের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখাচ্ছি না। এখনকার দলে দু’তিন জন আছে, যারা সত্যিই দক্ষ। সেরা হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু আমাদের একটা জিনিস বুঝতে হবে। সেই স্বর্ণযুগের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আর আমরা কখনওই হয়তো দেখতে পাব না।’’ ৯৮ টেস্টে ৪০৫ উইকেট নেওয়া প্রাক্তন ফাস্ট বোলার গোপন করছেন না যে, এই মুহূর্তে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ থেকে যথেষ্ট যোগ্য প্রতিভা খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে গিয়েছে। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘আর একটা ভিভ রিচার্ডস, ডেসমন্ড হেনেস, গর্ডন গ্রিনিজ, ব্রায়ান লারা, রিচি রিচার্ডসন পাওয়া যাবে না। অথবা নতুন কোনও ম্যালকম মার্শাল, কার্টলে অ্যামব্রোজ, কোর্টনি ওয়ালশ, মাইকেল হোল্ডিং, অ্যান্ডি রবার্টস পাওয়া কঠিন। অথবা একটা ক্লাইভ লয়েড। না পাওয়ার তালিকা বড় হতেই থাকবে। এ রকম অনন্য প্রতিভাধর ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়া ভীষণ কঠিন।’’
যাঁর নিখুঁত পেস বোলিং ঘুম কেড়ে নিত বিশ্বের সব বড় ব্যাটসম্যানেরও, সেই অ্যামব্রোজ মনে করেন, আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে হয়তো উন্নতি করতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। কিন্তু আশি বা নব্বইয়ের দশকে যে ভাবে বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করত, তা আর পারবে না। কিছুটা যন্ত্রণা নিয়েই বলে ফেলছেন, ‘‘আমরা যখন বিশ্বের সেরা দল ছিলাম, যে কোনও জায়গায় গিয়ে শাসন করে দেখিয়েছি। গর্ব করে বলতে পারতাম সবাই যে, আমরা কত ভাল দল। বিশ্বের সেরা দল। সেই গৌরবের অতীত ফিরিয়ে আনা খুবই কঠিন।’’ যোগ করছেন, ‘‘আমরা র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করতে পারি। অন্যদের সঙ্গে ভাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি। হয়তো সমীহ করার মতো দলও হয়ে উঠতে পারি। কিন্তু অতীতের সেই স্বর্ণযুগ আর কখনও ফেরানো সম্ভব বলে আমার মনে হচ্ছে না।’’